পশ্চিম ইউরোপের অংশ জার্মানিতে যদিও শীতের হাল্কা আমেজ রয়েছে, তথাপি বসন্ত এসে গেছে। প্রকৃতির বিচিত্র খেলায় জিরো ডিগ্রি তাপমাত্রায়ও চকচকে সোনালী রোদ্দুর।
বাসার ব্যালকনি ও রান্নাঘরের জানালা থেকে ক'দিন ধরেই দেখা যাচ্ছে, ধবল তুষার কেটে জেগে উঠছে সবুজ। অফিসে বা মার্কেটে যেতে দেখি, কত দ্রুত জীর্ণ গাছগুলো পল্লবিত হয়েছে। চারদিকে উঁকি দিচ্ছে বর্ণিল পাতা ও ফুল। শুরু হয়েছে শত শত প্রজাপতি ও পাখির আনাগোনা। কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে ঝরা পাতার মর্মর ছাপিয়ে পাখিদের উচ্চকিত কলতান।
শরৎ আর বসন্ত ইউরোপের সেরা ঋতু। তখন দেখা যায় কতো বিপুল সমারোহে প্রকৃতি ও পরিবেশ সজ্জিত হতে পারে। চারিদিকে ফুল আর ফুল। মনে হয় রঙের বন্যায় ভেসে যাচ্ছে জগৎ-সংসার।
প্রকৃতির সাথে পাল্লা দিয়ে মানুষও সাজে নানা রঙিন সাজে। বসন্তে ঘরে থাকে না কেউই। সবাই প্রকৃতিতে হারিয়ে যেতে চায় প্রিয়জনকে নিয়ে। জীবনকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখে প্রকৃতির সান্নিধ্যে চলে গিয়ে।
ভাবতে অবাক লাগে, অতি উন্নত বিশ্বের ইউরোপীয় দেশগুলো কতো নাই প্রকৃতি-বান্ধব! আধুনিক ও যন্ত্রচালিত সমাজের বাসিন্দা হয়েও মানুষ ভালোবাসে প্রকৃতির সাথে ঘনিষ্ঠ হয়ে থাকতে। কারণে বা অকারণে গাছের একটি ছোট্ট পাতাকেও ছিঁড়ে না। একটি অবোধ শিশুও প্রকৃতি, পরিবেশ, কীট, পতঙ্গ, লতা, গুল্মকে রক্ষা করার মানসিকতা পোষণ করে। জীবন আর প্রকৃতি কতো নিবিড়ভাবে হাত ধরাধরি করে চলে ইউরোপের সমাজ ও সংস্কৃতিতে, সেটি আরও স্পষ্ট দেখা যায় বসন্তকালে।
প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটিও বসন্তের সাথে নানাভাবে একাত্ম হয়। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বসন্তের গান, দেশীয় পোশাক ও খাবারের চর্চা করা হয়। লাল বা সবুজ আঁচলের বাসন্তী শাড়িতে নিজেকেও তখন মনে হয় একখণ্ড বাংলাদেশ। প্রবাসের দূরত্ব মুছে দিয়ে ভেসে যেতে থাকি সবুজে-শ্যামলে ছাওয়া বাংলামায়ের কোলে। ফাগুনের মাতাল বাতাসে একাকার হয়ে যায় পদ্মাপাড়ের স্মৃতিময় বাসন্তী শৈশব। ইউরোপের অপরূপ বসন্তঋতুতে তন্ময় হই বাংলাদেশের নিসর্গে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৮
জেএম