ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মালয়েশিয়া

মালয়েশিয়ার এফটিএমএস কলেজের ফাঁদে বাংলাদেশিরা

মাজেদুল নয়ন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০১৪
মালয়েশিয়ার এফটিএমএস কলেজের ফাঁদে বাংলাদেশিরা ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কুয়ালালামপুর থেকে ফিরে: কোচিং সেন্টার থেকে কলেজে পরিণত হয়েছে মালয়েশিয়ার এফটিএমএস কলেজ। আর এখন ব্যবসা করছে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের নিয়েই।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এ প্রতারণায় এফটিএমএস কলেজকে সহযোগিতা করছে বাংলাদেশ মালয়েশিয়া স্টাডি সেন্টার, উইংস গ্লোবাল কনসালট্যান্ট, এইচটি গ্লোবাল লিমিটেড, প্রমিনেন্ট কনসালট্যান্সিসহ আরো বেশ কিছু বাংলাদেশি কনসালট্যান্ট প্রতিষ্ঠান।
 
কুয়ালালামপুরের জালান হাং কাস্তুরির ২৪-৩০ ঠিকানায় একটি ভবন ভাড়া নিয়ে চলছে কলেজটির সিটি ক্যাম্পাস এবং বুকিত জলিলে একটি ভবনের দুটি ফ্লোরের কিছু অংশ নিয়ে চলছে আরেকটি ক্যাম্পাস।
 
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এক সময় কোচিং সেন্টার হিসেবে চলতো এই প্রতিষ্ঠানটি। এখানে ইংরেজি ভাষা শিক্ষা কোর্স ও বিভিন্ন বিষয়ে ট্রেনিং দেয়া হতো এবং ফাউন্ডেশন কোর্স পরিচালনা করা হতো। তবে ব্যবসায় উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে কোচিং সেন্টারটি কলেজ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে কলেজটি মালয়েশিয়ার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নজরদারিতে রয়েছে বেশ কয়েক বছর ধরেই।
 
মূলত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের টার্গেট করেই প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে এফটিএমএস কলেজ। শিক্ষার্থীদের মিথ্যা তথ্য দিয়ে কলেজে ভর্তি করায় বাংলাদেশের দালালরা।
 
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রুমেলকে (ছদ্মনাম) মিথ্যা তথ্য দিয়ে এ কলেজে পাঠায় বাংলাদেশের একটি স্টুডেন্ট এজেন্সি। রুমেলকে বিবিএ’তে ভর্তি করা হলেও কলেজে গিয়ে দেখেন তিনি ইংরেজির ডিপ্লোমা কোর্সের শিক্ষার্থী। আড়াই লাখ টাকা দিয়ে তিনি প্রথম বছরের ভিসা পান।
 
ওই শিক্ষার্থী বাংলানিউজকে বলেন, প্রথম বছরের ভিসা হলেও পরে আরো ৭ হাজার রিঙ্গিতের বিনিময়ে দ্বিতীয় বছরের ভিসা করাতে হয়। আর টাকা দিতে দেরি হলে ভিসা না দিয়ে পাসপোর্ট আটকে রাখে কলেজ কর্তৃপক্ষ।
 
মোট ৫টি বিভাগ রয়েছে এফটিএমএস কলেজে। এগুলো হলো- ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কম্পিউটারিং, একাউন্টিং অ্যান্ড বিজনেস, প্রফেসনাল একাউন্টিং, হসপিটাল অ্যান্ড ট্যুরিস্ট ম্যানেজমেন্ট এবং ইংরেজি।   
 
এসব বিভাগে অনার্স কোর্স চালু থাকলেও শিক্ষার্থী রয়েছে বেশি ডিপ্লোমা কোর্সে। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, নেপাল, ইন্দোনেশিয়া ও আফ্রিকান শিক্ষার্থীদের দিয়ে ব্যবসা চালাচ্ছে কলেজটি। এখানে মূলত কলেজের অধীনে ভিসা করে পার্ট টাইম জবের নামে অবৈধ কাজ করে কলেজকেই সেই টাকা দিতে হয় শিক্ষার্থীদের।
 
মালয়েশিয়াতে বৈধভাবে পার্টটাইম কাজের কোনো সুযোগ নেই। কিছু সেক্টরে সপ্তাহে বিশ ঘণ্টা কাজের সুযোগ দেয়া হয়। তবে সেগুলো সবই নিম্নমানের কাজ। এ থেকে শিক্ষার্থীরা মাসে ৮০০ থেকে সর্বোচ্চ এক হাজার রিঙ্গিত পর্যন্ত আয় করতে পারেন। এভাবেই বছর শেষে ৭ থেকে ৮ হাজার রিঙ্গিত জমা দিতে হয় কলেজে। আর এই আয়ই হচ্ছে কলেজটির ব্যবসা।
 
সালাম (ছদ্মনাম) নামে এক শিক্ষার্থী বাংলানিউজকে বলেন, এখানকার পুলিশও এফটিএমএস এর বিষয়টি জানে। তাই পুলিশ চেক করলে কলেজের পরিচয়পত্র দেখালেও কাজ হয় না। পুলিশ বলে, ওই কলেজে শিক্ষার্থীর নামে বাংলাদেশিরা কাজ করতেই আসে।
 
দৈনিক ১২ ঘণ্টা কাজ করে শিক্ষার্থীরা যে অর্থ আয় করে তা দিতে হয় এফটিএমএস কলেজকে। আবার কোনো শিক্ষার্থী যদি কলেজকে টাকা না দিয়ে পালিয়ে যায়, তবে কলেজের দালালরা আবার সেই শিক্ষার্থীকে ধরিয়ে দেয় পুলিশের কাছে। এখান থেকেও দালালরা একটি আর্থিক ভাগ পায় পুলিশ ও কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে।
 
এফটিএমএস কলেজের বিষয়ে বাংলাদেশ মালয়েশিয়া স্টাডি সেন্টারের আব্দুর রহিম খান মুকুলের কাছে জানতে চাইলে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, এফটিএমএস’এর কিছু বিষয় আছে ভাল। ডিপ্লোমা বেশি ভাল নয়। সেসব বিষয়ে ভর্তি না হওয়া ভাল।

এই কলেজটিতে আপনি শিক্ষার্থী পাঠান কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগে পাঠিয়েছি, এখন আর পাঠাই না।

উইংস গ্লোবাল কনসালট্যান্টের কার্যালয়ে ফোন দিলেও কেউ রিসিভ করেন নি।
 
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এ সব কনসালট্যান্সি ফার্মের কথায় বিশ্বাস করে ধ্বংস হচ্ছে অনেকের শিক্ষাজীবন। মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীরা পার্টটাইম জবের আশায় পুরো পরিবারকে নিঃশ্ব করে দিয়ে আসেন মালয়েশিয়ায়। এক সময় শিক্ষার্থীর পড়াশোনা এবং জীবন দুটোই নিঃশ্ব হয়ে পড়ে।
 
এইচটি গ্লোবাল কনসালট্যান্সি, প্রমিনেন্ট কনসালট্যান্সি এবং ভিসা ওয়ার্ল্ড ওয়াইড এডমিশন কনসালট্যান্সি ফার্ম তিনটি কলেজটিতে শিক্ষার্থীদের আগ্রহী করে তুলতে প্রতিষ্ঠানটির ভর্তি বিভাগের প্রধান আজহারি বিন ওমরকে গত শুক্রবার ঢাকায় নিয়ে এসেছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মালয়েশিয়া এর সর্বশেষ