কুয়ালালামপুর থেকে: একদিন পর কোরবানির ঈদ। অথচ একটি গরুও চোখে পড়লো না! বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিষয়টা অকল্পনীয় হলেও, মালয়েশিয়াতে এ প্রথাতেই রোববার পালিত হবে কোরবানির ঈদ।
কোরবানির ঈদের আমেজ এখানে দেখা যায় না। শনিবার থেকে ঈদের ছুটি শুরু হলেও বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানই খোলা রয়েছে। আবার শনি-রবি দুদিন সাপ্তাহিক ছুটি হওয়াতে ঈদের ছুটি বলতে বাড়তি শুধু সোমবার।
গ্রামগঞ্জেতো বটেই, আমাদের রাজধানী ঢাকাও এখন কোরবানির পশুর নগরী হয়ে উঠেছে। রাস্তায় কোরবানির পশু নিয়ে দৌড়ঝাঁপ, শিশু থেকে বুড়োদেরও মাতামাতি কোরবানির ঈদকে আমাদের কাছে করেছে অনন্য।
মাত্র শুক্রবার পেনাং থেকে ঘুরে এলাম। পেনাং বা কুয়ালালামপুর কোথাও একটাও কোরবানির পশু চোখে পড়লো না। দৌড়াদৌড়িতো আশাই করা যায় না। বরং তামিল অধ্যুষিত বাজারগুলোতে পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজার আমেজ পাওয়া যায় কিছুটা।
মালয়েশিয়াতে মূলত কোরবানি দেয়া হয় মসজিদ ভিত্তিক। ঈদের দুই বা তিন মাস আগে থেকেই মসজিদ থেকে নির্ধারণ করে দেয়া হয় কোরবানির মূল্য। যারা কোরবানিতে অংশিদারিত্ব নেবেন তারা ওই মূল্য পরিশোধ করে টোকেন নেন অথবা নাম লিখিয়ে নেন।
যেমন- মালয়েশিয়ায় প্রবাসী দেলোয়ার ৪৫০ রিঙ্গিতে এক নাম দিয়েছেন কোরবানিতে। দুই নাম দিতে চাইলে ৯০০ রিঙ্গিত দিতে হতো।
এছাড়াও এলাকার গরীব-মিসকিনদের একটি তালিকা তৈরি করে মসজিদ। অথবা তাদের একটি টোকেন দেয়া হয়। আবার যারা ঈদের দিন গরু জবাই থেকে শুরু করে মাংসকাটায় কাজ করবে, তাদেরকেও ভিন্ন রংয়ের টোকেন দেয়া হয়।
প্রবাসী বাংলাদেশি তৌহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, যদি একটি মসজিদে ৮ থেকে ১০টি গরু কোরবানি দেয়া হয়, তবে সব মাংস একসঙ্গে জড়ো করা হয়। মসজিদের প্রাঙ্গণেই নির্দিষ্ট স্থানে গরু জবাই এবং মাংস কাটা সম্পন্ন হয়। মসজিদ থেকেই মাংসকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। গরীবদের ভাগ, কাজ করা মানুষদের ভাগ সেখানেই দিয়ে দেয়া হয়। যারা অর্থ দিয়ে ভাগ নাম দিয়েছে তারাও প্রায় একই পরিমাণ মাংস পান, যা তিন বা চার কেজির বেশি হয় না।
আবার অনেক পরিবার আছে যারা নিজেরা একা কোরবানি দেয় বা কয়েকটি পরিবার মিলে কোরবানি দেয়। এদেশে গরুর হাট নেই। ফার্মে গিয়ে আগে থেকে গরু বুকিং দিয়ে আসতে হয়। এরপর ঈদের সকালে ফার্ম থেকেই পশু জবাই ও মাংস কাটিয়ে আনা হয়। অথবা ঈদের দিন ভোরে বাড়িতে গরু এবং কসাই দিয়ে যায় ফার্ম কর্তৃপক্ষ।
এখানে রোববার ঈদ, আর বাংলাদেশে সোমবার। দেশের রাজপথগুলো থেকে শুরু করে শহরের অলিগলি এখন কোরবানির পশুর দখলে। আবাসিক এলাকাগুলো গ্যারেজে এখন গরু, ছাগল বা খাসি বাঁধা। আর এখানে আবাসিক এলকাগুলোতে তার কোন ছোঁয়াই নেই।
অবশ্য অনেকেই জানান, এখানে মুসলিম ছাড়াও অর্ধেক জনগোষ্ঠী বৌদ্ধ ও হিন্দু। এ কারণেও ঘটা করে কোরবানি দেয়া সম্ভব হয় না। আর অর্ধেক জনগোষ্ঠী যখন এ উৎসবের বাইরে, সেটাতো সাদামাটা হওয়াই স্বাভাবিক।
এখানে কোরবানির পশু শুধু গরু। খাসি বা উট নেই। দেশের ধনী ব্যক্তিদের তরফে আর সরকার থেকে মসজিদগুলোতে গরু দেয়া হচ্ছে কোরবানির জন্যে।
এমনিতেই আলো ঝলমলে কুয়ালালামপুর শহর। তবে 'সেলামাত হারি রায়া মালয়েশিয়া'র শুভেচ্ছা জানিয়ে বিভিন্ন স্থানে আলোকসজ্জা করেছে সরকার।
এখানে ঈদুল ফিতরের হারি রায়াকেই বেশি জাকজমকপূর্ণভাবে পালন করা হয়। সে তুলনায় ঈদুল আজহার উৎসব কিছুটা কম।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ৪, ২০১৪