ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মালয়েশিয়া

ভালো নেই মালয়েশিয়ায় জিটুজি শ্রমিকরা!

মাজেদুল নয়ন ও সাজেদা সুইটি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৫ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০১৪
ভালো নেই মালয়েশিয়ায় জিটুজি শ্রমিকরা! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম (ফাইল ফটো)

মালয়েশিয়া থেকে: ভালো নেই সরকারি পর্যায়ে (জিটুজি- গভর্নমেন্ট টু গভর্নমেন্ট) মালয়েশিয়ায় আসা বাংলাদেশি শ্রমিকরা। ‘কেউ কথা রাখেনি’- বলেই অভিযোগ করছেন তারা।


 
ভাগ্যান্বেষণে আসা এসব শ্রমিক বলছেন, যে পরিমাণ মূল বেতনের কথা দিয়ে তাদের দেশ থেকে আনা হয়েছে, সেই বেতন তারা পাচ্ছেন না। বরং ঘণ্টা-চুক্তিতে বেতন দেওয়া হচ্ছে। আর তাতে তাদের দিনাতিপাত ক্রমশই হয়ে পড়ছে কঠিন থেকে কঠিনতর।
 
পেরাকের পাম বাগানের শ্রমিক মো. রাসেল জিটুজি’তে মালয়েশিয়ায় আসেন গত ডিসেম্বরে। সরকারের দেয়া ৩৫ হাজার টাকা প্যাকেজে এদেশে পাড়ি জমিয়েছিলেন তিনি।
 
রাসেল বাংলানিউজকে জানান, ইউনাইটেড প্লান্টিয়া প্রকল্পে তিনিসহ বাংলাদেশের দেড়শ’ শ্রমিক কাজ করছেন।
 
দেশ থেকে আসার সময় তাদের বলা হয়েছিল এই কোম্পানিতে তাদের মূল বেতন হবে মাসে ৯শ রিঙ্গিত(এক রিঙ্গিত বর্তমানে প্রায় ২৬ টাকার সমান)।
 
এছাড়া ওভারটাইম মিলিয়ে আরো ‍তিনশ’ থেকে চারশ’ রিঙ্গিত আয় হবে বলে তখন জেনেছিলেন তারা।
 
প্রথম দুই মাস সব ঠিকঠাক চলছিল। কিন্তু তৃতীয় মাস থেকেই কোম্পানি তাদের কথা থেকে সরে আসে। এই দেড়শ শ্রমিককে তাদের নির্ধারিত মূল-বেতন হিসেবে না দিয়ে ঘন্টায় ৩ রিঙ্গিত করে দিতে থাকে।
 
মাগুরা’র ছেলে রাসেল আরও জানান, এভাবে আয় করে মাস শেষে দেখা যায় পাঁচশ’ থেকে ছয়শ’ রিঙ্গিতের বেশি হচ্ছে না। এই টাকা এখানে জীবনযাপনেই ব্যয় হয়ে যায়। দেশে পাঠানোর সুযোগ পান না তারা।
 
পাহাংয়ের ইউআইইউ প্লান্টের শ্রমিক নজরুল ইসলাম ও মো. বাতেনের কথার সারমর্মও প্রায় একই রকম।
 
তারা বাংলানিউজকে জানান, তাদের সঙ্গে দেশে কথা হয়েছিল কোম্পানির মূল বেতন হবে ৯০০ রিঙ্গিত। কিন্তু ২ মাস পর থেকে তাদেরকে দিয়ে ঘন্টা চুক্তিতে কাজ করানো হচ্ছে।
 
নজরুল বলেন, চাইনিজ মালিক বলছেন, ভালো না লাগলে চলে যেতে হবে। তবে এখানে এখন আমাদের আর যাওয়ার জায়গা নেই।
 
ফরিদপুরের বাতেন বলেন, আমাদের যদি আগে এসব কথা বলা হতো, তাহলে হয়তো আমরা এখানে আসতে এতটা আগ্রহী হতাম না।
 
তাদের কাছ থেকে জানা যায়, পাহাংয়ের এই প্লান্টে বাংলাদেশের আড়াইশ’ শ্রমিক কাজ করছেন। গত মে মাসের বেতন তারা পেয়েছেন জুনের মাঝামাঝিতে।
 
শ্রমিকদের কাছ থেকে জানা যায়, সম্প্রতি জোহরবাড়ুর একটি প্লান্টে দুই শতাধিক বাংলাদেশি শ্রমিক ঘন্টা-চুক্তিতে কাজের প্রতিবাদে ধর্মঘটও ডেকেছেন।
 
প্রতিবাদী এই শ্রমিকরা বলেন, এভাবে ঘন্টা ভিত্তিতে কাজ করে মাসে যে আয় হয়, তা দিয়ে নিজেদেরই চলতে কষ্ট হয়।
 
হতাশ সুরে এসব শ্রমিক বলেন, পরিবারকে এখন পর্যন্ত কোন ধরনের আর্থিক সাহায্য পাঠাতে পারিনি।
 
এদিকে কয়েকজন দক্ষ শ্রমিক অবশ্য বাংলানিউজকে এ বিষয়ে ভিন্নরকম তথ্য দিচ্ছেন।
 
তারা বলছেন, ঘন্টা চুক্তিতে কাজে লাভ বেশি। কাজের গতি বাড়লে তখন মাসে দেড় হাজার থেকে দুই হাজার রিঙ্গিত পর্যন্ত আয় করা সম্ভব।
 
এই শ্রমিকদের একজন নাম না প্রকাশের শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশি শ্রমিকদের কারও কারও মধ্যে কিছু বাজে অভ্যাস দেখা যায়।
 
এসব ‘বাজে অভ্যাস’ সম্পর্কেও বলেন তিনি।
 
এই শ্রমিক বলেন, কাজের সময় বাংলাদেশী শ্রমিকদের অনেকে গামছা বিছিয়ে গাছের তলায় ঘুমিয়ে পড়েন। এভাবে লম্বা সময় কাটিয়ে দেন তারা। আবার অনেকেই ঘন্টার পর ঘন্টা দেশে রেখে আসা ঘর-পরিবারের সঙ্গে ফোনে কথা বলে কাটায়।
 
তিনি বলেন, একসময় তাদেরকে ঘন্টা-চুক্তিতে ফেলে দিতে একরকম বাধ্য হয় কোম্পানি। কারণ কোনো কোম্পানি লোকসান টানবে না। তারা ক্রমশ লাভ বাড়ানোর দিকেই মনোযোগী থাকে। কিন্তু এভাবে সময় নষ্ট করা শ্রমিকরা দিন শেষে দেখে তারা আয় সামান্যই করেছে।
 
তিনি আরও বলেন, যারা দক্ষ নন, তারা যদি টানা কিছুদিন কাজ শেখেন ও কয়েকমাস পরিশ্রম করেন, তাহলে একসময় দক্ষইতো হবেন। আর যেকোনো কোম্পানিতেই দক্ষ শ্রমিকের কদর রয়েছে। তখন ঘন্টা চুক্তিতে লাভের বিষয়টি ঐ শ্রমিকও বুঝতে পারবেন।
 
তবে সমস্যাগ্রস্তরা এ বিষয়ে সহযোগিতা চাইছেন বাংলাদেশ সরকার ও মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাই-কমিশনের। মূল বেতন ও ওভারটাইম বিষয়ে একটি প্রতিকার চাইছেন তারা।
 
উল্লেখ্য, এক সময় অসাধু রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে তিন-চার লাখ টাকা খরচ করে অনেকেই মালয়েশিয়া এসে প্রতারিত হতেন।
 
এসব দেখে-শুনে ২০০৯ সালে মালয়েশিয়া বাংলাদেশ থেকে  কর্মী না আনার সিদ্ধান্ত নেয়।
 
২০১২ সালের ২৬ নভেম্বর মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশ ‘জিটুজি’ পদ্ধতিতে কর্মী নিয়োগ চুক্তিতে সই করে। এভাবেই দুই দেশের মধ্যে বৃহৎ শ্রমবাজার আবার চালু হয়।
 
এরপর মালয়েশিয়ায় আসতে আগ্রহী ১৪ লাখ লোকের ডাটাবেস তৈরি হয়। এদেশ থেকে যে চাহিদা করা হয়, সেই অনুযায়ী বাংলাদেশ কর্মী পাঠাচ্ছে। আর কর্মীরাও বেশ কম খরচে মালয়েশিয়া আসতে পারছেন।
 
অবশ্য ‘জি-টু-জি’র বিরোধী পক্ষও রয়েছে।
 
তাদের মতে, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশী কর্মীদের চাহিদা ব্যাপক। ‘জিটুজি’ পদ্ধতি চালু হওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী কমসংখ্যক কর্মীই কাজে আসতে পারছেন।
 
বিএমইটি ওয়েবসাইট বলছে, ২০১৩ সালে ৩ হাজার ৮শ ৫৩ জন এবং ২০১৪ সালের মার্চ পর্যন্ত ১ হাজার ৯শ জন কর্মী বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়া এসেছেন।








বাংলাদেশ সময়: ১২২২ ঘন্টা, জুন ১৯, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মালয়েশিয়া এর সর্বশেষ