লন্ডন: বিশিষ্ট সাংবাদিক, সাহিত্যিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীকে টাউন হলে ফুলেল শুভেচ্ছা জানালো লন্ডন বারা অব টাওয়ার হ্যামলেটস। বুধবার (১১ মে) স্থানীয় সময় দুপুরে টাউন হলের স্পিকার পার্লারে কিংবদন্তির এই সাংবাদিককে নিয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
কাউন্সিলের বাঙালি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটসের সংস্কৃতি বিষয়ক কেবিনেট মেম্বার কাউন্সিলার আসমা বেগমের সভাপতিত্বে বৈঠকে কাউন্সিলার ছাড়াও কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীকে জানিয়ে স্বাগত আসমা বেগম বলেন, ‘টাউন হলে আপনাকে স্বাগত জানাতে পেরে আমরা সম্মানিত বোধ করছি। আপনার মেধা, অভিজ্ঞতা ও ইতিহাস সৃষ্টিকারী ভূমিকাকে প্রেরণা হিসেবে নিয়ে বারার উন্নয়নে একযোগে কাজ করতে চাই আমরা’।
কিংবদন্তির এই সাংবাদিককে অনুপ্রেরণা হিসেবে নিয়ে বারার বহুজাতিক সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নে একসঙ্গে কাজ করার কথাও বলেন তিনি।
তাকে সম্মানিত করায় কাউন্সিলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী নিজেকে একজন ক্ষুদ্র মানুষ হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, ‘জীবনের অধিকাংশ সময় সাংবাদিকতা ও সাহিত্য চর্চা করে সমাজের কতোটুকু উপকারে লেগেছি, তা আমি জানি না। তবে তৃতীয় বাংলা হিসেবে খ্যাত এই টাওয়ার হ্যামলেটসের সাহিত্য-সংস্কৃতি অঙ্গনের উন্নয়নে আমার যোগ্যতা অনুযায়ী যতোটুকু সম্ভব আমি করে যাবো’।
চরমপন্থাকে আজকের বিশ্বের সবচেয়ে বড় সংকট উল্লেখ করে তিনি বলেন, সমাজের প্রতিটি স্তর থেকে মৌলবাদকে তাড়াতে না পারলে চরমপন্থাকে পরাজিত করা কঠিন।
মৌলবাদের বিরুদ্ধে অব্যাহত লেখনির কারণে বিভিন্ন সময় তিনি মৌলবাদীদের অপপ্রচারের শিকার হয়েছেন অভিযোগ করে গাফ্ফার চৌধুরী বলেন, ‘দীর্ঘ চল্লিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই ব্রিটেনে বাংলাদেশের যে অঞ্চলটির মানুষ আমার সুখ-দুঃখে সব সময় পাশে দাঁড়িয়েছেন, ব্রিটেনে বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রসারে যারা মূল ভূমিকা পালন করছেন, সেই সিলেট অঞ্চলের মানুষকেও আমার বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলার চেষ্টা করেছে এই মৌলবাদী গ্রুপটি’।
গাফ্ফার চৌধুরীর মতে, চরমপন্থা থেকে তরুণ প্রজন্মকে রক্ষায় সরকার, স্থানীয় প্রশাসন ও কমিউনিটির যৌথ ক্যাম্পেইন এখন সময়ের দাবি।
বৈঠকের অন্যান্য বক্তা কমিউনিটির উন্নয়নে কিংবদন্তির সাংবাদিক গাফ্ফার চৌধুরীর পরামর্শ নেওয়ায় কাউন্সিলের ভূয়সী প্রশংসা করে বাংলাদেশ, বাংলা ভাষা ও বাঙালির বিভিন্ন যুগসন্ধিক্ষণে তার ঐতিহাসিক ভূমিকা তুলে ধরেন। লন্ডনের স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার পর বাংলাদেশি এডুকেশনাল নিডস ইন টাওয়ার হ্যামলেটসসহ অন্যান্য তৃণমূল কমিউনিটিতে গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্ব ভূমিকার কথাও স্মরণ করেন তারা।
বক্তাদের মতে কমিউনিটি উন্নয়নে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর এমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কারণেই টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল তাকে ‘ফ্রিম্যান’ সম্মানে ভূষিত করে।
সাবেক কাউন্সিলার হেলাল রহমানের পরিচালনায় বৈঠকে আরও বক্তব্য দেন কাউন্সিলার খালিস উদ্দিন আহমেদ, কনজারভেটিভ দলের লিডার কাউন্সিলার পিটার গোল্ড, কাউন্সিলার এন্ড্রু উড, বাংলাদেশ হাইকমিশনের মিনিস্টার (প্রেস) নাদিম কাদির, যুক্তরাজ্য ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সৈয়দ এনামুল ইসলাম ও সাবেক কাউন্সিলার আলা উদ্দিন প্রমুখ।
উপস্থিত ছিলেন, সাংবাদিক মতিয়ার চৌধুরী, মানবাধিকার কর্মী ও কমিউনিটি নেতা আনসার আহমেদ উল্লা, নির্মূল কমিটির সহ সাধারণ সম্পাদক জামাল খান, সাংবাদিক জুয়েল রাজ, শাহ মোস্তাফিজুর রহমান বেলাল, কমিউনিটি ওয়ার্কার নাজমা রহমান, নারীনেত্রী হোসনারা মতিন, রুবি হক, কবি মুজিবুল হক মনি, সাংবাদিক আব্দুর রশিদ, হেফাজুল করিম রাকিব, লেবার পার্টির আনিসুর রহমান আনিস ও কাউন্সিল প্রেস অফিসার সৈয়দ মনসুর উদ্দিন প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৩ ঘণ্টা, মে ১২, ২০১৬
এএসআর