ঢাকা, বুধবার, ২৮ কার্তিক ১৪৩১, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মালয়েশিয়া

‘তিনি এখন মালিন্দোর রেজা ভাই’

মাজেদুল নয়ন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০১৪
‘তিনি এখন মালিন্দোর রেজা ভাই’ ছবি : কাশেম হারুন/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: ছাত্ররাজনীতিতে ছিলো তার সক্রিয় অংশগ্রহণ। রাজনৈতিক কারণেই নব্বই দশকের প্রথম ভাগে দেশ ছেড়ে চলে যান মালয়েশিয়ায়।

আর এই মালয়েশিয়াই ঘুরিয়ে দেয় তার ভাগ্যের চাকা।

তিনি মালিন্দো এয়ারের ডিরেক্টর (মার্কেটিং) এম রেজাউল করিম রেজা। রাজনৈতিক পরিচয়ে মালয়েশিয়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তবে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কমিউনিটিতে মালিন্দোর রেজা ভাই নামেই পরিচিতি তার। সম্প্রতি ঢাকায় তার কাকরাইলের বাসায় বসে বাংলানিউজের মুখোমুখি হন তিনি।
 
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালে ছাত্র মৈত্রীর রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন রেজা। ছাত্র শিবিরের সঙ্গে দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও বিএনপির সময়কালে রাজনৈতিক মামলার হয়রানিতে এক সময় দেশ ছাড়তে বাধ্য হন তিনি।
১৯৯৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রথমবারের মতো পাড়ি জমান ‍দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার মালয়েশিয়ায়।
প্রথম ৪ মাস ঘুরেফিরেই কাটান। সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ঘোরেন, মালয়েশিয়ার বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরে ঘুরে দেখেন। নতুন নতুন বন্ধু হয়, অনেকের সঙ্গে পরিচিত হন।
 
বছর ঘুরলে একটি জাপানি মালিকানাধীন কোম্পানিতে চাকরি হয় রেজার। তবে ৩ মাস ২২ দিন চাকরি করার পর ওই কোম্পানি জানিয়ে দেয়, দুঃখিত! বাংলাদেশি পাসপোর্টে ভিসা দেবে না জাপানি কোম্পানি।
 
এরপর ধীরে ধীরে ব্যবসা জমানোর সংগ্রাম শুরু হয় তার।

রেজা বলেন, একটা রুম ভাড়া নিই। দেশ থেকে প্রথমবারের মতো গার্মেন্টসের এক লট কাপড় নিয়ে আসি। এটা ১৯৯৫ সালের ঘটনা। প্রথমবার শুধু গেঞ্জি আনি। এখানকার কাপড় ব্যবসায়ীরা বেশ আগ্রহের সঙ্গেই বাংলাদেশি কাপড় নেয়। আর দামটাও ছিল তাদের হাতের নাগালে। একই সঙ্গে মালয়েশিয়ান কোম্পানিগুলোতে মানবসম্পদ নিয়োগের অর্ডারও পেয়ে যান তিনি। এরপর আর ঘুরে তাকাতে হয়নি রেজাকে।
 
এর মধ্যেই ২০০৬ সালে দেশে এসে বিয়ে করেন পার্শ্ববর্তী জেলা যশোরে। মালয়েশিয়াতেই জন্ম নেয় বড় ছেলে জারজিস। এখন জারজিসের বয়স ৮ বছর, আর ছোটো ছেলে জাওয়াদের বয়স ৫ বছর।

মাগুরা জেলার মৌসুমী ব্যবসায়ী বাবার ৩ ছেলে ও ২ বোনের মধ্যে সবার বড় রেজা। ছোটো ছেলে হওয়ার পর থেকে মালয়েশিয়ার চেয়ে এখন ঢাকাতেই বেশি সময় থাকেন তিনি।
 
এভিয়েশন সম্পর্কে ধারণা কম ছিল রেজাউল করিমের। তবে ২০০৮ সালের দিকে ঠিকই এয়ার এশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করেন বাংলাদেশে ব্যাবসা শুরুর। শেষ পর্যন্ত খাপে খাপ মিললো না। কিছু অসঙ্গতির জন্য এয়ার এশিয়া আর স্থায়ী হলো না বাংলাদেশে।
 
২০১৩ সালের এপ্রিলের কথা। এক মালয় বন্ধুর মাধ্যমে রেজা জানতে পারেন মালিন্দো এয়ার নামে নতুন একটি বিমান কোম্পানি ফ্লাইট চালু করেছে মালয়েশিয়াতে। দেখা গেলো, মালিন্দোর যিনি চিফ এক্সকিউটিভ অফিসার, তিনি এক সময় এয়ার এশিয়াতেও কর্মরত ছিলেন। কথা বার্তা চললো।
 
রেজা বলেন, আমার তখনো এভিয়েশন সম্পর্কে ধারণা ছিল না। মালিন্দো থেকে আমাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, সরকারের অনুমতি নিতে কতদিন লাগবে। আমি আন্দাজের ওপর বলে দিলাম, ১৫ দিন থেকে এক মাস। পরে অবশ্য জেনেছিলাম, এটা ৬ মাসের আগে হয় না। ওরা আমাকে অবশ্য বলেছিল, ভারতে ৪ মাস সময় গেছে। অনুমতির জন্যে কাগজপত্র জমা দেয়া হয়েছে। অনুমতি মেলেনি।
 
তবে ভারতেই আগেই ঢাকায় ফ্লাইট চালু হয় মালিন্দোর। ২০১৩ এর ২৮ জুলাই মিডিয়া লঞ্চিং হয় রুপসী বাংলায়। এ সময় কোম্পানির চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার চন্ডন রামা মূর্তি উপস্থিত ছিলেন। সেদিন থেকেই ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে মালিন্দো উড়াল দেয়। ভারতে ১০ নভেম্বর থেকে চালু হয়েছিল মালিন্দো। মালয়েশিয়া-ইন্দোনেশিয়ার পর প্রথম আর্ন্তজাতিক ফ্লাইট উড়ে ঢাকাতেই।
 
ঢাকায় মালিন্দোর ভ্রমণ সর্ম্পকে এই জিএসএ বলেন, বেশি ভাড়ায় চলছিল ঢাকা টু কেএল রুটে বিভিন্ন এয়ারলাইনসের ফ্লাইটগুলো। তবে মালিন্দো আসার পর খেয়াল করে দেখবেন, এখন আর কারো আসা-যাওয়া ভাড়া ৩০ হাজার টাকার ওপর নেই। আমরাই প্রথম এই রুটে ভাড়া কমানোর প্রতিযোগিতা নিয়ে আসি।
 
তিনি বলেন, এছাড়াও আমাদের রিটার্ন টিকেটই বেশি। পর্যটকদের বেশিরভাগেরই এখন পছন্দ মালিন্দো। কারন ২০০ সিটের প্লেনে আমরা ১৬০ সীট রেখেছি। যাতে মানুষ আরাম করে বসতে পারে। ইন-ফ্লাইট এনটারটেইনমেন্ট রয়েছে।
 
মালিন্দোর ঢাকা-কেএল ফ্লাইটে এখন বেশ ভারি খাবার দেয়া হয়।

রেজা বলেন, আগে খুবই হালকা খাবার দেয়া হতো। আমি বললাম, আমাদের দেশে অনেকে ঢাকার বাইরে থেকে এয়ারপোর্টে আসেন। তারওপর ৩-৪ ঘণ্টা আগে এয়ারপোর্টে আসেন। আবার প্লেনে ৪ ঘণ্টার জার্নি। এ কারণে কর্তৃপক্ষকে বলেছিলাম, ভাড়া ১ হাজার টাকা বেশি নিলেও খাবার দেয়ার ব্যাবস্থা করেন। এখন বেশ ভাল খাবার সরবরাহ করা হয়।
 
সবশেষে আবারো উঠলো রাজনীতি প্রসঙ্গ। মালয়েশিয়াতে আওয়ামী লীগের রাজনীতি সম্পর্কে  তিনি বলেন, মালয়েশিয়াতে মুক্তিযুদ্ধের শক্তিকে প্রতিষ্ঠিত করতে আমাদের অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। মালয়েশিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে গিয়ে দলের কর্মী সংগ্রহ করেছি। আমরা বেশ খারাপ সময়ও পার করেছি। দেশের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েছি মালয়েশিয়াতে।
 
রেজা বলেন, ২০০৩ সালের ২৫ জুলাই মালয়েশিয়া আওয়ামী লীগের কমিটি অনুমোদন দেয়া হয় ঢাকা থেকে। সেটিই এখন পর্যন্ত বৈধ কমিটি এবং ওই কমিটির সাধারণ সম্পাদক আমি। কারণ এরপর ওয়ান-ইলেভেনে নিয়ম করা হয়, প্রবাসে বাংলাদেশিদের কোনো রাজনৈতিক দলের শাখা থকাতে পারবে না। ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মালয়েশিয়া গিয়ে আমাদের কমিটির সভাতেই যোগ দিয়েছিলেন।
 
মালয়েশিয়াতে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একসময় বামপন্থি রাজনীতিতে যুক্ত ছিলাম এবং পরিবারও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী। যেহেতু মালয়েশিয়ায় বামপন্থি রাজনীতির কোনো প্লাটফর্ম নেই, তাই মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি আওয়ামী লীগেই যোগ দেই। আওয়ামী লীগের নেত‍াদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতাও বেড়েছে, আন্তরিকতার সর্ম্পক তৈরি হয়েছে দেশে।
 
আগামী ২ ডিসেম্বর মালয়েশিয়া যাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে সময় একটি অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা রয়েছে রেজাউল করিম রেজার। সেটি নিয়েই এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তিনি।
 
বাংলাদেশ সময়: ১২৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মালয়েশিয়া এর সর্বশেষ