কুয়ালালামপুর: হুন্ডি একটি অবৈধ ব্যবসা। এর ফলে মালয়েশিয়াসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে প্রবাসীরা যে রেমিট্যান্স(প্রবাসে অর্জিত অর্থ) পাঠান, তার থেকে সরকার প্রত্যাশিত আয় পায় না।
মালয়েশিয়া থেকে দেশে হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাঠানো সর্ম্পকে এ অভিমত গ্লোবাল এয়ার ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা মজুমদার। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসের ৬ ও ৭ তারিখ কুয়ালালামপুরের মারদেকা স্কয়ার মিলনায়তনে বাংলাদেশি রেমিট্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ফেয়ার-২০১৪ এর আয়োজন করেছে গ্লোবাল এয়ার ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস।
সম্প্রতি মালয়েশিয়া ঘুরতে এসে মেলার বিভিন্ন দিক নিয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। হুন্ডি ছাড়াও, মালয়েশিয়ার সঙ্গে ব্যাবসায়িক সর্ম্পক, প্রবাসীদের জীবনের টানাপোড়েন, বীমাসহ নানা বিষয় উঠে আসে আলোচনায়।
ফারজানা বলেন, মালয়েশিয়ায় কয়েক লক্ষ বাংলাদেশি বসবাস করেন। পৃথিবীর যে পাচঁটি দেশ থেকে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আসে, তাদের একটি মালয়েশিয়া। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র ও কুয়েতের পরই মালয়েশিয়ার অবস্থান। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে মালয়েশিয়া থেকে এসেছে ১০৬ কোটি ৪৬ লাখ ডলার যা মোট রেমিট্যান্সের ৭ শতাংশ।
তিনি বলেন, শ্রমিকদের ঘামে আমাদের অর্থনীতির চাকা ঘোরে। ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও অনেকেই গোপনে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠায়। কিছু অসাধু ব্যক্তি এ অবৈধ ব্যবসা করছেন। দেশের প্রতি তাদের কোনো মায়া মমতা নেই।
ফারজানা বলেন, আমি মনেপ্রাণে হুন্ডি ব্যবসাকে ঘৃণা করি। হুন্ডির ফলে বিপুল পরিমাণ আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। আবার অনেকেই হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠাতে গিয়ে প্রতারিতও হয়েছেন।
যেখানে আমাদের বাংলাদেশের ব্যাংকগুলি মানুষের টাকার নিরাপত্তা দিচ্ছে, সেখানে প্রবাসী বাঙালি ভাই ও বোনরা কেন হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠান তা আমার বোধগম্য নয়। সামান্য লাভের আশায় প্রবাসীরা হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠাচ্ছেন। এতে সরকার লাখ লাখ টাকার রেমিট্যান্স থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। হুন্ডি প্রতিরোধে সকল প্রবাসীর এগিয়ে আসা উচিত। এই জন্য আমাদের প্রয়োজন সততা, নিষ্ঠা, দেশপ্রেম। আমাদের প্রবাসীদের সবাইকে সচেতন হতে হবে।
তিনি বলেন, সাধারণ শ্রমিকদের বোঝাতে হবে সঠিক পন্থায় টাকা পাঠালে কি লাভ। এ দায়িত্ব এখানকার শিক্ষিত মানুষ ও ব্যবসায়ীদের নিতে হবে।
রেমিট্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ফেয়ার সর্ম্পকে ফারজানা জানান, মেলায় বাংলাদেশের সবগুলো ব্যাংক যোগ দেবে। প্রবাসীরা যেহেতু ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠান, সেই ব্যাংকগুলো প্রবাসীদের বিভিন্ন ধরনের দিক নির্দেশনা দেবে।
তিনি বলেন, এই মেলার মাধ্যমে আমি মনে করি প্রবাসীদের মধ্যে দেশপ্রেম জাগ্রত হবে। একই সঙ্গে তারা হুন্ডিকে ঘৃণা করে ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা ছাড়বেন। তাছাড়া প্রবাসীরা একটু সচেতন হলে এই অবৈধ হুন্ডি ব্যবসাও দূর করা সম্ভব।
ফারজানা জানান, এই মেলাতে প্রবাসীদের জন্যে ব্যাংকগুলো বিভিন্ন ধরনের আকর্ষণীয় অফার দেবে। তাছাড়া ব্যাংকগুলো ইতিমধ্যে প্রবাসীদের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। প্রবাসীরা সুদ ছাড়া কি ভাবে লোন নিতে পারেন ব্যাংকগুলো সে পদেক্ষেপ হাতে নিয়েছে।
মেলাতে যোগ দিচ্ছে বাংলাদেশের ব্যাংক, বিমা, কোম্পানি, লিজিং কোম্পানি, আবাসন প্রতিষ্ঠান, ওষুধ কোম্পানি, বিমান সংস্থা ও গার্মেন্ট। মেলাতে প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্তাব্যক্তিরা সরাসরি উপস্থিত থেকে তাদের পণ্য ও সেবা সর্ম্পকে মালয়েশিয়া প্রবাসীদের ধারণা দেবে। তাছাড়া প্রবাসীদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে বাংলাদেশের বিমা কোম্পানিগুলো এই মেলাতে অংশগ্রহণ করছে।
ফারজানা বলেন, উন্নয়নে মালয়েশিয়া বর্তমানে সারা বিশ্বের মডেল। আর এর পেছনে রয়েছে আমাদের প্রবাসী ভাই-বোনদের ঘামে ভেজা শ্রম।
আমাদের শ্রমিক ভাইয়েরা বছরের পর বছর কাজ করে যাচ্ছে, দেশে টাকা পাঠাচ্ছে। এভাবে কোন ফাঁকে জীবনটাই শেষ হয়ে যায় সেই দিকে কোনো খেয়াল নাই। শেষ জীবনে দেশে যখন ফিরে আসে তখন তাদের হাতে টাকা থাকে না।
আমরা পত্র পত্রিকায় দেখি অনেক সময় কোনো শ্রমিক ভাই মারা গেলে প্রবাসীরা চাঁদা তুলে দেশে লাশ পাঠান। অথচ ওই শ্রমিকের বীমা থাকলে, ইন্সুরেন্স কভারেজ পেতেন তিনি। এসব দিক বিবেচনা করে এই মেলাতে বিমা কোম্পানিগুলোর বিশেষ ভূমিকা থাকবে বলে জানান ফারজানা।
মালয়েশিয়াতে এ ধরনের মেলা আয়োজনের লক্ষ্য হিসেবে তিনি আরো বলেন, মূলত আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আরো জোরদার করা।
মালয়েশিয়া বসবাসরত সকল বাংলাদেশীদের সঙ্গে দেশের ব্যাংক, বিমা কোম্পানি, লিজিং কোম্পানি, রিয়েল এস্টেট কোম্পানি, ওষুধ কোম্পানি বিমান সংস্থা ও গার্মেন্ট কোম্পানির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া। তাদের পণ্য এবং সেবা সম্পর্কে ধারণা দেওয়া। যাতে মালয়েশিয়ায় বসবাসরত সকল বাংলাদেশি এই সেবা গ্রহণ করতে পারেন। একই সঙ্গে অবশ্যই বাংলাদেশের রেমিট্যান্স খাতকেও আরো বিকশিত ও সমৃদ্ধ করা।
তিনি আরো বলেন, মালয়েশিয়া পর্যটনের দেশ। বাংলাদেশিরা কিভাবে মালয়েশিয়ায় কম খরচে সেবা নিতে পারেন সেই বিষয়ে আমাদের এই মেলাতে বিভিন্ন তথ্য থাকবে।
মালয়েশিয়ায় অনেক বড় বড় ব্যবসায়ী বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে চান। তারা যাতে সঠিক খাতে সঠিক বিনিয়োগ করতে পারেন, মেলাতে সেই বিষয়েও ধারণা ও হালফিল তথ্য দেওয়া হয়।
তিনি জানান, ইতিমধ্যে মেলার সব আয়োজন প্রায় চূড়ান্ত। মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মো. আব্দুল মান্নান, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী ও মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার এ কে এম আতিকুর রহমান।
মালয়েশিয়ার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অনুমোদিত রেমিট্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ফেয়ার এর মালয়েশিয়ার ব্যবস্থাপনায় রয়েছে একুশে হলিডেজ।
বাংলাদেশ সময় ১৮১৪ ঘন্টা, আগষ্ট ৩, ২০১৪