৭০-দশকে এ কালচারটি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ওই সময় গ্যাংগুলো নির্দিষ্ট একটি এলাকায় তাদের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টায় থাকতো।
মঙ্গলবার (০৫ জুন) এক গবেষণা প্রতিবেদনে লন্ডনের গ্যাং কালচার বিস্তারের ভয়াবহতা তুলে ধরা হয়েছে।
লন্ডনের সাউথ ব্যাংক ইউনির্ভাসিটির ড. এন্ড্রু হোয়াটটেকার নেতৃত্বে এ গবেষণায় বলা হয়েছে, ২৫০ গ্যাংয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রয়েছে প্রায় সাড়ে চার হাজার অপরাধী। শিশু-কিশোরদের গ্যাং কালচারে জড়িয়ে পড়ার প্রধান চারটি ধাপকে চিহ্নিত করা হয়েছে এ গবেষণায়।
প্রথম ধাপে নেহায়েত বিনোদন এবং রোমাঞ্চের খুঁজে এতে জড়িয়ে পড়ে কিশোর-তরুণরা। দ্বিতীয় পর্যায়ে এরা জড়িয়ে পড়ে অপরাধের সঙ্গে। এ সময়ে গ্যাং থেকে তারা আর্থিক সহায়তা পেয়ে থাকে। এ পর্যায়ে এসব সদস্য একটি নির্দিষ্ট এলাকায় তাদের প্রভাব বিস্তার করে। তৃতীয় পর্যায়ে এসে তারা গ্যাংয়ের আর্থিক লেনদেনের সঙ্গে সরাসরি জড়িয়ে পড়ে, নিজস্ব একটি বলয় তৈরি করে এবং চতুর্থ পর্যায়ে তারা গ্যাংয়ের নেতৃত্বের পর্যায়ে চলে যায়। এ সময়ে তারা লন্ডনের সীমানা ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব গ্যাং দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শিশু-কিশোরদের মাদক ও অর্থ লেনদেনে ব্যবহার করে থাকে। এছাড়া কিশোর অপরাধীদের দিয়ে তারা ছিনতাই-রাহাজানিও পরিচালনা করে থাকে। নারীদেরও মাদক পাচারে ব্যবহার করে থাকে অধিকাংশ গ্যাং। অনেক ক্ষেত্রে মেয়েদের অজান্তে তাদের যৌন সম্পর্কের ভিডিও তৈরি তা প্রকাশের ভয় দেখিয়ে বাধ্য করছে মাদক পাচারে।
এ অপরাধ জগতের সঙ্গে ধর্মীয় উগ্রবাদের সরাসরি কোনো যোগাযোগ না থাকলেও প্রতিবেদনে চিহ্নিত করা হয়েছে, অপরাধীচক্র ও জিহাদি নেটওয়ার্কগুলো তাদের দলে ভেড়াতে একই শ্রেণিকে টার্গেট করছে। সংশ্লিষ্ট তরুণদের ভাষ্যমতে, উগ্রবাদের দায়ে সন্দেহভাজন ব্যক্তিরাই গ্যাং সংস্কৃতির দায়েও সন্দেহভাজন।
বতর্মানে লন্ডনে নাইফ ক্রাইম বা ছুরি সন্ত্রাস অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ছুরি সন্ত্রাসে এ বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত কেবলমাত্র লন্ডনেই ৬২জন খুন হয়েছেন। অন্যদিকে ২০১৭ সালে যুক্তরাজ্যে মোট ৩৭ হাজার ৪৪৩টি নাইফ ক্রাইম রেকর্ড করেছে পুলিশ। এরমধ্যে লন্ডনে সংঘটিত হয়েছে ১২ হাজার ৯শ ৮০টি। লন্ডনে ক্রমবর্ধমান ছুরি সন্ত্রাসের নেপথ্যে প্রধান কারণ হচ্ছে, তরুণদের গ্যাংয়ে যোগ দেওয়ার প্রবণতা।
অন্যদিকে লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার ক্রেসিডা ডিক এ ধরণের অপরাধ বৃদ্ধির কারণ হিসেবে পুলিশের সংখ্যা কমিয়ে আনাকে দায়ি করেছেন। তিনি বলেন, পুলিশের সংখ্যা কমার সঙ্গে অপরাধ বাড়ার কোনো সম্পর্ক নেই এ মনোভাবটি একবারেই শিশুসুলভ।
হাউস অব কমন্সের হোম অ্যাফেয়ার্স সিলেক্ট কমিটির সামনে বক্তব্য দেওয়ার সময় ক্রেসিডা ডিক এ মন্তব্য করেন।
এর আগে সদ্য সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আম্বার রুড বলেছিলেন, পুলিশের সংখ্যা কমানোর কারণে লন্ডনের অপরাধ বৃদ্ধি পেয়েছে এর কোনো প্রমাণ নেই। গ্যাং সংস্কৃতি আর নাইফ ক্রাইমে পিছিয়ে নেই বাংলাদেশি অধ্যুষিত পূর্ব লন্ডনও। এ অঞ্চলের কতিপয় বাঙালি তরুণ-তরুণীও এ প্রবণতার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন। এ নিয়ে কমিউনিটিতে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা রয়েছে।
বাঙালি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটসের মেয়র জন বিগস বলেন, পুলিশের সংখ্যা কমার কারণে অপরাধ দমনে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে এবং কনজারভেটিভ সরকার এ বাস্তবতাকে ক্রমাগতভাবে অস্বীকার করে চলেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২০ ঘণ্টা, জুন ০৭, ২০১৮
ওএইচ/