মালয়েশিয়া: বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে এখন প্রায় কোটি বাংলাদেশি প্রবাসী রয়েছেন। সংখ্যার বিচারে সৌদি আরবের পর মালয়েশিয়াতেই এখন অবস্থান করছেন সর্বোচ্চ সংখ্যক বাংলাদেশি।
তবে মালয়েশিয়াতে প্রবাসীদের কোনো উল্লেখযোগ্য সংগঠন ছিল না। মালয়েশিয়া সরকারের দেয়া বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পেত না বাংলাদেশি প্রবাসীরা। অথচ সরকারি পর্যায়ে লবিং ও দেশের ভাবমূর্তির উন্নয়নে প্রবাসে শক্তিশালী কমিউনিটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মালয়েশিয়াতেই আমাদের বাংলাদেশি কর্মীরা যোগ্যতা ও সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন, চাহিদাও রয়েছে অনেক।
শ্রমিকদের পাশাপাশি বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরাও রাখছেন কৃতিত্বের স্বাক্ষর। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জল করছেন তারা। এসব দিক বিবেচনায় বাংলাদেশিদের অবস্থান মালয়েশিয়ায় অনেক ভাল থাকলেও একটি ভাল ঐক্যবদ্ধ কমিউনিটি গড়ে উঠেনি।
দীর্ঘদিন ধরে থাকা প্রবাসীরা মনে করছেন, পারস্পরিক হিংসা আর হানাহানির কারণে শক্তিশালী কমিউনিটি গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। শক্তিশালী কমিউনিটি কার্যক্রম না থাকলেও আঞ্চলিক কার্যক্রম মালয়েশিয়াতে গড়ে উঠছে ধীরে ধীরে।
বাংলাদেশিদের আঞ্চলিক সংগঠন হিসেবে ২০১২ সালে আত্মপ্রকাশ করে ফেনী সমিতি। তরুণ উদ্যেক্তা পেয়ার আহমেদ আকাশ এই সংগঠনের উদ্যোগ নেন। তারই ধারাবাহিকতায় ধীরে ধীরে রুপসী চাঁদপুর সংগঠন, কুমিল্লা অ্যাসোসিয়েশন, সিলেট জালালাবাদ, গোপালপুর সংগঠন, শরীয়তপুর সংগঠন তৈরি হয়। খুব শিগগিরই যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে বগুড়া সোসাইটি নামক আরেকটি সংগঠন।
এসব আঞ্চলিক সংগঠন মালয়েশিয়াতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ফিরে আনতে কাজ করছে। আঞ্চলিক কমিউনিটির উদোক্তা ফেনী সমিতির সভাপতি আকাশ বাংলানিউজকে বলেন, ইতিমধ্যে মালয়েশিয়ানদের মধ্যে বাংলাদেশিদের একটা ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছে। স্থানীয়রাও আমাদের আঞ্চলিক প্রোগ্রামে যোগদান করছেন। আমি মনে করি, আঞ্চলিক সংগঠনগুলো হলো কমিউনিটির একেকটি বাগান। আর সেই বাগানের ফুল নিয়ে শক্তিশালী কমিউনিটি গড়ে তোলা হবে । আর মালাগুলো বাংলাদেশ কমিউনিটিকে আগলিয়ে ধরে রাখবে।
মালয়েশিয়ায় হাজার হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছে। ভালো ফলাফল করে আমাদের স্টুডেন্টরা মেধা তালিকায় এগিয়ে রয়েছে। মালয়েশিয়ায় আঞ্চলিক সংগঠনের কার্যক্রমের পাশাপাশি আমাদের স্টুডেন্টরা আমাদের সস্কৃতি বিদেশি শিক্ষার্থীদের কাছে তুলে ধরছে।
বাংলাদেশ কমিউনিটির নেতা রাশেদ বাদল বাংলানিউজকে বলেন, মালয়েশিয়ায় প্রবাসীদের সমস্যা সমাধানে দূতাবাসের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার কাজটি কমিউনিটি নেতাদেরই করতে হবে। বাংলাদেশ দূতাবাসে লোকবলের অভাব এবং অন্য কিছু সমস্যার কারণে প্রবাসীদের বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, পাসপোর্ট নবায়ন করতে মালয়েশিয়ায় বিভিন্ন শহর থেকে দূতাবাসে আসেন প্রবাসীরা। বেলা ১১টা পর্যন্ত পাসপোর্ট জমা নেয়া এবং বিকেল চারটার পর ফেরত দেয়ার নিয়ম থাকায় সবাইকে চার-পাঁচ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। বাংলাদেশ দূতাবাস যদি দ্রুত সেবা দিতে পারত, তাহলে প্রবাসীরা অনেক উপকৃত হতো।
বাংলাদেশ কমিউনিটি এবং আঞ্চলিক সংগঠনগুলো দূতাবাসের সঙ্গে আলোচনা করে এসব সমস্যা সমাধান করতে পারে। বাংলাদেশ কমিউনিটি একটু আন্তরিকভাবে চাইলে ছোট ছোট যেসব সমস্যা আছে, সেসবও সমাধান করতে পারে। বাংলাদেশ কমিউনিটির অনেক সীমাবদ্ধতা আছে এবং থাকবে। একটু আন্তরিক হলে এসব সীমাবদ্ধতা জয় করা সম্ভব বলে বিশ্বাস করি।
বাংলাদেশের কমিউনিটিতে অত্যন্ত পরিচিত মো. মিনহাজ গঠন করতে যাচ্ছেন বগুড়া সোসাইটি মালয়েশিয়া। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, প্রবাসে ব্যাবসা-বাণিজ্য করে পরিবার নিয়ে দীর্ঘ দিন বসবাস করে আসছি। প্রবাসে আমাদের চাওয়া পাওয়া বলতে কিছু নাই। বগুড়া সমিতির মাধ্যমে মালয়েশিয়ার বুকে ব্র্যান্ডিং বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করবো।
তিনি বলেন, মালয়েশিয়ায় এখনো বাংলাদেশের ভাবমূর্তি অনেক ভালো। পরবর্তী সময়ে যারা মালয়েশিয়া আসবেন, তাদের জন্য সুন্দর ভাবমূর্তি তৈরি করার দায়িত্ব এখন সকল আঞ্চলিক সংগঠন কমিটিগুলোর। কমিউনিটি নেতাদের এই দ্বায়িত্ব পালন করতে হবে।
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিদের ভাবমূর্তি বাড়াতে প্রয়োজনীয় কার্যক্রমগুলোর মধ্যে রয়েছে- ইন্টারন্যাশনাল ফেস্টিভ্যালগুলোতে অংশ নেয়া, মালয়েশিয়ার মিডিয়ায় ইতিবাচক প্রচারণা চালানো, বাংলাদেশের সংস্কৃতি নিয়ে উৎসবের আয়োজন করা এবং মালয়েশিয়ানদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
বাংলাদেশ স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন মালয়েশিয়া গড়ে তুলেছেন মহিউদ্দিন মাহী। এটা বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের একটি সংগঠন। এর শিক্ষার্থীরা মালয়েশিয়ায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠান করে থাকে। মালয়েশিয়া সরকারি ইউনিভার্সিটি মালায়ায় প্রতি বছর কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা আয়োজন করে। বিদেশিদের কাছে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছে এ অনুষ্ঠান।
এরইমধ্যে মালয়েশিয়ায় সর্বপ্রথম বাংলাশিক্ষা একাডেমির যাত্রা শুরু হয়েছে। প্রবাসে বাংলা ভাষা চর্চার জন্যই এ একাডেমির যাত্রা।
মালয়েশিয়ায় বিভিন্ন সামাজিক কাজে জড়িত চট্টগ্রামের ছেলে বাইনারি ইউনিভার্সিটির ছাত্র সৈয়দ মিনহাজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রীদের সহায়তায় সবচেয়ে ভালো একটি প্রচারণা চালানো যেতে পারে। যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রী আছেন, সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যাল আয়োজন, বাংলা চলচ্চিত্র প্রদর্শন অথবা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যে ফেস্টিভ্যালের আয়োজন করে সেখানে একটু ভালো পরিসরে অংশ নেয়া। একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রীরা এখন নিজেরাই ব্র্যান্ড। বাংলাদেশের অনেক ছাত্রছাত্রীই পড়াশোনা করতে এসেছে স্কলারশিপ নিয়ে। যারা মাস্টার্স পিএইচডি করছেন, তাদের বিশাল অংশ বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানে কর্মরত।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৮, ২০১৪