কুয়ালালামপুর থেকে ফিরে: মালয়েশিয়াকে বলা হয় উন্নয়নের বিস্ময়। এখন ইউরোপ বা আমেরিকার মানুষদের জন্যও থাকার উপযুক্ত স্থান দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার এই দেশ।
জীবনমানে পশ্চিমাকে টেক্কা দিলেও মালয়েশিয়াতে খরচ কিন্তু কম। বাংলাদেশের মতোই খরচে বাস করা যায় মালয়েশিয়ায়। ব্যাবসা, চাকরি আর পড়াশোনার জন্যে বেছে নিতে পারেন দেশটিকে।
জীবনমান: মালয়েশিয়ায় জীবন মান এখন বেশ উন্নত। এখানে যাতায়াতের সুযোগ অবারিত। বাংলাদেশি টাকায় ২ হাজার খরচ করলেই আপনি বিমানে চলে যেতে পারবেন মালয়েশিয়ার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে। আর কুয়ালালামপুর শহরে রয়েছে ফ্রি বাস।
বাসের পাশাপাশি রয়েছে কেটিএম, এলআরটি, ট্রেন সুবিধা। যার ফলে এক প্রদেশ থেকে অন্য প্রদেশে যেয়ে অফিস করতে বেগ পেতে হয় না চাকরিজীবিদের। এখানে গাড়ির মূল্য বেশ কম। ৬ হাজার রিঙ্গিত (দেড় লাখ টাকা) খরচ করলেই আপনার হতে পারে একটি ব্যক্তিগত গাড়ি। আর মোটর সাইকেল পাওয়া যাবে, এক লাখ টাকার মধ্যেই।
শেষ কবে এ দেশে কারেন্ট গিয়েছে বলতে পারে না মানুষ। আর রাজনীতিবিদ ছাড়া রাজনীতির জন্য নিজেদের অর্থ বা সময় ব্যয় করতেও রাজি নয় এখানকার মানুষ। তাই সহিংসতা ছাড়াই শান্তিতে বাস করছে সেখানে মানুষ। রয়েছে নিশ্চিন্ত নিরাপদ ব্যবস্থা। ফলে নারীরাও সারারাত ধরেই কাজ করতে পারে রেস্তোরা বা টোল প্লাজায়।
অর্থনীতি: মালয়েশিয়ার অর্থনীতি ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল মার্কেটের উপর ভিত্তি করে। এখানে বিনিয়োগের সুযোগ যেমন রয়েছে, তেমনি সে দেশের বিনিয়োগও বাংলাদেশে আকর্ষনের সুযোগ রয়েছে। এশিয়ার অর্থনীতিতে মালয়েশিয়া একটি বিস্ময়, যাদের বাৎসরিক জিডিপি বৃদ্ধির হার ৬ দশমিক ৫ শতাংশ করে। আশিয়ান দেশগুলোর মধ্যে অবস্থান তৃতীয় এবং বিশ্বে ২৯তম।
মালয়েশিয়ার অর্থনীতি অপেক্ষাকৃত মুক্ত কিন্তু রাষ্ট্রকেন্দ্রীক। বর্তমানে মালয়েশিয়া একটি উঠতি শিল্পউন্নত বাজার অর্থনীতি বলে বিবেচিত। সরকার বিভিন্ন ম্যাক্রো-অর্থনৈতিক পরিকল্পনার মাধ্যমে দেশটির অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২০ সালের মধ্যে মালয়েশিয়া একটি স্বয়ংসর্ম্পূণ ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল দেশ হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলবে। অবশ্য বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজ্জাক বলেছেন ২০২০ সালের পূর্বেই এ লক্ষ্যে পৌঁছাবে তার দেশ। যার পেছনে কাজ করছে গর্ভনমেন্ট ট্রান্সফরমেশন প্রোগ্রাম ও ইকোনমিক ট্রান্সফরমেশন প্রোগ্রাম।
চাকরি করে আয়: এখানকার অর্থনীতিতে বিভিন্নভাবে অবদান রাখছে বাংলাদেশিরা। এখানে আয় ভাল, এখানে মধ্যবিত্তদের আয় ৪ থেকে ৬ হাজার রিঙ্গিত, যা বাংলাদেশি টাকায় এক থেকে দেড় লাখ টাকা।
আর একেবারে দলিত পেশায় যারা কাজ করছেন, যেমন সুইপার, শ্রমিক, তাদের আয়ও কারোই এক হাজার রিঙ্গিতের কম নয়। যা বাংলাদেশি টাকায় দঁড়ায় ২৫ হাজার টাকা।
আর প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বা অন্য চাকরিজীবিদের আয়তো বাংলাদেশি অর্থে ৫ থেকে ১৫ লাখ টাকা, এর বেশিও রয়েছে।
ব্যাবসা: মালয়েশিয়ায় ব্যবসার রয়েছে অবারিত সুযোগ। এখানে বাংলাদেশের গার্মেন্ট পণ্যের রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। কারণ তাদের নিজস্ব পোষাক শিল্প নেই। বাংলাদেশের ১৫০ টাকা দামের টি-শার্টও সেখানে বিক্রি হয় কমপক্ষে ২০ রিঙ্গিতে, যা বাংলাদেশি অর্থে ৫০০ টাকা।
রয়েছে হোটেল ব্যাবসার সুযোগ। মালয়েশিয়ার রোস্তোরাগুলো বেশ জমজমাট। এরইমধ্যে মালয়েশিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে বাংলাদেশিরা রেস্তোরা ব্যাবসায় বেশ সাফল্য অর্জন করেছে। ডলারের তুলনায় অর্থের মান বেশি হওয়ায় ব্যাবসায়িক লেনদেনেও সাফল্য রয়েছে। আর যেহেতু মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেশি, ফলে ব্যাবসায়ীদের জন্যে আয়ের স্বর্গ মালয়েশিয়া।
ভিন্ন জাতিদের অবস্থান: ৩ লাখ ২৯ হাজার ৮৪৭ বর্গকিলোমিটারের দেশে জনসংখ্যা মাত্র ৩ কোটির কিছু বেশি। বলা হয় সাতু মালয়েশিয়া। এখানে মালয় জাতিগোষ্ঠী মোট জনগণের ৫০ শতাংশ। এরপরে রয়েছে ২৪ শতাংশ চায়নিজ। ১১ শতাংশ আদিবাসী এবং ৭ শতাংশ ভারতীয়। আট শতাংশ রয়েছে বিভিন্ন দেশের মানুষ, যার মধ্যে বাংলাদেশি রয়েছে বড় অংকের।
তবে কুয়ালালামপুর, জোহরবারু, পেনাংয়ের মতো বাণিজ্যিক এলাকাগুলোতে বাংলাদেশিদের অবস্থান এবং সংখ্যা দুটোই কিন্তু বেশ ভাল।
আবাস: মালয়েশিয়ায় প্রফেশনাল বা বিজনেস ভিসা পেয়ে গেলে আপনি কিনতে পারেন সেখানে প্লট বা ফ্ল্যাট। আয়ের কথা মাথায় রাখলে বাংলাদেশের চেয়ে অন্তত সেখানে এই খরচ বেশ কম। এক থেকে ৪ লাখ রিঙ্গিতে, যা বাংলাদেশি টাকায় ২৫ লাখ থেকে এক কোটি টাকায় আপনি পেয়ে যাবেন আঙ্গিনাসহ ডুপ্লেক্স বাড়ি। যা বাংলাদেশে এখন অকল্পনীয়।
বাসা ভাড়ার ক্ষেত্রেও রয়েছে কমের মধ্যে থাকার সুযোগ। আমাদের এখানে ধানমন্ডি বা গুলশানের এপার্টমেন্টগুলোর চেয়েও উন্নত থাকার সুযোগ রয়েছে মালয়েশিয়ায় কনডোগুলোতে। তিন থেকে ৪ রুমের বাসা ভাড়া পড়বে মাসে ১ থেকে ২ হাজার রিঙ্গিত। আর বাসাগুলোতে আপনি পাবেন ফার্নিচার সু্বিধাও।
খাবার: মুসলমান প্রধান দেশ হিসেবে আপনি সেখানে পাবেন হালাল খাবার। আবার পৃথিবীর যে কোন দেশের খাবারই চাইলে চেখে নিতে পারবেন। দেশের আইন ও নীতি ঠিক থাকায়, কেউ ভাবতেও পারে না খাবারে ভেজাল দেওয়ার কথা।
রয়েছে প্রচুর বাংলাদেশি খাবারের দোকান। আর চাইলে বালাকংয়ের মতো বাজার থেকে সব্জি কিনে নিজেরাও রান্না করতে পারেন বাসায়। বাজারে সজ্বি বা মাংস আর মাছের দাম বাংলাদেশের তুলনায় বেশ কম। আর বেকারি ফুডতো হাতের নাগালে।
মালয়েশিয়াতে গড় তাপমাত্রা ২৭ থেকে ৩০ ডিগ্রী সেলসিয়াস। সেখানে নেই প্রচণ্ড গরম বা হাড়কাপুঁনে শীতের ব্যাপার।
শুধুমাত্র সেকেন্ড হোম নয়, বিজনেস ও প্রফেশনাল ভিসা নিয়েও এখন অনেকে থাকছেন মালয়েশিয়া। সেখানে বাড়ি কিনে ছেলেমেয়েদের ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন সেখানকার ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে। নিরাপদে থাকছেন পরিবার নিয়ে সেখানে।
বাংলাদেশ সময়: ১০১৫ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০১৪