পেনাং, মালয়েশিয়া থেকে: সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর হোসেন। ১৯৯৭ সালের জুলাই থেকে মালয়েশিয়ায় আছেন তিনি।
পেনাংয়ে ‘নাসি কান্দার নাসিফ’ রেস্তোরাঁ এবং জাহাঙ্গীরকে চেনে না এমন বাংলাদেশি বা স্থানীয় ভিন্ন জাতির মানুষও খুঁজে পাওয়া কঠিন।
বাতু ফিরিঙ্গি থেকে বাসে উঠে এক বাংলাদেশি ভাইকে পেয়ে বললাম, টেসকোতে জাহাঙ্গীর ভাইয়ের দোকানে যাবো। মুহূর্তেই দোকান এবং জাহাঙ্গীরের ওপর ছোটখাটো একটা লেকচারই দিয়ে দিলেন ওই বাসযাত্রী।
শুধু রেস্তোরাঁ নয়, ৩৫ হাজার হাঁসের একটি ফার্মও রয়েছে তার। পেনাংয়ের অধিকাংশ হোটেলেই জাহাঙ্গীরের নিয়োগ দেওয়া কর্মচারী রয়েছেন।
বৃহস্পতিবার পেনাংয়ের টেসকো ফুড কোর্টে নাসি কান্দার নাসিফে কথা হয় জাহাঙ্গীরের সঙ্গে।
বাংলানিউজকে তিনি জানান, নিকট ভবিষ্যতে অষ্ট্রেলিয়াতেও নাসি কান্দার ব্রাঞ্চ নিয়ে যাবেন তিনি। পেনাংয়ের বুকিত জাম্বুল এবং পাতিস পার্কে রয়েছে শাখা। এছাড়া আগামী বছরের মধ্যেই আরো ৭টি শাখা মালয়েশিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে খুলবেন। আর এসব রেস্তোরাঁয় কাজ করবেন বাংলাদেশিরাই।
মালয়েশিয়াতে বাংলাদেশিদের ব্যবসায়িক সাফল্যের জন্যে তিনি বলেন, পরিশ্রম করতে হবে। এখানে অর্থ অপচয়ের প্রচুর জায়গা রয়েছে। সেখান থেকে নিজেদের দূরে রাখতে হবে। কাজকেই প্রাধান্য দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমরা এখানে অর্থ উপার্জন করতে এসেছি।
মালয়েশিয়াতে বাংলাদেশিদের ভাবমূর্তি নিয়ে জাহাঙ্গীর বলেন, এখানে বাংলাদেশিরা নিজেরা নিজেদের ক্ষতি করে। যারা কোনো কাজ করে না, তারাই এসব বেশি করে। আমরা যদি নিজেদের উন্নতি করতে না পারি, তবে ভিনদেশিরা আমাদের মূল্যায়ন করবে না। যোগ্যতা এবং অর্থ উপার্জনের মাধ্যমেই নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
তিনি বলেন, আমার অনেক মালয় কর্মচারী রয়েছে, তারা বাংলাদেশিদের ‘বাংলা’ বলে যেমন ঠাট্টা করছে, আবার আমাকে দেখে ‘বস’ সম্বোধন করে রাস্তাও ছেড়ে দিচ্ছে। তাই আমাদের নিজেদেরই নিজেদের ভাগ্য বদল করতে হবে।
আলাপচারিতায় এই সফল প্রবাসী বলেন, এখানে ছোট ছোট অনেক বাংলাদেশি ব্যবসায়ী রয়েছেন। আমি তাদের সবসময় উৎসাহ দেই। বলি, আরো বড় হতে হবে।
তিনি বলেন, মালয়েশিয়াতে আয় রয়েছে। পেনাংয়ে যদি কেউ রাস্তায় দাঁড়িয়ে পানিও বিক্রি করে দিনে ৫০রিঙ্গিত (১২৫০ টাকা) ব্যবসা করতে পারবে। তবে সবসময় চেষ্টায় থাকবে হবে। নিজেকে গতিশীল রাখতে হবে।
২০০৫ সালে স্থানীয় মালয় নারীকে বিয়ে করে জাহাঙ্গীর এখন নিজেও এখানকার নাগরিক। স্থানীয় মেয়ের সঙ্গে বিয়ে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখানে ভালো খারাপ সবই আছে। আমাদের বাংলাদেশি ছেলেদের পেছনে বেশি ঘুরঘুর করে ইন্দোনেশিয়ান মেয়েরা। অনেকেই এর খপ্পরে পড়ে ফতুরও হয়ে গিয়েছে। অনেক ভেবে চিন্তেই বিয়ের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
নিজের রেস্তোরাঁ নিয়ে গর্ব করেন জাহাঙ্গীরের। বলেন, আমি খাবারের মানের বিষয়ে সতর্ক থাকি। এখানে যে একবার এসেছে তাকে আবারো আসতে হয় খাওয়ার জন্যে। তাই বাংলাদেশি পর্যটকরা পেনাংয়ে এলে, এখানে একবার ঘুরে যান।
জন্মস্থান ধুবলি গ্রামের মানুষকেও মালয়েশিয়াতে এনে স্বাবলম্বী করেছেন জাহাঙ্গীর। বলেন, আমার গ্রামের অন্তত একশ মানুষ এখন মালয়েশিয়াতে আছে। এদেরকে বিভিন্ন ফাইভ স্টার হোটেল এবং রেস্তোরাঁয় কাজের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। অনেকে নিজেই এখন ব্যবসা করছে। এখানে ৬০ টি আবাসিক হোটেলে আমার নিয়োগ দেওয়া মানুষ রয়েছে।
ভাই, ভাইপো, ভাগ্নেসহ জাহাঙ্গীরের পরিবারেরই ২০ সদস্য বর্তমানে মালয়েশিয়াতে রয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, গ্রামের বাড়িতে শুধু মা-ই আছেন।
নিজের মালয়েশিয়া জীবন সর্ম্পকে জাহাঙ্গীর বলেন, এখানে আমি পরিশ্রম করেছি এবং করছি। আমার কর্মচারীরা এখানে ছুটি কাটায়, আমি কাটাই না। কোনো কাজকে ছোট করে দেখিনি। নিজে পরিশ্রম করেছি বলেই চাই অন্যরাও পরিশ্রম করুক।
দেশের মানুষের জন্যে কর্মস্থল সৃষ্টির ইচ্ছে রয়েছে জাহাঙ্গীরের।
বাংলানিউজকে জানালেন, ভূঁইয়াগাজীতে একটি গ্যাস পাম্প এবং তার পাশেই একটি গার্মেন্টস খোলার ইচ্ছের কথা। জাহাঙ্গীর জানান, পেনাংয়ে বর্তমানে সাড়ে ৩ থেকে ৪ লাখ বাংলাদেশি আছেন। যাদের বেশির ভাগই নির্মাণ কাজে জড়িত। তিনি বলেন, এসব বাংলাদেশিদের চেষ্টা থাকতে হবে, নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার। যেন শ্রমিকের ছেলেকেও শ্রমিক না হতে হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১১২৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৪, ২০১৪