মালয়েশিয়া থেকে: পদ্মাসেতু নিয়ে তর্কের শুরু আছে, শেষ নেই। মহাজোট সরকারের প্রথম মেয়াদের নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল পদ্মাসেতু নির্মাণের।
সহযোগী ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) হাটছে বিশ্বব্যাংকের হাত ধরে। জাপানি সাহায্য সংস্থা (জাইকা) রয়েছে অবজারভেশনে। ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি) প্রতিশ্রুত সাহায্য দেওয়ার প্রতিশ্রুতি রক্ষায় এখনও সচেষ্ট।
আসলে সেতুর ব্যাপারে সরকারি কোনো সিদ্ধান্ত পরিষ্কার নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে ঘোষণা দিয়েছেন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ করা হবে।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলছেন, সম্ভব নয়! অর্থনীতির উপর ভয়ানক চাপ সৃষ্টি হবে। অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে একমত দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদরাও। যদিও অর্থনীতি সমিতির সভাপতি ড. আবুল বারাকাত বিষয়টি মানতে চাইছেন না।
তিনি দেশীয় সম্পদ দিয়ে দুটি পদ্মাসেতু নির্মাণ সম্ভব বলে মত দিয়েছেন। আসলে কোনটা সত্য দেশে-বিদেশে বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংকের ঋণ প্রস্তাব নিয়ে রশি টানাটানির খবর যেন শেষ হওয়ার নয়।
সর্বশেষ তথ্যমতে, জাইকা প্রধান বাংলাদেশের হয়ে বিশ্বব্যাংকের ঋণ পাওয়ার ব্যাপারে দূতিয়ালী করছেন। বিশ্বব্যাংক সরকারের উপর যে বিষয়টি নিয়ে রুষ্ট, তাও সার্বিক নিরসনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
স্বপ্নের পদ্মাসেতু বলে কথা! সে আর সেই স্বপ্নের অংশীদার দেশি-বিদেশি নাগরিকরা। তবে বিদেশিদের মধ্যে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কোনো বিশেষজ্ঞ থাকলে
তার তো নিরন্তর চেষ্টা, পিতৃভূমিতে স্বপ্নের সেতুটি হোক।
তেমনি একজন আন্তর্জাতিক অর্থনিতিবিদ ও বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ পদ্মাসেতু নিয়ে একান্ত কথা বলেছেন বাংলানিউজের সঙ্গে।
তিনি হলেন আন্তর্জাতিক অর্থনীতিবিদ ও বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ মালয়েশিয়ান নাগরিক অধ্যাপক ড. মাসুম বিল্লাহ। মালশিয়ার নাগরিক হলেও তার পৈত্রিকভিটা
বাংলাদেশের বাগেরহাট জেলায়।
সেই সূত্রে তিনি পিতৃভূমি সম্পর্কে সর্বদাই সচেতন। বাংলাদেশের উন্নয়নসহ সার্বিক কল্যাণমূলক কাজের খোঁজখবর তিনি রাখেন। তেমনি আলোচিত পদ্মাসেতু নিয়েও তার আগ্রহের শেষ নেই।
বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের যথেষ্ট লজিক রয়েছে।
ড. মাসুম বিল্লাহ বলেন, যে দেশটি নোবেল পাওয়ার যোগ্যতা রাখে, সে দেশটি নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ করতে পারে। এক্ষেত্রে কো-অপারেটিভ মাইক্রো বন্ড চালু করাই পদ্মাসেতু নির্মাণের জন্য যথেষ্ট।
একই সঙ্গে পদ্মাসেতুকে শেয়ার বাজারের আওতায় নেওয়া যায় বলেও মত দেন এই অর্থনীতিবিদ।
তিনি বলেন, শেয়ার বাজারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হলে মানুষ হুমড়ি খেয়ে পদ্মাসেতুর শেয়ার কিনবে। এতে সরকারের সুবিধা হবে ঋণমুক্ত অর্থ সংগ্রহের এবং শেয়ার হোল্ডাররা অদূর ভবিষ্যতে পদ্মাসেতুর মালিক হবে।
বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মাসুম বিল্লাহর ভাষায়, খুব পরিষ্কার, শেয়ার ক্রয়ের মাধ্যমে সর্বস্তরের জনগণ আজীবন পদ্মাসেতুর সুবিধা ভোগ করতে পারবে।
সেতু নির্মাণে বৈদেশিক মুদ্রা সংকট মোকাবেলার ব্যাপারে তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার যখন ৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের যোগ্যতা অর্জন করবে, তখন আন্তর্জাতিক টেন্ডারদাতারা পদ্মাসেতুর কাজ পাওয়ার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়বে। তারাই ব্যবসার প্রয়োজনে বৈদেশিক মুদ্রার যোগান দাতা হবে।
ড. মাসুম বিল্লাহ মনে করেন, টাকা থাকলে বাঘের চোখ কেনা যায়। তারপর কো-অপারেটিভ মাইক্রো বন্ড পদ্ধতিতে ঋণমুক্ত বৈদেশিক মুদ্রার অভাব পূরণ হওয়ার একটা পথ খোলা তো রয়েছেই। অন্যান্য সহযোগী ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান সক্রিয় থাকলে বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণে কোনো সমস্যা নেই।
নির্মাণ সুবিধার্থে পদ্মাসেতু প্রকল্পকে পাঁচ স্তরে ভাগ করেছেন ড. মাসুম বিল্লাহ। এরমধ্যে প্রথম, গর্ভনমেন্ট পলিসি অ্যান্ড ইনফোর্সমেন্ট, দ্বিতীয়. পদ্মা ব্রিজ বোর্ড যারা ডিসিশন মেকিং করবে, তৃতীয়. তথ্য প্রযুক্তির জন্য উপদেষ্টা পরিষদ, যারা নিরীক্ষা বিভাগের দায়িত্বে থাকবেন, চতুর্থ. যাদের হাতে আরও থাকবে অভিযোগ গ্রহণ ও তদন্তের ক্ষমতা, পঞ্চম. কার্যকরী ব্যবস্থাপনা জোরদার।
তিনি বলেন, এই পাঁচটি স্তরে ভাগ করে পদ্মাসেতু নির্মাণের পদক্ষেপ নিলে অন্যের দরবারে হাত পাততে হবে না।
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাসুম বিল্লাহ বলেন, বাংলাদেশ পারে এবং পারার অতীত অভিজ্ঞতা রয়েছে দেশটিতে।
এ প্রসঙ্গে ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ সামরিক শক্তির সাথে মোকাবেলা করে দেশটি স্বাধীনতা অর্জন করেছে। পৃথিবীর মানচিত্রের তলানি থেকেও দেশটির বিশ্বের সেরা পুরস্কার নোবেল জয় করতে পেরেছে। তারা সামান্য পদ্মাসেতু নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ করতে পারে না-এ কথা আমি বিশ্বাস করি না।
তবে অর্থনীতির এই অধ্যাপক বিশ্বাস করেন, পদ্মাসেতু নির্মাণের আগে রাষ্ট্র যন্ত্রের স্বচ্ছতা, দেশপ্রেম ও জনস্বার্থ রক্ষার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া ব্যক্তিদের প্রকল্প পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪০ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০১৪