(মালাক্কা) মালয়েশিয়া থেকে: নিজের মেধা ও যোগ্যতায় হয়েছেন ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশনের (আইএমও) সহকারী পরামর্শক। দেশের মেরিন শিক্ষার্থীদের জন্য সর্বশেষ আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী তৈরি করেছেন চারটি কোর্সের পাঠ্যক্রম।
এ কাজে সরকারের কাছ থেকে নেননি কোনো সম্মানি বা পারিশ্রমিক। নিজের মেধা ও মমনশীলতার সবটুকুই ঢেলে দিয়েছেন দেশের মানুষের কল্যাণে। দেশকে ভালোবেসে।
তিনি চিফ ইঞ্জিনিয়ার মুহাম্মদ হানিফ দেওয়ান (৪১)। মালয়েশিয়ান মেরিটাইম একাডেমির শিক্ষক। পড়ান মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে।
বাংলাদেশ মেরিন একাডেমির ৩১ ব্যাচের মেধাবী সেই শিক্ষার্থী দেশ-বিদেশের আন্তর্জাতিক জাহাজে সফলভাবে দায়িত্ব পালন শেষে শিক্ষকতার পাশাপাশি নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন উচ্চতর গবেষণায়।
মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং- এ ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলোজি মালয়েশিয়ার অধীনে করছেন পিএইচডি।
ঢাকার আশুলিয়া থানার কাঠগড়া গ্রামের ইদ্রিস আলী দেওয়ানের ছেলে মুহাম্মদ হানিফ দেওয়ান নিজের মেধা ও চেষ্টায় আজ প্রতিষ্ঠিত প্রবাসে। বিভিন্ন দেশের নবীন ক্যাডেটদের কাছেও প্রিয় শিক্ষক তিনি।
থাকেন রাজধানী কুয়ালালামপুর থেকে ১৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে মালয়েশিয়ার প্রথম শহর, প্রাচীন বন্দর নগরী বলে পরিচিত মালাক্কায়।
১৯৯৬ সালে মেরিন একাডেমি থেকে ব্যাচেলর অব মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করে কাজ করেন বিভিন্ন দেশি ও আন্তর্জাতিক শিপিং কোস্পানিতে।
দেশের মেরিন শিক্ষার সম্ভাবনা, মান ও সংকট নিয়ে নানা বিষয়ে কথা বলেন বাংলানিউজের সঙ্গে।
তিনি জানান, বিশ্ব শিপিং সেক্টরে বাংলাদেশি নাবিকদের যে সুনাম রয়েছে তা ধরে রাখাটাই এখন চ্যালেঞ্জ। বেসরকারি পর্যায়ে গড়ে ওঠা ভুইফোঁড় কথিত কিছু মেরিন একাডেমি আজ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বীকৃত। আমাদের নাবিকদের দক্ষতা, পরিশ্রম আর পেশাদারিত্বকে ঠেলে দিয়েছে প্রশ্নের মুখে।
এক সময়ে দেশে বেসরকারি মেরিন কলেজে ভাইস প্রিন্সিপাল হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসা এ মেরিন ইঞ্জিনিয়ার জানান, শিপিং সেক্টরে আমাদের ঐতিহ্য আর অবস্থান ধরে রাখতে হলে আধুনিক প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। পাশাপাশি নাবিকদেরকে দক্ষ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কেও ধারণা রাখার ওপর ও জোর দেন তিনি।
মেরিন শিক্ষাখাতের নৈরাজ্য নিয়েও হতাশা তার। সরকারি-বেসরকারি ১৯টি মেরিন একাডেমির শিক্ষার মান ও বেশ কয়েকটি লাইসেন্স স্থগিত করার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, এ শিক্ষায় বাণিজ্য আর অনিয়ম ঢুকে পড়েছে। যার মাসুল গুনতে হচ্ছে মেরিন ক্যাডেটদের।
বাংলাদেশ নৌ পরিবহন অধিদপ্তর থেকে লাইসেন্স নেওয়া ১৮টি বেসরকারি মেরিন একাডেমির মধ্যে মাত্র ১টি ‘এ’ ক্যাটাগরিতে। দু’টি রয়েছে ‘বি’ ক্যাটাগরিতে।
বাকিদের অবস্থাও ততোটা ভালো না। যে কারণে দেশে মুখ থুবড়ে পড়েছে বিশেষায়িত এ শিক্ষা ব্যবস্থা।
আন্তর্জাতিক বাজারে মেরিনারদের চাহিদার বিপরীতে এ পরিস্থিতিতে নবীন ক্যাডেটদের চাকরি পেতে সমস্যা হচ্ছে। তারা বিদেশি জাহাজে ডাক পাচ্ছে না।
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শেষে ২৪ থকে ৩৬ মাস জাহাজে চাকরি করতে হয় শিক্ষানবিস বা ক্যাডেট হিসেবে।
তারপর কোর্স করে অনেক গুলো পরীক্ষা দিতে হয়। এসব পরীক্ষা উত্তীর্ণ হলে দেয়া হয় লাইসেন্স বা সার্টিফিকেট অব কম্পিটেন্সি (সিওসি )। এভাবেই ধারাবাহিক কম্পিটেন্সি পরীক্ষার মাধ্যমে জুনিয়র অফিসার বা ইঞ্জিনিয়ার থেকে দিনে দিনে তাকে হতে হয় ক্যাপ্টেন বা চিফ ইঞ্জিনিয়ার।
তাই মেরিন একাডেমির ক্যাডেটদের সি টাইম ও পরীক্ষায় অনেক ছাড় দিয়ে এ শিক্ষায় ফাঁক ফোঁকড় রাখা হলে তা নিজেদেরই সর্বনাশ ডেকে আনবে।
আমাদের মেরিন শিক্ষা ব্যবস্থাকে যুগোপযোগী ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে উন্নীত করা এখন সময়ের দাবি।
ধরেন, এই মানদণ্ড যখন বিশ্বজুড়ে স্বীকৃতি পাবে, তখন আন্তর্জাতিক জাহাজ প্রতিষ্ঠানগুলোই খুঁজে নেবে আমাদের ক্যাডেটদের।
অথচ আমাদের অবস্থা এমন একটি অবস্থানে দাঁড়িয়েছে, যেখানে শিক্ষার্থীর মেধা ও দক্ষতা নিজ দেশেই আজ প্রশ্নবিদ্ধ। যার নেপথ্যে গুটি কয়েক লোকের অসাধুতা। এ অবস্থা চলতে পারে না।
এ ছাড়াও রয়েছে নানান সমস্যা। কোনো ক্যাডেট সিঙ্গাপুরের বন্দরে থাকা বিদেশি কোনো জাহাজে যোগদিতে গেলে তাকে ভিসা গ্রহণের প্রক্রিয়ায় ভেতরে যেতে হয়। অথচ প্রতিবেশি দেশের নাগরিকরা পোর্ট এন্ট্রি ভিসা নিয়ে অনায়াসে কাজে যোগ দিচ্ছে। একই অবস্থা ইউরোপের ক্ষেত্রেও।
যে কারণে একজন মেধাবী ক্যাডেটকেও পড়তে হয় নানা বিড়ম্বনায়। এ জন্যে প্রয়োজন নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন।
বাংলাদেশের মেরিন শিক্ষাকে নিয়ে নানান স্বপ্ন নৌ চিফ ইঞ্জিনিয়ার মুহাম্মদ হানিফ দেওয়ানের। মালয়েশিয়ান মেরিটাইম একাডেমির জনপ্রিয় এ শিক্ষক হতে পারেন দেশের নবীন ক্যাডেটদের আদর্শ।
বাংলাদেশ সময়: ০৬৪৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০১৬
জেডআর/এসএইচ