ঢাকা: হতাশা বিরাজ করছে মালয়েশিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিকদের মধ্যে। গত কয়েক মাস ধরে প্রতিনিয়ত রিঙ্গিতের মূল্য কমছে, তার ওপর দ্বিগুন হারে চাপানো হচ্ছে বাৎসরিক করের বোঝা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাৎসরিক করের বোঝা অস্বাভাবিক হারে বাড়ানোর কারণে এখন তা প্রবাসী শ্রমিকদের ওপর যেন মড়ার ওপর খাড়ার ঘাঁ।
মালয়েশিয়ার সুবাং জায়ায় নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করেন বাংলাদেশি মো. বাসেত।
বুধবার (০৩ ফেব্রুয়ারি) ফোনে বাংলানিউজকে বলেন, ‘বাংলাদেশে আগের মতো টাকা পাঠাতে পারি না। হুন্ডিতে টাকা পাঠালেও যে খুব বেশি হয় তা নয়। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে রিঙ্গিতের মূল্য ৮ টাকা পড়ে গেছে।
‘আগে মালয়েশিয়া থেকে ৫০০ রিঙ্গিত বাড়িতে পাঠালে সাড়ে ১২ হাজার টাকা পাওয়া যেতো। এখন একই অংকের রিঙ্গিতে আসে আট হাজার তিনশ’ টাকা। এরপরেও নিজে কষ্ট করে বাড়িতে ১২ হাজার টাকাই পাঠাতাম। কিন্তু এখন প্রতিমাসে আরও বাড়তি ১০৪ রিঙ্গিত, মানে ১ হাজার ৭৬৮ টাকা কেটে রাখবে মালিকপক্ষ। যা আমাদের ওপর মড়ার ওপর খাড়ার ঘাঁর মতো’, হতাশার সুরে বলেন তিনি।
চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে মালয়েশিয়া সরকার বিদেশি শ্রমিকদের ওপর নতুন কর আরোপ করেছে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, ম্যানুফাকচারিং এবং কনস্ট্রাকশন শ্রমিকদের বাৎসরিক কর দিতে হবে ২ হাজার ৫০০ রিঙ্গিত। যা আগে ছিল ১২৫০ রিঙ্গিত।
দেশটির বাঙ্গি অঞ্চলে নিয়োজিত আরেক বাংলাদেশি নির্মাণ শ্রমিক ও মুন্সীগঞ্জের ছেলে শফিকুল ইসলাম বলেন, বাৎসরিক কর চুক্তিবদ্ধ কোম্পানির দেওয়ার কথা, কিন্তু তা আমাদের বেতন থেকেই প্রতিমাসে কেটে রাখা হয়।
‘আগে প্রতিমাসে ১১৫০ রিঙ্গিতের বেতন থেকে ১০৪ রিঙ্গিত কেটে রাখা হতো। এখন থেকে ২০৮ রিঙ্গিত কেটে রাখা হবে বলে জানিয়েছে মালিকপক্ষ। ফলে মাসে ৯৪২ রিঙ্গিত বেতন পাবো। যা মাসে ১৮ হাজার টাকাও হয় না। এই বেতন দিয়ে নিজে কিভাবে চলবো, আর বাড়িতেই বা কি পাঠাবো!’
এরই মধ্যে মালয়েশিয়ার শিল্প প্রতিষ্ঠান মালিকদের সংগঠন এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই কর বাড়ানোর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে।
এসব সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান এ নীতির সমালোচনা করে বলছে, এ ধরনের সিদ্ধান্তের কারণে শ্রমিকরা দাসে পরিণত হবেন এবং কারখানার উৎপাদন ও বাজারেও এর বিরূপ প্রভাব পড়বে।
মাস্টার্স বিল্ডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব মালয়েশিয়ার ডেপুটি প্রেসিডেন্ট ফু চেক লি বলেন, এ কর বৃদ্ধির কারণে মালয়েশিয়ায় নির্মাণ কাজে আর বিদেশি শ্রমিকরা আসতে চাইবেন না। শুধু নির্মাণ শিল্প নয়, কর বৃদ্ধির প্রভাব সড়ক যোগাযোগ, কাঁচামাল, সেবা এবং ম্যানুফেকচারিংয়েও পড়বে।
বর্তমানে অর্থনৈতিক মন্দায় সরকারকে এ ধরনের পদক্ষেপ না নেওয়ার জন্যে অনুরোধ করেছেন তিনি।
স্থানীয় সময় বুধবার কুয়ালালামপুরে মালয় কন্ট্রাক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন, গিল্ড অব ভূমিপুত্রা কন্ট্রার্ক্টস, মালয়েশিয়ান অ্যান্ড ইন্ডিয়ান কন্ট্রার্ক্টস এবং মালয়েশিয়ান এয়ার-কন্ডিশনিং অ্যান্ড রেফ্রিজারেশন অ্যাসোসিয়েশন যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেছে।
এতে ফু চেক লি বলেন, সরকার চাইলে অবৈধ শ্রমিকদের বৈধতা দিয়েই ৫০ লাখ রিঙ্গিত রাজস্ব আদায় করতে পারে।
একদিকে কর বৃদ্ধি, অন্যদিকে বেতন কমে যাওয়ায় বিদেশি শ্রমিকরা চুক্তিভিত্তিক দাসে পরিণত হবে বলে মনে করছে পার্তি স্যোশিয়ালিজ মালয়েশিয়া (পিএসএম)।
সংস্থাটি বলছে, ২০১৩ সালে সর্বনিম্ন বেতন নির্ধারণের পর থেকে শ্রমিকদের বেতন থেকেই মালিকদের কর সংগ্রহের সুবিধা দেওয়া হয়েছিল।
শ্রমিকদের ওপর এ বোঝা না চাপিয়ে মালিকদেরই কর বহন করা উচিত। প্রয়োজনে প্রতিষ্ঠানে বিদেশি শ্রমিকের সংখ্যা কমিয়ে আনার পরামর্শ দিয়েছে পিএসএম।
এ সিভারাজান নামে এক ব্যক্তি বলেন, নিয়োগের জন্য বিদেশি শ্রমিকদের একবার ফি দিতে হচ্ছে। এরপর তাদের ওপর আবার বাড়তি করের বোঝা দেওয়া উচিৎ নয়।
কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই বিদেশি শ্রমিকদের ওপর কর বাড়ানোর কড়া সমালোচনা করেছে মালয়েশিয়ার ৫৫টি স্থানীয় ব্যবসায়ী সংগঠন।
এর আগে মঙ্গলবার (০২ ফেব্রুয়ারি) হঠাৎ শ্রমিকদের বার্ষিক কর বাড়ানোর ঘোষণায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মালয়েশিয়ার শিল্প মালিকরা।
অর্থনৈতিক মন্দাবস্থায় এ ধরনের বাড়তি চাপ ব্যবসায় বিরূপ প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন তারা।
দেশটির শিল্প মালিকদের সংগঠন এফএমএম বলেছে, ইতোমধ্যে সরকার বিদেশি শ্রমিকদের জন্য যে নতুন কর কাঠামো ঘোষণা করেছে, সেটা হতাশাজনক। এক্ষেত্রে শিল্প মালিকদের অবস্থা বিবেচনা করেনি সরকার।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০১৬
এমএন/এমএ