কুয়ালালামপুর থেকে: বাংলাদেশ মালয়েশিয়া স্টুডেন্ট সেন্টারের মুকুলের মতোই মালয়েশিয়ায় শিক্ষার্থীদের কাছে আর একজন প্রতারক হলেন নাহার গ্রুপের এস এম শাহরিয়ার আখলাক।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মিথ্যা ছবি প্রদর্শন করে ও পার্ট টাইম জবের মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে কয়েক লক্ষ টাকা করে হাতিয়ে নিচ্ছেন আখলাক।
মালয়েশিয়ার পুচংয়ের বাইনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র বাংলানিউজের কাছে অভিযোগ করেন, বাইনারি বিশ্ববিদ্যালয়কে মালয়েশিয়ার একটি সেরা বিশ্ববিদ্যালয় বলে পরিচিতি দিয়েছিলেন আখলাক। ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যেসব ছবি দেখান, মনে হচ্ছিল সত্যি আমি কোনো পৃথিবী সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাচ্ছি।
কিন্তু বাইনারি বিশ্ববিদ্যালয় যে ক্যাম্পাসের ছবি ও পরিচিতি দিয়েছেন আখলাক, এখানে এসে দেখি তা নয়, আইওআই মলের একটি কর্নার ভাড়া করে চলছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।
শাহরিয়ার আখলাক তার অফিসে যাওয়া শিক্ষার্থীদের প্রলোভন দেখান, মালয়েশিয়ায় পড়াশোনার পাশাপাশি পার্টটাইম কাজের সুবিধা রয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা এখানে ভিন্ন। মালয়েশিয়া সরকারের পক্ষ থেকেই নেই কোনো পার্ট টাইম কাজের সুযোগও।
আখলাকের কথার ওপর ভরসা করে বাইনারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে পড়তে আসেন ঢাকার ছেলে ফাহিম আফসার।
প্রথমবার মেডিকেল চেক-আপে ধরা খেলেও দ্বিতীয়বার উৎরে যান ফাহিম। এই শিক্ষার্থীর কাছে ইউনাইটেড এয়ারের ওয়ান ওয়ে টিকেট বিক্রি করেন তিনি ৩৬ হাজার টাকায়।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, নাহার ট্রাভেল থেকে বিমানের টিকেট না কিনলে পরবর্তীতে আর সহযোগিতা করেন না শাহরিয়ার আখলাক। আর প্রথম কিস্তির টাকা নেয়ার পর থেকে আচরণ পাল্টে যেতে থাকে আখলাকের। ফোন দিলে ধরেন না। বিরক্ত হওয়ার ভাব দেখান।
দেশে শিক্ষার্থীদের প্রলোভন দেখান, মাসে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব পার্টটাইম কাজ করে। কিন্তু ফাহিম এখানে এসে দেখেন বাস্তবতা ভিন্ন। সবমিলিয়ে প্রায় ৫ লক্ষ টাকা ব্যয় করে মালয়েশিয়া এসেছিলেন ফাহিম। গত আগস্টে ভগ্ন মনোরথে দেশে ফিরে যান তিনি।
আরেক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, অতিরিক্ত টিউশন ফি নেয়ার বিষয়ে। টিউশন ফি ১৫ হাজার রিঙ্গিত (বাংলাদেশি টাকায় ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা) হলেও তার কাছ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা আদায় করেন আখলাক।
এডুকেশন মালয়েশিয়া গভ:মেন্ট সার্ভিসের (ইএমজিএস) ফি ২৫ হাজার টাকা হলেও এই শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ৭৫ হাজার টাকা আদায় করেছেন আখলাক। শুধু তাই নয়, বিমানের ওয়ান ওয়ে টিকেট বিক্রি করেছেন ২৫ হাজার টাকায়।
মালয়েশিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজারের ওপর শিক্ষার্থী রয়েছেন, যারা আখলাকের প্রতারণার শিকার।
অভিযোগকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, অনেকেই প্রতারণার শিকার হয়েও প্রকাশ করে না, লজ্জা পান। আবার অনেকে ভাবেন, বলে আর কি হবে! তাই এসব প্রকাশ হয় না।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এস এম শাহরিয়ার আখলাক বৃহস্পতিবার সকালে বাংলানিউজকে বলেন, ফাহিম আফসার সম্ভবত নেশায় আশক্ত ছিলেন। তবে আমার মায়ের সহকর্মীর ছেলে হওয়াতে কাজটি আমি করেছিলাম।
অতিরিক্ত টিউশন ফি'র বিষয়ে তিনি বলেন, এটি ব্যাংকের মাধ্যমে হয়। সিলন ব্যাংকের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা টিউশন ফি জমা দেয়।
তবে এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ব্যাংকের সঙ্গেই আখলাকের চুক্তি থাকে অর্থ সরানোর।
পার্ট টাইম জবের প্রলোভনের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি জাহাঙ্গীরনগর থেকে মাস্টার্স করেছি এবং এক্স ক্যাডেট। আমাকে অন্যদের সঙ্গে মেলালে চলবে না।
শিক্ষার্থীদের এ ধরনের প্রলোভন দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।
বাইনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এবং ইউনাইটেড এয়ারের ভাড়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে বিষয়টি এড়িয়ে যান আখলাক।
বাংলাদেশ সময় ১৩০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ৯, ২০১৪