মালয়েশিয়া: প্রায় সাড়ে চার বছর পর মালয়েশিয়া সফরে যাচ্ছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) মালয়েশিয়া পৌঁছাবেন তিনি।
সর্বশেষ ২০১০ সালের ১৯ মে ৬ষ্ঠ ‘ওয়ার্ল্ড ইসলামিক ইকোনমি ফোরাম’-এ যোগ দিতে মালয়েশিয়া যান শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বাংলাদেশ কমিউনিটির উদ্যোগে মালয়েশিয়া প্রবাসীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে হোটেল গ্র্যান্ড হায়াত বক্তব্য দেবেন শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাই কমিশনার এ কে এম আতিকুর রহমান।
বুধবার (৩ ডিসেম্বর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মালেশিয়া প্রবাসী আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে।
মালয়েশিয়া আওয়ামী লীগ সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
মালয়েশিয়া আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বাংলানিউজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মালয়েশিয়া সফরে আসায় তারা অত্যন্ত আনন্দিত ও গর্বিত। তাই প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠান যাতে সফল ও সার্থক হয় সেজন্য সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। সব প্রবাসীদের আমন্ত্রণপত্র দিয়ে দাওয়াত করা হয়েছে।
এদিকে শেখ হাসিনার আগমন উপলক্ষে মালয়েশিয়া আওয়ামী লীগের পাশাপাশি অঙ্গসংগঠনগুলোও বেশ তৎপর হয়ে উঠেছে।
বংলাদেশ ছাত্রলীগ মালয়েশিয়া শাখার নেতা হুমায়ুন কবির, ওয়াসিম, সয়েদ মিনহাজুর রহমান এক প্রতিক্রিয়ায় বাংলানিউজকে জানান, প্রধানমন্ত্রীর সফর উপলক্ষে প্রবাসীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে। প্রবাসীদের চাওয়া-পাওয়া প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করা হবে। মালয়েশিয়ার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষার্থী প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।
শেখ হাসিনার মালয়েশিয়া আগমন উপলক্ষে প্রবাসীদের মর্ধ্যে জল্পনা কল্পনা শুরু হয়েছে। প্রবাসীদের সমস্যা নিরসনে প্রধানমন্ত্রী সমাধান করে যাবেন বলে অনেক প্রবাসী আশায় বুক বেধে আছেন।
শেখ হাসিনার মালয়েশিয়া সফরের কারণ:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবারের মালয়েশিয়া সফরটি মূলতঃ মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণ রক্ষা বলে জানা যায়। গত বছর ১৮ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী দাতুক সেরী নাজিব তুন রাজাক ও তার স্ত্রী দাতিন সেরী রেশমা মনসুর বাংলাদেশ সফর করেন। মালয়েশিয়ার অর্থায়নে নির্মিত গাজীপুরে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট ফজিলাতুন্নেসা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজি হাসপাতাল উদ্বোধন করেন নাজিব। সে সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মালয়েশিয়া সফরের আমন্ত্রণ জানান তিনি।
মালয়েশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের স্বাক্ষরিত চুক্তির ভিত্তিতে বাংলাদেশ থেকে ‘জিটুজি’ পদ্ধতিতে জনশক্তি রপ্তানী চলছে। কিন্তু বিভিন্ন জটিলতার কারনে খুব বেশী আশার আলো দেখতে পাচ্ছে না ‘জিটুজি’। যদিও মালয়েশিয়ার চাহিদা অনুসারে বাংলাদেশে ১৪ লাখ কর্মী এখনো পাইপ লাইনে অপেক্ষা করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই সফরে দ্রুতভাবে ওই কর্মী প্রেরণে অচলাবস্থা দূর হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
এছাড়া মালয়েশিয়া এখন থেকে সারওয়াক প্রদেশে এবং সব সেক্টরে বাংলাদেশি শ্রমিক সরবরাহ করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। আগামী জানুয়ারি মাসেই ১২ হাজার কর্মী প্রেরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময় দ্বি-পাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে এ জটিলতা কাটিয়ে দ্রুতভাবে বেশী কর্মী প্রেরণে চুক্তি হতে পারে বলে জানা গেছে। এছাড়া বিভিন্ন ব্যবসা বাণিজ্য ও উভয় দেশে সাংস্কৃতিক বিনিময়েও উদ্যোগ নেওয়া হবে জানা জানা যায়।
কর্মরত শ্রমিকদের সমস্যা দূর হবে কি?
বর্তমানে মালয়েশিয়ায় সবচেয়ে বড় সমস্যা ৬পি ভিসাপ্রাপ্ত শ্রমিকদের ৪র্থ বছর নবায়নে অনিশ্চয়তা। যদিও হাইকমিশন জানায়, ৬পি ভিসাপ্রাপ্তদের ৩ বছর মেয়াদী ভিসা দেওয়া হয়েছিল। যা ওরা বছর বছর নবায়ণ করতে পেরেছে। এছাড়া বর্তমানে মালয়েশিয়ায় অবৈধভাবে অবস্থান করছে লাখো বাংলাদেশি শ্রমিক। মালয়েশিয়া সরকারের কঠোর মনোভাব তাদের বৈধ হবার পথে সবচেয়ে বড় বাধা। যদিও শ্রমিকরা আশায় রয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর সফরে কিছু একটা সমাধান হতে পারে।
এই বিষয়ে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, কর্মরত শ্রমিকদের বিষয়ে কোনো আলোচনা সূচি নেই দ্বি-পাক্ষিক আলোচনায়। কারণ পুরো বিষয়টিই মালয়েশিয়ার অভ্যন্তরীণ বিষয়। তবে দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে বা উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে হয়তো অনানুষ্ঠানিকভাবে এ সব প্রসঙ্গে আলোচনা হতেও পারে।
আলোচনায় আসতে পারে মানব পাচার:
প্রধানমন্ত্রীর সফরে সবচেয়ে বেশী আলোচনায় উঠে আসতে পারে বাংলাদেশ থেকে অবৈধ উপায়ে দালাল দ্বারা প্রতারিত হয়ে মানবপাচারের ঘটনা। সম্প্রতি মালয়েশিয়ার উদ্দশ্যে রওনা হওয়া একটি ট্রলার থেকে ৬২৫ জনকে আটকের ঘটনাটি চারিদিকে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। এ ঘটনার পরদিনই মালয়েশিয়া পুলিশ অনুরূপ আরেকটি ট্রলার থেকে ২১ জনকে আটক করলে উভয় দেশেই বিষয়টি নিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। অভিবাসীদের নিয়ে দেখা দেওয়া নতুন উদ্বেগ। বাংলাদেশ সরকার এভাবে মানব পাচাররোধে আরো কঠোর ভূমিকা হাতে নিচ্ছে বলেও জানা গেছে।
এদিকে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের শ্রমিকদের সমস্যা যেন অন্তহীন। একটা সমস্যার সুরাহা হতে না হতেই আরেকটা সমস্যা সামনে এসে যায়। একদিকে ৬পি শ্রমিকদের অনিশ্চয়তা যেমন বাড়ছে ঠিক তেমনি আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে অবৈধভাবে থাকা শ্রমিকরাও। অবৈধভাবে আসা শ্রমিকরা এখন বৈধ শ্রমিকদের জন্যও অশান্তির কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর মানব পাচাররোধ করতে হলে উভয় দেশের দালালদের বিরুদ্ধে যৌথভাবে কঠোর ব্যবস্থা নিতে না পারলে উভয় দেশের এসব সমস্যা কোনোদিনই শেষ হবে না। তারপরও সবার নজর এখন প্রধানমন্ত্রীর দিকে। যতবারই তিনি মালয়েশিয়া এসেছেন ততবারই উপকৃত হয়েছেন শ্রমিকরা। তাই এবার কিভাবে কোনদিক দিয়ে শ্রমিকরা উপকৃত হবেন সেটাই দেখার অপেক্ষায় সবাই রয়েছেন বলেও জানা গেছে।
সর্বশেষ ২০১০ সালের ১৯ মে ৬ষ্ঠ ‘ওয়ার্ল্ড ইসলামিক ইকোনমি ফোরাম’-এ যোগ দিতে মালয়েশিয়া যান শেখ হাসিনা। সে সময় মালয়েশিয়ার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দাতুক সেরী নাজিব তুন রাজাকের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় অবৈধ শ্রমিকদের বৈধ করার বিষয়টি উত্থাপিত হয়। মালয়েশিয়া সরকার মানবিক কারনে ২০১১ সালের আগস্ট মাসে বায়োমেট্টিক সিস্টেমে ফিঙ্গারপ্রিন্টের মাধ্যমে সব অবৈধ শ্রমিকদের বৈধ হবার একটি বিরল সুযোগ করে দিয়েছিল।
একইভাবে ১৯৯৬ সালেও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী থাকাবস্থায় শেখ হাসিনার মালয়েশিয়া সফরের পর এদেশে অবৈধ শ্রমিকরা বৈধ হবার সুযোগ পেয়েছিলেন। তাই বর্তমানেও তার এ সফরটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশি শ্রমিকদের কাছে। সবার ধারণা দ্বি-পাক্ষিক সুসম্পর্কের মাধ্যমে শ্রমিকদের বর্তমান অনেক সমস্যার সমাধান করতে পারেন একমাত্র শেখ হাসিনাই।
বাংলাদেশ সময়: ০৬৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০২, ২০১৪