মালয়েশিয়া থেকে ফিরে: মালয়েশিয়ায় পড়াশোনার পাশাপাশি কাজের সুযোগ রয়েছে, প্রচার করে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা করছে রাজধানীর বেশ কয়েকটি কনসালটেন্সি প্রতিষ্ঠান। সূত্র বলছে, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণার মাধ্যমে কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এসব এজেন্সি।
স্টুডেন্ট ভিসায় মূলত অবৈধ লোক পাঠানো হচ্ছে অথবা পার্ট টাইম চাকরির কথা বলে শিক্ষার্থীদের মালয়েশিয়ায় দালালের হাতে ছেড়ে দিচ্ছে। সর্বশান্ত হচ্ছে মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তানেরা। বাংলানিউজ ধারাবাহিকভাবে প্রলোভন দেখানো এসব প্রতারক প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশ করবে।
মালয়েশিয়াতে পার্ট টাইম চাকরির মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে জাতীয় দৈনিকগুলোতে অবাধে বিজ্ঞাপন দিচ্ছে বেশ কয়েকটি এজেন্সি। অথচ গত নভেম্বরে সরজমিন মালয়েশিয়ায় শিক্ষা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, সেখানে কোন পার্ট টাইম জবের সুযোগ নেই।
মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশি শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা এ ধরনের দালালদের কাছ থেকে সাবধানে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
মালয়েশিয়ার সংবাদ মাধ্যমগুলোতে কিছুদিন পর পরই বাংলাদেশি এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে রিপোর্ট প্রকাশ হচ্ছে। গত ১০ নভেম্বর মালয়েশিয়ার প্রভাবশালী দৈনিক ‘দ্যা স্টার’ তাদের মূল প্রতিবেদনে জানায়, ‘বাংলাদেশের স্টুডেন্ট ভিসায় আসছে শ্রমিক’।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মূলত স্টুডেন্ট ভিসায় শিক্ষার্থীরা এখানে এসে দেখে তাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে এজেন্সি। দেশে যেসব কাগজপত্র দেখিয়েছে সেগুলো ভুয়া। আসলে এখানে কলেজের সঙ্গে কোন ধরনের সর্ম্পকই নেই এজেন্সির। আবার হয়তো ভুইফোঁড় কলেজ বা ইনস্টিটিউটে ভর্তি করানো হয়েছে। যাদের মালয়েশিয়াতেই কোন বৈধতা নেই।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, খাওয়া দাওয়ার খরচ বাদে মালয়েশিয়াতে পড়াশোনার খরচ কোনক্রমেই সাড়ে তিন থেকে ৬ লাখ টাকার নিচে সম্ভব নয়। আর এখানে পার্ট টাইম কাজের কোন সুযোগও দেওয়া হয় না।
কুয়ালালামপুরের এফটিএমএস কলেজের ছাত্র সোহাগ কবির বাংলানিউজকে বলেন, এ দেশে পার্টটাইম কাজের কোন ধরনের সুবিধা নেই।
তবে এজেন্টরা শিক্ষার্থী আনার সময় বলেন, ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা কাজ করেই মাসে ৫০ হাজার টাকা আয় করা যায়। এ প্রলোভন সম্পূর্ণ মিথ্যা। এখানে সব ক্ষেত্রেই স্থায়ী কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীদের নিয়োগ দেওয়া হয় না।
তিনি বলেন, দেশে দালালের খপ্পরে এসে এখানে অনেকেই বিপদে পড়ে। কাজ দেওয়ার কথা বলে অনেককে পার্টটাইম জব হিসেবে চাকরি দেয়া হয় আবাসিক হোটেলে। কিন্তু সেখানে ১২ ঘণ্টার নিচে চাকরি নেই। অনেক সময় মালিক চাইলে আরো বেশি সময়ও দিতে হয়। আর এ ধরনের চাকরি করলে পড়াশোনা করা যায় না।
তার ফল স্বরুপ বছর শেষে ক্লাসে এটেনডেন্স থাকে না এবং ভিসা পেতে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। ১২ ঘণ্টা কাজের জন্য দেওয়া হয় ২০ থেকে সর্বোচ্চ ৪০ রিঙ্গিত। যা বাংলাদেশি টাকায় ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা। মাসে এভাবে আয় হয় বড়জোর ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। যা দিয়ে সে দেশে নিজের থাকা-খাওয়াই অসম্ভব।
ইউনিভার্সিটি মালায়ার ছাত্র রাকিব বাংলানিউজকে বলেন, এখানে প্রফেশনাল কোর্স করতে ২ থেকে ৩ বছর সময় লাগে। কোর্স ফি পড়বে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকার মতো। আর থাকা-খাওয়া মিলিয়ে মাসে ৮০০ থেকে ১২০০ রিঙ্গিত, মানে ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা চলে যায়। তবে এ খরচটা পরিবার থেকেই নিতে হবে, যদি পড়াশোনা করতে চায় শিক্ষার্থী।
অথচ বাংলাদেশের এজেন্সিগুলো সেখানে দেখাচ্ছে পার্টটাইম জবের প্রলোভন। অনেক সময় এসব প্রলোভন দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের মালয়েশিয়াতে দালালের কাছে পাঠানো হয়। যারা পাসপোর্ট আটকে রেখে বা গুম করে শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের থেকে আদায় করে কয়েক লাখ টাকা।
দেশের জাতীয় দৈনিকগুলোতে ধানমন্ডির ‘উইংস গ্লোবাল কনসালটেন্ট’ মালয়েশিয়ায় পড়াশোনার বিজ্ঞাপন দিয়ে জানিয়েছে, সেখানে পার্ট টাইম জবের মাধ্যমে মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা আয় করার ব্যবস্থা করে দেবে। যা পুরোটাই প্রতারণা। ধানমন্ডির ১০ নং রোডের ৫১ নং বাড়িতে এ প্রতিষ্ঠানের অফিস।
বনানীর সি ব্লকের ১৭ নং রোডের ৭ নং বাড়িতে অবস্থিত এসওয়াই নামে এজেন্সি প্রতারণা করেছে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। তারা বলছে ৩০ দিনে কলেজ কর্তৃক ভিসা প্রাপ্তির কথা। মূলত কলেজ কখনো ভিসা প্রদান করতে পারে না। আর ফাইভ স্টার হোটেলে কাজের সুযোগ ও থাকার কথা বলে যে প্রলোভন দেখিয়েছে সেটিও সম্পূর্ণ মিথ্যা।
মূলত শিক্ষার্থদের প্রলোভন দেখিয়ে তাদের অর্থ হাতিয়ে নেয়াই এসব এজেন্সির উদ্দেশ্য। দেশ থেকে মালয়েশিয়ায় যেয়ে শিক্ষার্থীদের প্রতারণার ফাঁদে পড়ার ধারাবাহিক প্রতিবেদনের এটি প্রথম পর্ব।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৬ ঘণ্টা; ডিসেম্বর ৩১, ২০১৩