কুয়ালালামপুর: এশিয়ায় মধ্যে বাংলাদেশ সবার বিনিয়োগের গন্তব্য হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার (০৩ ডিসেম্বর) স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টায় হোটেল গ্র্যান্ড হায়াতের বলরুমে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সুবিধা বিষয়ক সংলাপে বক্তৃতা করছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের লক্ষ্য ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হিসেবে উন্নীত করা। আমাদের সব উন্নয়নমুখী উদ্যোগের লক্ষ্য হচ্ছে সমৃদ্ধি, ন্যায্যতা ও সবার জন্য মর্যাদাপূর্ণ জীবন নিশ্চিত করা।
এশিয়ার অগ্রসরমান দেশ হিসেবে মালেশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য, বন্ধুত্ব আর শ্রম-সম্পর্কের নতুন দিক উন্মোচনের লক্ষ্যে মঙ্গলবার (০২ ডিসেম্বর) স্থানীয় সময় বিকেল ৪টায় (বাংলাদেশ সময় বেলা ২টা) সে দেশে পৌঁছান শেখ হাসিনা। বুধবার সফরের দ্বিতীয় দিন।
বাংলাদেশে ব্যবসা ও বিনিয়োগের ব্যাপারে মালয়েশীয় ব্যবসায়ীদের আগ্রহের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা সার্বিকভাবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকেই নির্দেশ করে।
এ প্রসঙ্গে তিনি ২০১৪ সালে বাংলাদেশে মালয়েশিয়ার বিনিয়োগকারীদের ‘শোকেস বাংলাদেশ’ আয়োজনের কথা উল্লেখ করেন।
সংলাপ চলাকালে প্রধানমন্ত্রী বিনিয়োগকারীদের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনেন এবং তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুযোগ সুবিধাগুলোর কথা জানান।
এসময় বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে অগ্রসরমান অর্থনীতি হিসেবে উল্লেখ করেন মালয়েশীয় ব্যবসায়ীরা।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বাংলাদেশের যোগাযোগ উন্নয়ন, জ্বালানি, পর্যটন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পানি সরবরাহসহ বিভিন্ন খাতে মালয়েশিয়ার ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন।
এছাড়াও খাদ্য ও কৃষি খাতে মালয়েশীয় বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বসহ যে কোনোও ধরনের অংশীদারিত্ব স্থাপনে বাংলাদেশ প্রস্তুত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি জানি মালয়েশীয় ব্যবসায়ীরা তাদের নিজেদের দেশকে আধুনিক ও উন্নত করে তুলতে অবদান রেখেছেন। একই ধরনের সুযোগ সুবিধা দিয়ে বাংলাদেশও তাদের ডাকছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সীমাবদ্ধতা, অর্থনৈতিক উন্নয়নে পিছিয়ে থাকা সত্ত্বেও, আমরা বিনিয়োগকারীদের জন্য যে সুযোগ সুবিধা দিচ্ছি তা আকর্ষণীয়।
এসময় বাংলাদেশ সফর করে একটি সত্যিকারের বাংলাদেশকে উপলব্ধি করতেও মালয়েশীয় ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
সংলাপে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন মালয় সাউথ-সাউথ অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট আজমান হাশিম। এছাড়া মালয়েশিয়ার ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা এতে অংশ নিয়ে মতবিনিময় করেন।
সংলাপ পরবর্তী মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেওয়ার পর দুপুর আড়াইটার দিকে পুত্রজায়ার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বেলা তিনটা নাগাদ সেখানে পারদানা স্কয়ারে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৌঁছার কথা রয়েছে তার। সেখানে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাবেন সরকারি অনুষ্ঠানাদি আয়োজনের প্রধান ওসমান মাহমুদ। স্যালুটিং ডায়াসে শুভেচ্ছা বিনিময় হবে দেশটির প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ নাজিবতুন আবদুল রাজাকের সঙ্গে।
এরপরপরই রাষ্ট্রীয় অভ্যর্থনা অনুষ্ঠান। এতে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনার পর দুই নেতা গার্ড অব অনার পরিদর্শন করবেন। দুই দেশের অভ্যর্থনা সারিতে দাঁড়ানো প্রতিনিধিদের সঙ্গে পরিচয়, কূটনীতিক কোরের সঙ্গে পরিচয়ের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এ অনুষ্ঠান।
এর পরপরই ছবি তোলার জন্য দাঁড়াবেন দুই নেতা। আর সবশেষে ভিজিটরস বুকে স্বাক্ষর করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দুই প্রধানমন্ত্রীর রুদ্ধদ্বার বৈঠকটি শুরু হওয়ার কথা রয়েছে বুধবার স্থানীয় সময় বিকেল ৩টা ২৫ মিনিটে। বৈঠক শেষে দ্বি-পাক্ষিক বৈঠকে অংশ নিতে তারা যাবেন পারদানা মিটিং রুমে। সেখানে দ্বি-পাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন তিনি।
এর পরপরই কুয়ালালামপুরে আবাসিক হোটেলে ফিরবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্রাম শেষে সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় ফের পুত্রজায়ার উদ্দেশে যাত্রা। রাত ৮টায় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন সেরি পারদানায় নৈশভোজে অংশ নেবেন তিনি। প্রোটোকল রুমে এই আনুষ্ঠানিক নৈশভোজের পর রাত সাড়ে ৯টায় ফের আবাসস্থল হোটেলে গ্র্যান্ড হায়াতে ফিরবেন প্রধানমন্ত্রী।
এর আগে মঙ্গলবার কুয়ালালামপুর পৌঁছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিকেলেই ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তার সঙ্গে হোটেল স্যুটে দেখা করতে আসেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক উপদেষ্টা স্যামি ভেলু ও দেশটির একসময়ের ভিশনারী প্রধানমন্ত্রী ও আধুনিক মালয়েশিয়ার কারিগর মাহাথির মোহাম্মদ।
এরপর রাতে তিনি যোগ দেন মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কমিউনিটির দেওয়া গণ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে।
বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় দুপুর ১২টায় কুয়ালালামপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাকে বিদায় জানাতে বিমানবন্দরে উপস্থিত থাকবেন মালয়েশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী হামজাহ জইনুদ্দিন, মানবসম্পদ বিষয়ক উপমন্ত্রী হাজি ইসমাইল হাজি আবদুল মুত্তালিব ও মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের হাই কমিশনার একেএম আতিকুর রহমান।
বাংলাদেশ সময় বেলা ২টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছার কথা রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৩, ২০১৪
** বুধবার চুক্তি সমঝোতা-স্মারক-যৌথ ইশতেহার
**‘ভূতের পিছ পা বিএনপি জামায়াতের !’
** মাহাথিরকে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ
** লাল-সবুজ পতাকায় সেজেছে কুয়ালালামপুর
** বাংলাদেশে নিম্ন আয়ের মানুষের আবাসন বানাবে মালয়েশিয়া
** মালয়েশিয়া পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী
** মালয়েশিয়ার পথে প্রধানমন্ত্রী
** পুত্রজায়ায় হাসিনা-রাজাক বৈঠক বুধবার
** ভাড়াবিহীন বাসে ওয়াইফাই ও এসি!