ব্যক্তি ভেদে কষ্টগুলো আলাদা হয়। কিন্তু আমাদের সমাজ সেটা আমাদের শেখায়নি।
দিনের পর দিন চাপা পড়ে থাকা কষ্টগুলো একটা সময় মুছে যায়। তবে রেখে যায় স্মৃতি।
মানুষও একটা সময় গুটিয়ে নেয় নিজেকে। ডিপ্রেশন নামক বালাই আচ্ছাদিত করে রাখে তাকে। এক এক কষ্টের মানুষের বিবর্তনও একেক রকম। সমাজে সৃষ্টি হয় বিভেদের। সেটাও ভিন্ন মানসিকতার ফসল। যার ফলাফল আজকের আমাদের এ সমাজ। সে অর্থে কষ্টটাই কখনও কখনও সমাজে হয়ে ওঠে বিভেদ ও বিভাজনের কেন্দ্রস্থল।
কষ্টগুলো আসলে কেমন? কষ্ট তো কষ্টই। ছোট কষ্ট বা বড় কষ্ট। তবে আবেগ তাড়িত কষ্টগুলো বেশি স্পর্শ করে আমাদের। চাঁদ সূর্যের চেয়ে ছোট হয়েও যেমন পৃথিবীর কাছে থাকায় জোয়ার ভাটার সৃষ্টি হয়, তেমনি সুখগুলো পরিমানে বেশি হলেও কষ্টটা আমাদের খুব কাছে থেকে নিজের পরিধি বাড়িয়ে নেয়।
কষ্টের কথায় ফিরে আসি। জীবনটাকে বুঝতে শিখি লন্ডনে আসার পরে। কষ্টটা কি সেটা নিয়ে ভাবনা এখান থেকেই আসে। কষ্টগুলো নিয়ে কাজ শুরু করি। এখান থেকে বের হবার পথ হিসেবে একমাত্র হাসির চেয়ে আর ভালো কিছুই খুজে পাইনি। তাই মানুষকে হাসাতে পারলে মনে হয় একটা মহৎ কাজ করলাম।
কিন্তু ভাবুন সেই আমি নিজেই অন্যকে হাসাতে নিজের কষ্টগুলো ছোট ছোট নিঃশ্বাসের ভাজে রসিকতায় বের করে দিচ্ছি! রোবটিক মনে হয় মাঝে মাঝে নিজেকে। এটাও কিন্তু একটা কষ্ট। কয়েকটি চ্যারেটি অর্গানাইজেশনের হয়ে কষ্ট নিয়ে কাজ করেছি। কষ্টের উৎপত্তি যাচাই করেছি।
মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি (বলেছি কম শুনেছি বেশি)। তাদের বেশির ভাগই বৃদ্ধ। অভিজ্ঞতা যাদের আকাশ ছোঁয়া, প্রাপ্তি আমাদের থেকেও বেশি, তবুও তার কষ্ট। সন্তানেরা কাছে থাকে না, শেষ বয়সে একাকিত্ব, অপূর্ণতা, আরও কত কি!
যাই হোক কষ্টের কথা বলে কষ্টকে আর না বাড়াই, কষ্ট লাঘব করার ব্যর্থ চেষ্টা করি আসুন।
আমরা কষ্ট নিয়ে যতোটা ভাবি, সুখ নিয়ে তার চার আনাও ভাবি না। কিন্তু আমাদের জীবনে সুখের পরিমান হতাশা আর আক্ষেপের চেয়ে ঢের বেশি। খুঁজতে থাকুন। ভাবুন একটা সময় কষ্টের পরিমান কমে আসবে। এটা প্রমাণিত। চেষ্টাটা করেই দেখুন না। বিফলে ভাই আপনার প্রফেশনাল মনোবিজ্ঞানের কাছে যাওয়া অত্যাবশ্যক।
সুখগুলো কেমন হয়? আপনার ফেলে আসা মধুর দিনগুলো কিন্তু একটা সুখ। পরিবার-বন্ধু-আত্মীয়-স্বজন সবার সঙ্গে না হলেও আপনার অনেকের সঙ্গেই সুখের কোনো স্মৃতি আছে, সেগুলো ভাবুন দেখবেন নিজের কাছেই ভালো লাগবে। সুখগুলো এভাবেই খুঁজতে থাকুন।
আশা রাখছি কষ্টগুলো প্রশমিত হবে। অতীত ও বর্তমান অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। একজন স্বেচ্ছাসেবী কর্মী হিসেবে এটা আমার দায়িত্ব মানুষকে হাসি-খুশি রাখা।
সর্বোপরি আসুন সবাই সুন্দর মন দিয়ে ভাবি। দু’চোখ ভরে সৌন্দর্যকে উপভোগ করি। ভালো লাগাটা আপনাতেই চলে আসবে। সমাজ তখন সত্যিকার সুখের নাগাল পাবে। কেটে যাবে কষ্টের সব হতাশা।
আমাদের স্লোগান হোক ‘আসুন সবাই হাসি। হেসে হেসে সমাজ বদলাই। ’
লেখক: আরাত হোসেন রনি
সমাজকর্মী, লন্ডন, যুক্তরাজ্য।
বাংলাদেশ সময়: ২২২৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০১৭
আরবি/