কুয়ালালামপুর (মালয়েশিয়া) থেকে: বয়স ৮০ হতে বাকি মাত্র ১ বছর অথচ নুরুল মুস্তাফার কাজকর্মের ধরন দেখে মনে হয় তিনি ১৯ বছরের যুবক। জীবনের মানেটাও তার কাছে অন্যরকম।
রাজধানী কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশি অধ্যুষিত কোতারায়ায় একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে বেশ ব্যস্ত দেখা গেলো নুরুল মোস্তফাকে।
কেউ ফোনে জানতে চাইছেন ফ্লাইট সূচি। কেউ বা ভাড়া। আবার কেউ সরাসরি এসে বুকিং দিচ্ছেন দেশে ফেরার টিকিট। এতসবে কোন বিরক্তি নেই। সবার সাথেই হাসিমুখে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
জন্মস্থান চট্টগ্রামের মীরেরসরাই উপজেলার কাটাছড়া গ্রামে। বাবা মৃত আহমেদুর রহমান। এক ভাই তিন বোনের মধ্যে দ্বিতীয় নুরুল মুস্তাফা দেশের রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে চাকরি করেছেন দীর্ঘদিন।
মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশ নিয়েছেন। জেড ফোর্সের অধীনে যুদ্ধও করেছেন। দেশ স্বাধীনের পর রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা গড়ার কারিগরদের অন্যতম ছিলেন তিনি।
দেশে প্রথমবারের বিমান ভাড়া নির্ধারকদের একজন হিসেবে অনেকেই তাঁকে চেনেন "ট্যারিফ মুস্তাফা" হিসেবে।
স্বাধীনতার আগে যোগ দেন পাকিস্তান নৌবাহিনীতে। সেখান থেকে সরাসরি কমিশন পেয়ে ১৯৬০ সালে নৌবাহিনী ছেড়ে যোগ দেন পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের (পিআইএ) বিপণন বিভাগে।
১৯৬২ সালে থেকে বিমান সংস্থায় কাজ করার সময়ে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন তিনি। জেড ফোর্সের হয়ে যুদ্ধ করেন রণাঙ্গনে।
দেশ স্বাধীনের পর রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা গড়ার কারিগরদের একজন নুরুল মুস্তাফা। ১৯৯৬ সালে বিমানের ডিজিএম মার্কেটিং পদ থেকে অবসর নেন তিনি। তার আগে ১৯৮১ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত কান্ট্রি ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন মালয়েশিয়ায়। থাইল্যান্ডের ব্যাংককেও ছিলেন এরিয়া ম্যানেজারের দায়িত্বে। ছিলেন বিমানের প্রথম কর্মাশিয়াল ইন্সট্রাক্টর। সন্তানরা কেউ আমেরিকায়। কেউ অস্ট্রেলিয়ায়। কেউ বা মালয়েশিয়ায়। স্ত্রী জরিনা পারভিন বিনতি মোহাম্মদ সফি। ২০১৪ স্পাউস ভিসায় আসেন দেশটিতে। বন্ধুদের নিয়ে ফান ওয়ার্ন্ড ট্রাভেল এন্ড ট্যুরিজম নামের এজেন্সি খুলে সেখানেই কাজ করছেন তিনি।
নুরুল মুস্তাফা বাংলানিউজকে জানান, এটা ঠিক আমার কোন পিছুটান নেই। নেই বাড়তি কোন চাহিদা। স্ত্রী থেকে সন্তান। প্রতিষ্ঠিত সবাই। তা সত্ত্বেও কারো মুখাপেক্ষী হয়ে বাঁচার ইচ্ছে নয়। বরং এই স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করছি। এটাই ভালো লাগে। দেশের শ্রমিক ভাইয়েরা আমার কাছে আসেন। টিকিট কাটেন। আমি লাভের বড় অংশটাই ছেড়ে দিই। তাদের সেবায় যে আমার সময় কাটে সেটাই বড় প্রাপ্তি।
আরেকটি বিষয়। নিজেকে সব সময়ে হাসিখুশি রাখতে চাই। ফিট রাখতে আর সুখী হতে হাসিখুশি থাকাটাই গুরুত্বপূর্ণ। কেউ যদি বুড়ো বলেন। সমস্যা নেই। এই বয়সেও একটিভ আছি। সেখানে বয়সটা আসলে কিছুই নয়।
যোগ করেন প্রায় ৮০ বছরের এই তরুণ!
তানিয়া সামলাচ্ছেন ‘রসনা বিলাস’
মালয়েশিয়ায় দেশি খাবারের উদ্যোগই পাল্টে দেয় কবিরের জীবন
বাংলাদেশ সময়: ১৩০৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৬
আরআই