ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মালয়েশিয়া

আ’ লীগের নাম ভাঙ্গিয়ে প্রতারণা মালয়েশিয়ায়

পলিটিক্যাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৫, ২০১৫
আ’ লীগের নাম ভাঙ্গিয়ে প্রতারণা মালয়েশিয়ায়

ঢাকা: ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নাম ভাঙ্গিয়ে মালয়েশিয়ায় চলছে চাঁদাবাজি, মানবপাচার ও আদম ব্যবসা। আর এসবের স্বার্থে রাজনৈতিক দলের অঙ্গ-সংগঠনের পরিচয় দিয়ে চলছে গ্রুপিং।

তাদের দ্বন্দ্ব কখনো কখনো গড়াচ্ছে সংঘর্ষে। দেশ ও আওয়ামী লীগ সরকারের ইমেজ সংকট তৈরি করছে এসব দুবৃর্ত্ত। তবে এরা কেউই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কর্মী বা সদস্য নয় বলে জানিয়েছেন দলটির নীতি নির্ধারণী ফোরামের নেতারা।
 
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূহ উল আলম লেলিন বাংলানিউজকে বলেন, ‘দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বিদেশে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলের কোন অঙ্গ-সংগঠন থাকতে পারে না। ’
 
আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রকে অমান্য করে মালয়েশিয়ায় কতিপয় ব্যক্তি লুটছে সুযোগ-সুবিধা। বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া কোন দেশেই রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন না থাকলেও, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নামে চলছে প্রকাশ্য চাদাঁবাজি। যা দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দলের ইমেজ ক্ষুন্ন করছে বলে মনে করছেন প্রবাসীরা।

অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগের নাম ভাঙ্গিয়ে কুয়ালালামপুর থেকে শুরু করে মালয়েশিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলেও কমিটি দিয়ে যাচ্ছেন গুটিকয়েক লোক। আর এ উপলক্ষে অর্ধশিক্ষিত বা অশিক্ষিত শ্রমিকদের কাছ থেকে রিঙ্গিত হাতিয়ে নিচ্ছেন তারা। ব্যবহার করছেন নিজেদের স্বার্থে।
 
গত ৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, মালয়েশিয়া শাখার কমিটি ঘোষিত হয়েছে বলে দাবি করা হয়। ৩১ সদস্য বিশিষ্ট এই কমিটির আহবায়ক রেজাউল করিম রেজা দাবি করেন, ঢাকা থেকে এই কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। কমিটিতে স্বাক্ষর করেছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ফারুক খান।
 
৬ জনকে মালয়েশিয়া আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হয়। মালয়েশিয়া আওয়ামী লীগের আহবায়ক হলেও পরিবার পরিজন নিয়ে ঢাকাতেই বাস করেন মাগুরার রেজাউল করিম। কয়েক মাস পর পর মালয়েশিয়া গিয়ে তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে আসেন।
 
এ সময় ঢাকা থেকে এই কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে বলে মালয়েশিয়ায় প্রচার করা হয়। ঢাকা থেকে বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মালয়েশিয়া গেলেও এই দলটি তাদের অভ্যর্থনা জানাতে শুরু করে। এর আগে বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুললেও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে দলটি।
 
প্রবাসী বাংলাদেশিরা বলেন, দেশে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং মালয়েশিয়ার রাজনৈতিক দলগুলোও এখানে এতো ব্যস্ত নয়, আমাদের ‘মালয়েশিয়া আওয়ামী লীগ’ যতো ব্যস্ত। দেশ থেকে আওয়ামী লীগের কোন নেতা এলে কুয়ালালামপুর এয়ারপোর্টে এরা বিশাল মিছিল নিয়ে হাজির হয়। শ্লোগান দিতে থাকে। প্রায়ই বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশিদের এ আচরণে অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছে। এরপরও থামছে না এসব রাজনীতির চর্চা।
 
মালয়েশিয়া আওয়ামী লীগের এই দলটি সর্ম্পকে নূহ উল আলম লেলিন বলেন, দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আওয়ামী লীগের কোন প্রবাসী শাখা থাকতে পারে না।
 
তিনি বলেন, অফিসিয়ালি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মালয়েশিয়ায় কোন শাখা নেই। আইন অনুযায়ী কোন শাখা থাকতে পারে না। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের আইন অনুযায়ী কোনো রাজনৈতিক দল সেটা করতে পারে না। যেমন, যুক্তরাজ্যের আইন অনুযায়ী যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ করতে পারে, ফ্রান্স আওয়ামী লীগ করতে পারে ইত্যাদি।
 
লেলিন বলেন, এসব ভাতৃপ্রতীম সংগঠন অনেক সময় দাওয়াত দিলে সেখানে আমরা উপস্থিত থাকি। তবে তাই বলে সেটা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কোন অংশ নয়।
 
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস বলেন, মালয়েশিয়া আওয়ামী লীগের মতো দেশের বাইরে হাজার হাজার শাখা রয়েছে। তবে গঠণতন্ত্র অনুযায়ী তারা এটা করতে পারে না। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিদেশে কোন শাখা নেই।  
 
তবে নিজের স্বাক্ষর থাকার বিষয়ে বাংলানিউজকে ফারুক খান বলেন, মালয়েশিয়ায় নতুন কমিটি বানানোর লক্ষ্যে ৩১ জনের আহ্বায়ক কমিটি করা হয়েছে। সেখানে আমার একটা স্বাক্ষর রয়েছে। তাতে আগামী ৬ মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেয়ার কথা বলা হয়েছে। আশা করছি অক্টোবরের মধ্যে দিয়ে দেবে।  
 
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী, বিদেশে রাজনৈতিক দলের অঙ্গসংগঠন থাকতে পারে না। তবে এরা আমাদের আদর্শিক সংগঠন। সরাসরি কোন অংশ নয়।
 
এ বিষয়ে মালয়েশিয়ার রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সেখানে অভিবাসীদের রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়টিতে কড়া হুঁশিয়ারি রয়েছে। এ ধরনের রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম চালানো হলে আইনানুযায়ী বিচারের ব্যবস্থা রয়েছে।
 
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, মালয়েশিয়া শাখার নামে প্যাড ব্যাবহারের বিষয়টি স্বীকার করেছেন রেজাউল করিম রেজা। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, মালয়েশিয়া বলে কোন শাখা নেই। তবে আমরা বঙ্গবন্ধুর অনুসারীরা এর নাম দিয়েছি, মালয়েশিয়া আওয়ামী লীগ। যেহেতু নির্বাচন বিধিমালা অনুযায়ী প্রবাসে আওয়ামী লীগের কোন শাখা সংগঠন থাকতে পারবে না, তাই আমরা বঙ্গবন্ধুর অনুসারীরা করেছি মালয়েশিয়া আওয়ামী লীগ। যেমন, লন্ডন আওয়ামী লীগ, নিউইয়র্ক আওয়ামী লীগ ইত্যাদি।
 
তবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মালয়েশিয়া শাখার প্যাড সম্পর্কে তিনি বলেন, প্যাডটি হয়তো পুরনো।

বাংলাদেশ সময়: ০৯০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৫, ২০১৫
জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মালয়েশিয়া এর সর্বশেষ