ঢাকা, বুধবার, ২৮ কার্তিক ১৪৩১, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মালয়েশিয়া

মালয়েশিয়ায় উন্নত শীরে বাংলাদেশি পিনাক

মাজেদুল নয়ন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩, ২০১৪
মালয়েশিয়ায় উন্নত শীরে বাংলাদেশি পিনাক ছবি:বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কুয়ালালামপুর থেকে: বাংলাদেশের মেয়ে সৈ'য়দা নুযহাত তাহসীন, ডাক নাম পিনাক (Nuzhat Tahseen Pinak) । কাজ করছেন ওয়াভলেট সলিউশন (Wavelet Solutions) সফটওয়্যার কোম্পানিতে অপারেশন ম্যানেজার হিসেবে।

বেশ দক্ষতার সঙ্গেই হ্যান্ডেল করছেন ভিন্ন জাতির গ্রাহকদের।

গত ৯ বছর ধরে মালয়েশিয়ায় রয়েছেন পিনাক। ২০০৫ সালে আজিমপুরের অগ্রণী স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে চলে আসেন এখানে। বাবা সৈয়দ এবিএম মোসাদ্দেকুল হক এবং মা মাহবুবা জেসমিন দুজনেই বিমান বাংলাদেশের কমার্শিয়াল অফিসার (সেলস) হিসেবে কর্মরত। এছাড়াও মোসাদ্দেকুল হক একজন কৃতি টেবিল টেনিস খেলোয়াড়।

পিনাকের সঙ্গে দেখা সোমবার সন্ধ্যায়। সারাদিনের অফিস শেষে কুয়ালালামপুরের ট্রাফিক ঠেলে সুবাং জায়া থেকে এলেন কেএলসিসি। তবে চেহারায় ক্লান্তির ছাপ চোখে পড়ে না, বরং হাসিটাই ফুটে থাকে।

এখানকার পুলিশ সম্পর্কে অনেকের খারাপ অভিজ্ঞতা থাকলেও পিনাকের কখনো তেমন অভিজ্ঞতা হয়নি। জানালেন, শিক্ষার্থী থাকাকালে একবার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বান্ধবীর গাড়ি চালিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। সঙ্গে বান্ধবীও ছিল।

রাস্তার মোড়ে পুলিশ গাড়ি থামিয়ে লাইসেন্স চাইলে বান্ধবী অকপটে মিথ্যা বলে দিলেন। কারণ পিনাকেরতো তখনো লাইসেন্সই নেই, ভুলে ঘরে রেখে আসবেন কি করে!

তবে পুলিশ সতর্ক করে দিয়ে বললেন, আর যেনো এরকমটা না হয়। তাই এ দেশের পুলিশের প্রতি যে অভিযোগ শুধু শুনেছেন, সেটা প্রত্যক্ষ করা হয়নি।
 
ভ্রমণ পিপাসু মোসাদ্দেকুল হকের সন্তান হওয়াতে পৃথিবীর এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত দেখা হয়েছে পিনাকের।   নিউইয়র্ক সিটি থেকে শুরু করে ব্রাসেলস, এথেন্স, প্যারিস, মধ্যপ্রাচ্য, মালদ্বীপ, কলকাতা, থাইল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ায় ঘুরে বেড়িয়েছেন।
 
মালয়েশিয়ায় এসে প্রথম বছর মাল্টিমিডিয়া ইউনিভার্সিটির মালাক্কা ক্যাম্পাসে ফাউন্ডেশন কোর্স করেন। এরপর সাইবার জায়ায় মাল্টিমিডিয়া ইউনিভার্সিটিতে ইলেকট্রিনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে (মেজর টেলিকমিউনিকেশন) ব্যাচেলর।
 
মালয়েশিয়ায় নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা করে তিনি বলেন, মালাক্কায় থাকার সময় বুঝতেই পারিনি, মালয়েশিয়ায় যানজট রয়েছে। আর সাইবার জায়াতে আসার পর দুটা বাস পরিবর্তন করে চাল কিনতে যেতে হতো। তবে কুয়ালালামপুরের তুলনায় থাকার জন্যে সুবাং বা আশপাশের এলাকা বেশ ভালো।
 
২০১০ সালে ব্যাচেলরের শেষ সেমিস্টারে ইন্টার্নশিপ করার সময়ই ওয়েভলেট সলিউশনে টেকনিক্যাল সাপোর্ট এক্সিকিউটিভ হিসেবে যোগদান, এরপর টেকনিক্যাল সাপোর্ট লিডার, কাস্টমার সার্ভিস ম্যানেজার এবং এখন কাজ করছেন অপারেশন ম্যানেজার হিসেবে। নিজেই বলেন, কাজের পরিধি এখন অনেক বিস্তৃত। ডাটা বেজ থেকে শুরু করে সফটওয়্যার প্রোগ্রামিং সব কাজই করতে হচ্ছে। ইতিমধ্যেই থাইল্যান্ডে কোম্পানির একটি প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্ট করেছেন সাফল্যের সঙ্গে। স্যামসাং মালয়েশিয়াতে প্রজেক্ট ম্যানেজার হিসেবেও কাজ করেছেন।
 
দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার এ দেশে জীবনকে এগিয়ে নেয়ার সংগ্রামে একাই লড়ছেন পিনাক। কাজে ডুবিয়ে রাখেন নিজেকে। তবে ভীষণভাবে অনুভব করেন পরিবারকে। প্রতিদিন নিয়ম করে দু'বার কথা হয় তাদের সঙ্গে। এখনো সময় পেলেই চলে যান দেশে।
 
বাবা-মায়ের চাকরির কারণে নয় শুধু, দেশের জন্যে ক্ষুদ্র অবদান রাখতে পৃথিবীর যেখানেই যান না কেন, বাংলাদেশ বিমানই প্রথম পছন্দ পিনাকের।
 
সুবাংয়ে একটু বেশি ভাড়ায় বড় বাসা ভাড়া নিয়েই থাকেন পিনাক। কারণ বছরে এক বা দু'বার বাবা-মাও এখানে বেড়িয়ে যান। আর ছোট ভাই এবার ও লেভেল শেষ করেছে, সেও মালয়েশিয়ায় আসবে উচ্চতর ডিগ্রি নিতে।
 
প্রবাসের অবসর সময় বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরে ফিরেই কেটে যায়। এইতো কিছুদিন আগে ঘুরে এসেছেন মালয়েশিয়ার সাবা-সারওয়াক থেকে।
 
প্রয়োজন না হলে কুয়ালালামপুর খুব একটা আসা হয় না। আর দুটো থার্টি ফাস্ট করেছেন শহরে। এখন আর বেশি ইচ্ছেও করেনা।
 
দেশের খবর নিতে অনলাইন নিউজই এখানে ভরসা। বলেন, দেশে থাকতে ঘরে পত্রিকা এলেও, খুব কম সময় উল্টে দেখা হতো। তবে এখন দেশের প্রতি মুহূর্তের খবর জানতে উদগ্রীব হয়ে থাকি।
 
সারাদিনের অফিস শেষে সন্ধ্যায় বাসায় পৌছে খাবার রান্নায় কেটে যায় সময়। পরের সকালেই অফিস। আর চাকরিটা এমনই যে রাত তিনটায়ও গ্রাহকরা সিস্টেমের সমস্যায় পড়ে ফোন করলে, সমাধানের পথ বাতলে দিতে হয়।
 
মালয় ভাষা শেখায় দক্ষতা অর্জন করতে পারেননি পিনাক। বললেন, শিখেছি শুধু পথ চিনতে যতটুকু প্রয়োজন। কারণ কর্মস্থানের মতোই বিশ্ববিদ্যালয়তেও ইংরেজিতেই ভাব বিনিময় হতো।
 
টুইন টাওয়ারের গ্রাউন্ড ফ্লোরে নান্দোজ রেস্টুরেন্ট। অর্ডার আর খাবার পরিবেশনের মাঝের  সময়টুকুতে জানালেন, তার কর্মস্থলে আরো ৬ জন বাংলাদেশি রয়েছেন। তবে তার নিয়োগের সময়টায় তিনি একাই ছিলেন বাঙালি প্রতিনিধি। বিশেষ দিক হচ্ছে, বাকি ৬ জনের মধ্যে ৫ জনেরই কোম্পানিতে পরিচয় হয়েছে তার মাধ্যমে।
 
এর মধ্যেই খাবার চলে এলো। চিকেনসহ আমার বাসনভর্তি খাবার। আর কোয়ার্টার চিকেনসহ অল্প ফ্রেঞ্চফ্রাই নিয়ে আরেকটি বাসন। কিছুটা বিব্রত হলেও, ক্ষুধায় ছুরি চালালাম দ্রুত। পিনাক অবশ্য বললেন, এক সময় এ ধরনের হাফ চিকেন একাই খেতেন তিনি।
 
সারাদিনের ক্লান্তি শেষে আমার পা যেন আর নড়ছিল না। বিনয়ী পিনাক সে সময় আমাকে বাসায় পৌছে দেয়ার অফার দিলেন। চেহারায় 'না থাক' ভাব নিয়ে শেষ পর্যন্ত ঘাড় কাৎ করে রাজি হয়ে গেলাম।   সম্প্রতি কেনা গাড়িটার সিট থেকে এখনো পলিথিন খোলা হয়নি। বললেন, বাবা এসে খুলবেন। পলিথিনে মোড়ানো সিটেই বসলাম। টুইন টাওয়ার থেকে ক্লাং লামায় আমার বাসায় গাড়িতে যাওয়ার রাস্তা আমার চেনা নয়। কারণ ট্যুরিস্ট হিসেবে বাস আর ট্রেনই আমার বাহন।

জিপিএস চালু করে খুঁজে বের করা হলো ক্লাং লামার শ্রী সেন্তোসা।   জানালেন, মোটর সাইকেল চালানোর ইচ্ছে খুব।   তবে শেখা হয়নি এখনো। আর গাড়ির প্রতি রয়েছে দুর্বলতা।   কিছু সময়ের মধ্যেই পৌছে গেলাম গন্তব্যে।   পূর্বে শোনা কথাটা সত্যি, বেশ ভাল ড্রাইভ করেন পিনাক।

বাংলাদেশ সময়: ১০৫০ ডিসেম্বর ৩, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মালয়েশিয়া এর সর্বশেষ