লন্ডন: সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ত্যাগ করার পক্ষেই রায় দিয়েছেন ব্রিটেনের জনগণ। বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) ইইউ’তে থাকা না থাকা প্রশ্নে অনুষ্ঠিত গণভোটে দেশটির জনগণ না থাকার পক্ষে রায় দেন।
১৯৭৩ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দেওয়ার পর একই ইস্যুতে এটি ছিলো দ্বিতীয় গণভোট। এর আগে ১৯৭৫ সালে হয়েছিলো প্রথম গণভোট। যেটিতে ইইউ’তে থাকার পক্ষে ব্যাপকভাবে রায় দিয়েছিলেন ব্রিটিশ জনগণ।
দীর্ঘ বছর জোটে থাকার পর সম্প্রতি জোট থেকে বেরিয়ে আসার জোর দাবি ওঠায় গত বছরের সাধারণ নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন প্রতিশ্রুতি দেন বিজয়ী হলে এই ইস্যুতে তার সরকার গণভোট আয়োজন করবে। তার সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এই গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে ব্রিটেন, স্কটল্যান্ড, ওয়েলস ও উত্তর আয়ারল্যান্ডের প্রায় ৪ কোটি ৬০ লাখ জনগণ ভোট দেওয়ার সুযোগ পান।
শরণার্থী সংকট, অভিবাসন নীতি, ঐতিহ্য রক্ষার তাগিদ, অর্থনৈতিক নীতিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়ার এই দাবি উঠে।
বৃহস্পতিবার সারাদেশের মোট ৩৮২টি ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ শেষে সারারাত ভোট গণনা শেষে শুক্রবার (২৪ জুন) সকাল সাড়ে ৬টায় ফল ঘোষিত হয়। যেখানে ইইউ ছাড়ার পক্ষে রায় দেন ৫২ শতাংশ ভোটার। যার সংখ্যা ১ কোটি ৭০ লাখ ৬১ হাজার ৭৪৪ জন। আর ইইউ’তে থাকার পক্ষে রায় দেন ৪৮ শতাংশ ভোটার। যার সংখ্যা ১ কোটি ৫৮ লাখ ৬৪ হাজার ৫৫৫ জন ভোটার।
তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এই গণভোটের রায়ের মাধ্যমে দীর্ঘ ৪৩ বছর পর ব্রিটেন এবং ইইউ নতুন ইতিহাসে প্রবেশ করলো। সেই সঙ্গে ব্রেক্সিটের জের ধরে প্রধানমন্ত্রীর ডেভিড ক্যামেরনের পদত্যাগের ঘোষণা দেশটির রাজনৈতিক গতিপথ বদলে যাবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
আনুষ্ঠানিক ফলাফল ঘোষণার আগেই এর ‘প্রভাব’ পড়তে শুরু করে ব্রিটিশ পাউন্ডে। ১৯৮৫ সালের পর ডলারের বিপরীতে ব্রিটিশ পাউন্ডের দাম নেমেছে সর্বনিম্ন পর্যায়ে। ডলারের বিপরীতে পাউন্ডের দাম কমেছে ১১ শতাংশ। ভোটের ফলাফলে প্রভাব পড়েছে এশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্টক মার্কেটেও। লেনদেন শুরুর পর জাপানের নিক্কি সূচক কমেছে ৩.১ শতাংশ। হংকংয়ের হ্যাং সেং সূচক কমেছে ৩.৫ শতাংশ। সাংহাই সূচক কমেছে ১.১৯ শতাংশ। এছাড়া, তেলের দাম কমেছে ৫ শতাংশের বেশি।
গণভোটে ভোট পড়েছে ৭২ শতাংশ। ব্রিটেনের গত সাধারণ নির্বাচনেও এতো ভোট পড়েনি। ব্রেক্সিট ভোটকে কেন্দ্র করে ব্রিটেনের বিভিন্ন অংশের মধ্যে প্রবল মতপার্থক্যের আভাসও মিলছে। রাজধানী লন্ডন ও স্কটল্যান্ড ব্রেক্সিটের বিপক্ষে অবস্থান নিলেও ইংল্যান্ডের গ্রামাঞ্চল এবং ওয়েলসের ভোটাররা শক্ত অবস্থান নিয়েছিলেন ব্রেক্সিটের পক্ষে। এছাড়া নর্দান আয়ারল্যান্ডে ভোট পড়েছে প্রায় সমান সমান।
ব্রেক্সিট বিজয়ী হওয়ায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন কট্টর ব্রেক্সিটপন্থী হিসেবে পরিচিত ব্রিটিশ ইন্ডিপেন্ডেন্ট পার্টির নেতা নাইজেল ফ্যারাজ। গত ২০ বছর ধরেই ব্রিটেনের ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পক্ষে ক্যাম্পেইন করে আসছেন তিনি। এই বিজয়কে তিনি সাধারণ মানুষের বিজয় বলে অভিহিত করেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৪ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০১৬
টিআই