কুয়ালালামপুর থেকে: মিশ্র জাতির দেশ মালয়েশিয়া। এখানে নিজেকে প্রমাণ করার জন্যে মালয় নাগরিকদেরকেও পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখতে হয়।
আধুনিক মালয়েশিয়া বিনির্মাণে বাংলাদেশিদের রয়েছে বড় অবদান। এখানে বাংলাদেশিদের ঠাট্টা করে ‘বাংলা’ নামে ডাকা হয়। পরিশ্রমের দিক থেকে যেমন সুনাম কুড়িয়েছে বাংলাদেশিরা, তেমনি কিছু বাংলাদেশির অপকর্ম আত্মমর্যাদাও ক্ষুন্ন করেছে।
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের সুন্দর কাজগুলো তুলে ধরেছে বাংলানিউজ। প্রবাসী সচেতন পাঠকদের অনুরোধে বাংলাদেশিদের কিছু সমালোচনাও এবার তুলে ধরা হলো। এসব স্বভাব ও আচরণ থেকে বেরিয়ে আসতে পারলে, হয়তো বাংলাদেশিরাও এখানে মর্যাদাসম্পন্ন জাতি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে।
আইন অমান্যের প্রবণতা
বাংলাদেশিদের চেয়ে আফ্রিকান ও আরবদের মধ্যে আইন অমান্যের প্রবণতা অনেক বেশি। তবে এই দুই জাতির শারীরিক গঠন তাদেরকে অনেক হয়রানি থেকেই রেহাই দেয় এবং দাপুটে করে তোলে। এরপরই বাংলাদেশিদের অবস্থান বলা যায়। বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে রাস্তায় সিগন্যাল অমান্য করা থেকে শুরু করে অন্যের মালামাল লুটের কাহিনী পর্যন্ত রয়েছে।
বাংলাদেশিই বাংলাদেশির শত্রু
এখানকার বহুল প্রচলিত বাক্য এটি। ঠুনকো কারণে শত্রুতাবশত: একজন আরেকজনের অনেক বড় ক্ষতি করে। যেমন- অনেক সময় অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীর খবর আরেকজন বাংলাদেশি দিয়ে থাকেন। প্রয়োজনে পুলিশকে ঘুষ দিয়ে হলেও, শত্রুভাবাপন্নকে আটক করানো হয়। আবার দেশিকে মারতেই ভাড়া করেন ভিনদেশিদের।
মারপিট
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিদের তুলনায় অন্য জাতিগোষ্ঠীর নিজেদের মধ্যে মারামারি-হানাহানির খবর কমই পাওয়া যায়। কিন্তু বাংলাদেশিদের মধ্যে অনেক সময় পান থেকে চুন খসা থেকেও মারামারির শুরু হয়। এরপর পুলিশ ধরে নিয়ে যায় উভয়পক্ষকেই। সহনশীলতার অভাবে ক্ষুন্ন হয় আত্মমর্যাদা।
অপচয়
এখানে শ্রমিকদের একটি অংশের অর্থ অপচয়ের প্রবণতা খুব বেশি। মালয়েশিয়া ট্যুরিস্ট হাব হিসেবে গড়ে ওঠায় এখানে অর্থ ব্যায়ের বিলাসী খাত রয়েছে যথেষ্ট। আর হাজার রিঙ্গিত আয় করা বাংলাদেশি শ্রমিকদের অনেককেই দেখা যায় মাসে ৪০০ রিঙ্গিত ভোগ বিলাসেই ব্যয় করে থাকেন।
অন্যজাতির ব্যক্তিজীবনে অনুপ্রবেশ
বাংলাদেশি ছেলেদের একটি অংশের এখানে বদনাম রয়েছে- অন্য জাতির ব্যক্তিজীবনে অনুপ্রবেশের। যেসব বাংলাদেশি দুই যুগের বেশি সময় ধরে এখানে রয়েছেন তাদের ভাষ্যমতে, এক সময় বাংলাদেশিদের অনেক সুনাম ছিল। মালয় পরিবারগুলো বাসায় নিয়ে দাওয়াত করে খাওয়াতো। পরবর্তীতে বিভিন্ন কু-অভ্যাসের কারণে সেই সুনাম হারিয়েছে বাংলাদেশিরা।
ঐক্যের অভাব
১০ লক্ষাধিক বাংলাদেশি মালয়েশিয়ায় অবস্থান করলেও নিজেদের মধ্যে ঐক্যের অভাব রয়েছে। এখানে কোনো শক্তিশালী কমিউনিটি গড়ে উঠেনি, যে দায়িত্বটা ছিল শিক্ষিত ও ব্যবসায়ী সমাজের। শিক্ষিতদের অনেকেই শ্রমিক শ্রেণী থেকে দূরে থেকে নিজেদের পরিচয় আড়াল করে রাখেন। তবে নিজেদের চোর হিসেবে পরিচালিত করার এ পদ্ধতি শিক্ষিতদের জাতিগত মর্যাদা বা ব্যক্তিগত মর্যাদা কোনোটাই বাড়াতে পারেনি।
রাজনীতির নোংরা ছটা
এ দেশের বিরোধী দলের আন্দোলনে মিছিল না হলেও, বাংলাদেশে সরকারি দল ও বিরোধী দলের সংঘাত এখানেও রমরমা। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার অনুসারীরা এখানে দলাদলি করে বেশ দুর্নাম কুড়িয়েছেন। দলে উপদলে বিভক্ত হয়ে রমরমা চলছে দেশের রাজনীতি। প্রতিটি সংগঠনেই রয়েছে বেশ কয়েটি ভাগ।
দ্রুত ধনী হওয়ার প্রবণতা
বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দ্রুত ধনী হওয়ার একটি প্রবণতা রয়েছে আমাদের শ্রমিকদের। কাজ শেখার আগেই দেখা যাচ্ছে ৫০ রিঙ্গিতের জন্যে পালিয়ে যাচ্ছে অন্য কোম্পানিতে। আবার কিছুদিন থাকার পর সবাই আদম ব্যবসায়ী বনে যায়। আদম ব্যবসা বা এমএলএম মার্কেটিংয়ে একজন দেশির প্রথম টার্গেট থাকে আরেকজন দেশিই।
এসব দোষের মধ্যেও বাংলাদেশিদের মধ্যে রয়েছে ভাল করার অদম্য স্পৃহা। সবাই নিজ অবস্থান থেকে দেশের জন্যে অর্থ আয় করছেন। বিপদে একজন আরেকজনের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। বাংলাদেশিকে আরেক জন বাংলাদেশি বিপদে ফেলে যেমন সত্যি, আবার রক্ষাও করেন আরেকজন বাংলাদেশি। সবাই মনে করেন, যখন আরো শিক্ষিত বাংলাদেশি এখানে প্রবেশ করবে এবং দেশের প্রতিনিধিত্ব শুরু করবে, আত্মমর্যাদায় উদ্ভাসিত হবে বাংলাদেশিরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০১৪