ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মালয়েশিয়া

মালয়েশিয়ায় এক ধাপ এগিয়ে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা

কায়সার হামিদ হান্নান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭২৮ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০১৫
মালয়েশিয়ায় এক ধাপ এগিয়ে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থী আরাফাত হোসেন রিয়াজ/ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

মালয়েশিয়া: এশিয়ায় অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ কয়েকটি দেশের মধ্যে মালয়েশিয়া অন্যতম। ইতোমধ্যে দেশটি শিক্ষা ক্ষেত্রে, শিল্প-সাহিত্য ও তথ্য-প্রযুক্তিতে বিশ্বে নিজেদের স্থান বেশ পাকা করে নিয়েছে।



বিশ্বের প্রায় ১৫০টি দেশের শিক্ষার্থীরা দেশটির শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভিড় করছে তাদের কাঙ্ক্ষিত শিক্ষা অর্জনের জন্য। এর মধ্যে দেশটিতে অনেক বাংলাদেশি মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীও রয়েছেন। যারা মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের ভাবমূর্তি প্রতিনিয়তই উজ্জ্বল করে চলেছেন। তবে কিছু কিছু ছাত্র-ছাত্রীর কারণে দেশের ভাবমূর্তি যে নষ্ট হচ্ছে না তাও নয়। তবে সব মিলিয়ে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা অন্য যে কোনো দেশের তুলনায় যে এক ধাপ এগিয়ে, এমনই মত এখানে পড়তে আসাদের।

মালয়েশিয়ায় অধিকাংশ শিক্ষার্থী নিজেদের পড়াশোনার খচর চালাচ্ছেন নিজেই চাকরি করে। দেশটিতে ছাত্র জীবন পার করছেন ইউনিভার্সিটি পুত্রা মালয়েশিয়া’র (ইউপিএম) মাস্টার অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এমবিএ) ছাত্র আরাফাত হোসেন রিয়াজ। নিজের সাফল্যর কথা বাংলানিউজের কাছে তুলে ধরলেন তিনি। জানালেন, গ্রামের বাড়ি ভোলা জেলায়, সেখান থেকে তিনি ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে মালয়েশিয়ায় এসেছেন।

দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করে মালয়েশিয়া সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের যোগ্যতা বলে পড়াশোনা করে যাচ্ছেন। রিয়াজ মনে করেন, একটু মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করলে একজন ভালো স্টুডেন্ট হওয়া সম্ভব। আর একজন ভালো স্টুডেন্ট পৃথিবীর যে কোনো জায়গায় গিয়ে ঠেকবে না। তারা নিজের মতো করে মানিয়ে নিতে পারবে।

মালয়েশিয়ায় পড়াশোনার মান বেশ উন্নত বলেও মত রিয়াজের। প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে অনেক ভালো স্টুডেন্ট এখানে আসেন। মালয়েশিয়া দিন দিন এগিয়ে যাচ্ছে উন্নত বিশ্বের দিকে। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তাদের শিক্ষা ব্যবস্থা আরও এক ধাপ এগিয়ে। এখানে এক ধাপ এগিয়ে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরাও, বলেন তিনি।

আরাফাত হোসেন রিয়াজ আরও বলেন, বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশ থেকে শিক্ষার্থীর নামে মানবপাচার করে বাঙালিদের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। ফলে আমাদেরও স্টুডেন্ট হিসেবে মাঝে মাঝে পরিচয় দিতে লজ্জা লাগে। এর সমাধান হওয়া দরকার।

বিদেশে পড়াশোনা প্রসঙ্গে রিয়াজ বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের দেশেও অনেক ভালো পড়াশোনা হচ্ছে। কিন্তু বিদেশে পড়াশোনা করলে অনেক দেশের শিক্ষার্থীর সঙ্গে পরিচয় হয়। জানা যায় তাদের দেশের কৃষ্টি, আচার-আচরণ। সব কিছু মিলিয়ে একটা মিশ্র অভিজ্ঞতা অর্জন হয়। বহু ভাষা শেখা যায়। প্রবাসে একজন অল্প শিক্ষিত মানুষ সহজে ভাষা শিখে ফেলতে পারেন।

রিয়াজ মত দেন, এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে মালয়েশিয়া হতে পারে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার চমৎকার ও সাশ্রয়ী গন্তব্য। দেশের যে কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সমান খরচ দিয়ে মালয়েশিয়ায় বিশ্বমানের ডিগ্রি নেওয়া যায় বলেও জানান তিনি। সেই সঙ্গে বাড়তি বোনাস হিসেবে পার্ট-টাইম কাজের সুযোগ তো রয়েছেই।

বাংলাদেশসহ বিশেষ করে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের মধ্যম আয়ের পরিবারের ছেলে-মেয়েরা এখন মালয়েশিয়ায় তাদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য আসছেন। মানের দিক দিয়ে মালয়েশিয়ায় উচ্চশিক্ষা এখনও এশিয়ার চীন, জাপান, সিঙ্গাপুর ও হংকংয়ের পর্যায়ে না গেলেও দেশটি এ বিষয়ে বেশ দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যেমন- যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোর নামাদামি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মালয়েশিয়ায় তাদের ক্যাম্পাস খুলেছে। এছাড়া মালয়েশিয়ার নিজস্ব বেশ কয়েকটি স্বনামধন্য ইউনিভার্সিটিও রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ইউনিভার্সিটি মালয়া, ইউনিভার্সিটি কেবাংসান মালয়েশিয়া, ইউনিভার্সিটি টেকনোলজি মালয়েশিয়া, ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স মালয়েশিয়া, ইউনিভার্সিটি পুত্রা মালয়েশিয়া, ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়া, ইউনিভার্সিটি টেকনোলজি পেট্রোনাস ও মাল্টিমিডিয়া ইউনিভার্সিটি।

রিয়াজ তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে বাংলনিউজকে বলেন, ছোটবেলা থেকে আত্মবিশ্বাস নিয়ে অনেক অনুপ্রেরণামূলক লিখা পড়েছি। যখন যার কাছে ভবিষ্যৎ নিয়ে পরামর্শ চেয়েছি সে নিজের মাঝে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে লেখাপড়া করতে বলেছেন। আমিও আত্মবিশ্বাস নিয়ে লেখাপড়া শুরু করেছিলাম। ছোটবেলায় আমার নির্দিষ্ট কোনো স্বপ্ন ছিল না। একেক বার একেকটা। কখনও কলেজের শিক্ষক, কখনও বিশ্ববিদ্যালের। কিন্তু এখন আমি আমার জীবনের মূল লক্ষ্য খুঁজে পেয়েছি। সে অনুযায়ী পড়াশোনা করছি। আমি ভোলাতে বড় হয়েছি, স্কুল, কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে চট্টগ্রামে তারপর মালয়েশিয়া।

তিনি বলন, দেশে আমি টিউশনি করে নিজের খরচ চালাতাম, প্রথমে মাত্র দুইজন ছাত্র নিয়ে আমার টিউশনির জীবন শুরু হয়। আস্তে আস্তে ছোটখাটো ১টি কোচিং সেন্টারে তা রুপ নেয়। কিন্তু এতো কিছুর মাঝেও আমি আমার স্বপ্ন থেকে সরে যাইনি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ শেষ করে আমি মালয়েশিয়ায় এমবিএ পড়তে যাওয়ার সুযোগ খুঁজতে থাকি। তবে আমার কাছে মালয়েশিয়ায় পড়তে যাওয়ার মতো এতো টাকা ছিল না। তাই আমি বাধ্য হয়ে বাবার কাছে টাকা চাই।

তিনি বলেন, বাবা আমাকে ১ লাখ টাকা দিতে পারেন, বাকি টাকা আমি নিজে সংগ্রহ করি। সব মিলিয়ে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়ে আমি মালয়েশিয়ায় আসি ২০১৪ সালে। চলে আসি কিন্তু এখানে এসেও আমাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। আমি প্রথমে সরকারি কোনো ভার্সিটিতে ভর্তির সুযোগ পাইনি। কিন্তু আমি ধৈর্য না হারিয়ে চেষ্টা চালিয়ে গেছি এবং আজ তার ফল পেয়েছি। আজ বলতে পারি আমি একজন সফল স্টুডেন্ট। ধৈর্য থাকার কারণে মালয়েশিয়ার মতো একটি দেশে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ হয়েছে।

বিদেশে পড়াশোনার যোগ্যতা অর্জন বিষয়ে রিয়াজ বলেন, প্রথমে ভালো ইংরেজি জানতে হবে। ইংরেজি ভালো জানলে ভালো জব পাওয়া যাবে। আর একজন শিক্ষার্থীর বড় সফলতা হলো ভালো ইংরেজি বলতে ও লিখতে পারা। ইংরেজি একজন শিক্ষার্থীকে বিদেশের মাটিতে স্মার্ট বানায়।

রিয়াজ তার লক্ষ্য বিষয়ে বলেন, ব্যাংকিং লাইনে কাজ করতে চাই। একজন গবেষক হতে চাই। আরও উচ্চশিক্ষার জন্য অস্ট্রেলিয়া কিংবা কানাডায় ডিগ্রিও নিতে চাই।

রিয়াজ বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, জীবনের লক্ষ্য স্থির করতে হবে। পরিশ্রম করতে হবে। এতে সঠিক পথ পাওয়া যাবে। পড়াশোনার পাশাপাশি রিয়াজ বর্তমানে মালয়েশিয়াতে ইউনিভার্সেল গ্রুপ অপারেশনে ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত আছেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৭২৭ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০১৫
আইএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মালয়েশিয়া এর সর্বশেষ