শীতে জার্মানির অবস্থা খুব করুণ, গাছে একটাও পাতা থাকে না, বেশীরভাগ সময়ই আকাশ মেঘলা থাকে, সুর্যের দেখা পাওয়া যায় না। বিকাল চারটা/পাঁচটার পরেই সন্ধ্যা ঘনিয়ে চারিদিকে অন্ধকার নেমে আসে।
জার্মানিতে শীত এলেই দেশের জন্য আমার মন কাঁদে। আমি বৃহত্তর ফরিদপুরের মেয়ে। আমার জন্ম গোপালগঞ্জ, আর বেড়ে ওঠা ফরিদপুরের ঝিলটুলিতে। তারপর জার্মানি।
আমার কাছে বাংলাদেশ মানে পদ্মা, মধুমতি। উদাসী ফসলের মাঠ। হাল্কা কুয়াশার চাদরে আবৃত্ত মায়াবী শীত। প্রকৃতি ও স্বজনদের ভালোবাসার কুসুম কুসুম ওম।
জার্মানিতে এমন নরম-কোমল শীত পাওয়া যায় না। তুষার ঝড় নিয়ে এদেশে আসে বরফ শীতল শীত। গাছপালা সব জীর্ণ। পথঘাট বরফাবৃত। কখনো প্রবল তুষারপাত ও বরফের তোড়ে রাস্তা বন্ধ। লবণ ছিটিয়ে বহু কষ্টে রাস্তা চালু করা হয়।
অথচ এতো শীতেও এখানে মানুষ নিরাপদে থাকে। শীতে গৃহ ও আশ্রয়হীন হয়ে কাউকে মারা যেতে শুনি নি। আর বাংলাদেশে শীতে হাজার হাজার মানুষ কতো কষ্ট করে!
শীতের অনেকটা সময় এদেশে ঘরেই থাকতে হয়। বেরুনো প্রায়-অসম্ভব। তবু প্রকৃতিকে জয় করে এদেশের মানুষ কতো উন্নতি করছে! মাঝে মাঝে ড্রয়িং রুমের ফায়ারপ্লেসের সামনে বসে মন চলে যায় বাংলাদেশে। বাংলার শীতের মতো উৎসব, পিঠা, পুলি, গান, বাজনা এখানে অকল্পনীয়। এখানে সব হয় সামারে, অটামে। খুব মিস করি বাংলাদেশের শীত। নস্টালজিক চোখে জানালার কাঁচের ওপারে বরফের রাজ্যের দিকে তাকিয়ে থাকি।
আহ! শীত এতো নীরব ও নিঃসঙ্গও হতে পারে! মনে হয়, চোখ থেকে দুফোটা অশ্রু গড়িয়ে ইউরোপের একাকি বরফপিণ্ডের সাথে মিশে যাচ্ছে।
কনা ইসলাম: জার্মান প্রবাসী সঙ্গীতশিল্পী।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০১৭
এমপি/জেডএম