ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মালয়েশিয়া

গো-কার্ট কার ইঞ্জিনিয়ার মাহাবুব

মাহমুদ খায়রুল, কুয়ালালামপুর করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৭ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০১৬
গো-কার্ট কার ইঞ্জিনিয়ার মাহাবুব

শাহআলম (মালয়েশিয়া) থেকে: সার্কিটে দুই গাড়ির সংঘর্ষ। দ্রুত বাইক চালিয়ে উদ্ধার করতে হবে চালকদের।

থামাতে হবে দ্রুতবেগে আসা অন্য গাড়িগুলোকে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে পৌঁছে যান তিনি। খুব বড় দুর্ঘটনা হবার আগেই নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন সবাইকে।

এভাবেই মালয়েশিয়ার শাহআলম সার্কিটে (গাড়ি রেসের পথ) গো-কার্ট গাড়ির তত্ত্বাবধানের কাজ করছেন শরীয়তপুরের মাহাবুব। গেল ছয় বছর ধরে এখানে নিয়োজিত তিনি। ইঞ্জিন চালু করতে দৌড়ে যাচ্ছেন, আবার চাকা পরিবর্তনে সময় দিচ্ছেন। কখনো কোনো গাড়ি ট্রেকে বিকল হয়ে পড়লে ছোট মোটরবাইক চালিয়ে উদ্ধার করছেন সেগুলোকে।

পৃথিবীতে এফ-ওয়ান রেসিংয়ের জনপ্রিয়তার কথা সবাই নিশ্চয় শুনেছেন। বাংলাদেশে তেমন জনপ্রিয় না হলেও প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ এবং ইউরোপে কার রেসিং বলতে এফ ওয়ান’র নাম সবার প্রথমে চলে আসে। তুমুল গতিতে গাড়িগুলোর হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলে।

এফ ওয়ান রেসিংয়ের জন্য তৈরি হতে হলে সব চালকদের যে ধাপগুলো সফলভাবে পার হতে হয় তার মধ্যে গো-কার্ট রেসিং বেশ গুরুত্বপূর্ণ এবং জনপ্রিয়। ৮০, ১০০ ও ১২৫ সিসির ইঞ্জিনের ছোট গাড়িতে চলে প্রতিযোগিতা। আন্তর্জাতিক সার্কিটগুলোর মধ্যে মালয়েশিয়ায় রয়েছে তিনটি। শাহআলম, সেপাং ও লংকাবিতে।

কাজের ফাঁকে ফাঁকেই মাহাবুবের সঙ্গে কথা। মাহাবুবের বাড়ি বাংলাদেশের শরীয়তপুর জেলায়। সপ্তাহে সাতদিন কাজ করেন মাহাবুব। পাঁচদিন রেস্তেরায় আর দু’দিন এই রেসিং সার্কিটে। তামাটে শরীরে তার হাসির ঝিলিক। বললেন, ‘কাজই আমার সব। প্রতিদিন কাজ করি। কাজ না করলে ভালো লাগে না। আর আমার মতো কালা চেহারার মানুষ কাজ না করে কী করবে!’
শাহআলম আন্তর্জাতিক গো-কার্ট সার্কিট তৈরি হয়েছে শাহআলম ফুটবল স্টেডিয়ামের পাশে। কুয়ালালামপুর থেকে গাড়িতে যেতে লাগে ২০ মিনিট। গো-কার্ট রেসিং -এ ১০০ সিসির গাড়িতে রেস করতে লাগে ৮৫ রিঙ্গিত, ৮০ সিসি গাড়ির জন্য গুণতে হবে ৪৩ রিঙ্গিত। সময় ১০ মিনিট।

মালয়েশিয়ানদের রেসিং-এর নেশা ব্যাপক। সব ধরনের রেসিং বেশ জনপ্রিয় এ দেশে। মাহাবুব জানান, অনেক মালয়েশীয় এই রেসিংয়ের পেছনে দিনে ৭-৮ হাজার রিঙ্গিত (১৪-১৬ হাজার টাকা) খরচ করেন। কারো কারো নিজস্ব রেসিং গাড়ি রয়েছে। সেগুলো নিয়ে আসেন। রয়েছে নিজস্ব মেকানিক। আন্তর্জাতিক রেসিং হয় এখানে। বিভিন্ন দেশের চালকরা আসেন। খুব কাছ থেকে দেখেছেন তিনি।

স্ত্রী সন্তানকে ছেড়ে ভিনদেশে মন টেকে না তার। অন্য কোনো উপায়ও নেই। ছয় বছরের মেয়ের জন্য মন খারাপ হয় মাহাবুবের। মেয়ের কথা বলতেই মুখ কিছুটা ফ্যাকাসে হয়ে যাচ্ছিল তার।

বাংলাদেশি প্রায় ৫-৬ জন রয়েছেন যারা সার্কিট এবং গাড়িগুলোর দেখাশুনা করেন। সার্কিটের মেরামত, গাড়ির মেরামত, রেসিং ফ্ল্যাগ বহন, দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ সব দায়িত্বেই আছেন বাংলাদেশিরা। সবাই তাদের বলেন, ‘গো-কার্ট ইঞ্জিনিয়ার’।

তেজ নিয়ে মাহাবুব বললেন, ‘অনেক ভালা ড্রাইভারের থেকেও আমি ভালো চালাতে পারি ভাই। আপনিও পারবেন না আমাগো লগে। ’  

দিন গড়িয়ে এসেছে। ডাক চলে এল মাহাবুবের। আর কথা বলা গেল না। গাড়িগুলোকে পরিষ্কার গ্যারেজে ধাক্কা দিয়ে ওঠাতে হবে তাকে। আবার আগামীকালের প্রস্তুতি।

পত্র-পত্রিকায় ছাপবে শুধু সেই সব তেজি চালকদের কথা, যারা কত কম সময়ে রেকর্ড গড়লেন, কোন টুর্নামেন্টে জয় করলেন, কয়টি ট্রফি পেলেন। মাহাবুবের মতো ইঞ্জিনিয়াররা গাড়ি মেরামত আর ধাক্কা দিয়ে যান। তারা জীবন ধারণের প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন!

বাংলাদেশ সময়: ২০৫২ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০১৬
এমজেএফ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মালয়েশিয়া এর সর্বশেষ