কুয়ালালামপুর (মালয়েশিয়া) থেকে: "ঢাকা- কুয়ালালামপুর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এখন অসাধারণ ও অনন্য উচ্চতায়। ছোট্ট একটা উদাহরণ দিই।
শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে গুলশানে জঙ্গি হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানালেন। সেই ক্রান্তিকাল মোকাবেলায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাহসী ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করলেন। বললেন, জঙ্গিবাদ এখন বৈশ্বিক সমস্যা। এটা মোকাবেলায় একযোগে কাজ করারও অঙ্গীকার করলেন তিনি।
ততক্ষণে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো কূটনীতিকদের লাইন থমকে গেছে। সবার দৃষ্টি নিবদ্ধ আমাদের দিকে। সবার কৌতূহল। কেন আর কি বিষয়েই বা কথা হচ্ছে আমাদের।
রাষ্ট্রদূত হিসেবে নয়। এটা মালয়েশিয়ার কাছে অনন্য আর অসাধারণ বাংলাদেশের স্বীকৃতি
বাংলাদেশ-মালয়েশিয়ার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে নিজ বাসভবনে বাংলানিউজের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় এ কথাই বলছিলেন মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার শহীদুল ইসলাম।
নানা বর্ণ, ধর্ম, সংস্কৃতির মানুষের দেশ মালয়েশিয়া। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কেন্দ্রে অবস্থিত দেশটিতে বাংলাদেশের দূত হিসেবে দেড় বছর আগে হাইকমিশনারের দায়িত্বে আসেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ১৯৮৪ ব্যাচের পেশাদার এই কূটনীতিক।
এর আগে সৌদি আরবে রাষ্ট্রদূত ও দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার হিসেবে কাজ করেছেন তিনি।
এ ছাড়াও ব্রাসেলস, কলম্বো, আবুধাবি, রোম ও লসএঞ্জেলেসে বাংলাদেশ মিশনের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে মাস্টার্স এবং বেলজিয়ামের ইউনির্ভাসিটি লিব্রে ডি ব্রুসেলস থেকে আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিষয়ে দ্বিতীয়বার মাস্টার ডিগ্রি অর্জন করা এই কূটনীতিক মালয়েশিয়ায় অাসার পর দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে নিয়ে যান অনন্য উচ্চতায়।
দেশের ভাবমূর্তি উন্নয়ন, দূতাবাসকে সুবিধাজনক জায়গায় স্থানান্তর, অভিবাসী শ্রমিকদের স্বার্থ সুরক্ষা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণসহ নানা বিষয়ে কাজ করেন তিনি।
দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অবদানের প্রশংসা করে শহীদুল ইসলাম বলেন, তাদের কর্ম, শিষ্টাচার, মেধা ও প্রজ্ঞা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছে। এখন কমিউনিটির পক্ষ থেকে সভা করলেও হৈচৈ বা কোন গোলমাল হয় না। এটাই সম্ভাবনার বাংলাদেশ। নতুন বাংলাদেশ। এমন ভালো কিছুই দেখতে চাই আমরা। মালয়েশিয়াই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য সহযোগী দেশ। এশিয়ায় ভারত ও পাকিস্তানের পরই আমাদের অবস্থান।
বাংলাদেশ প্রতি বছর মালয়েশিয়া থেকে প্রায় ২০০ কোটি ডলারের পণ্য কেনে। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় রপ্তানি হয় ১৩ কোটি ডলারের পণ্য। আমাদের বাণিজ্যের যে লক্ষ্যমাত্রা। তার চেয়েও কিন্তু আমরা অর্জন করেছি ৫৫ ভাগ বেশি।
মালয়েশিয়ার সাথে আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক এটা উচ্চতায়। সেখানে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অসাধারণ সম্মান এবং তা সকল স্তরেই।
কারণ দুটি দেশেরই নেতৃত্বে এখন দ্বিতীয় প্রজন্মের দুজন বলিষ্ঠ নেতা। বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সন্তান শেখ হাসিনা। যিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী এবং বাংলাদেশের তিনবারের একাদশতম প্রধানমন্ত্রী।
অপরদিকে মালয়েশিয়ার ৬ষ্ঠ ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নাজিব তুন আবদুর রাজাকের বাবা তুন আব্দুর রাজাক হোসেইন যখন দেশটির দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তখন বঙ্গবন্ধুও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীর মায়ের নামে "শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে বিশেষায়িত হাসপাতাল ও নার্সিং কলেজের" উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দাতো শ্রী মোহাম্মদ নজীব বিন তুন আব্দুল রাজাকের উপস্থিতি দুই দেশের নিবিড় বন্ধুত্বের নজির।
মালয়েশিয়াই প্রথম সোর্স কান্ট্রি হিসেবে ঘোষণা করেছে বাংলাদেশকে। মালয়েশিয়ার তালিকায় থাকা ১৫টি দেশের অবৈধ জনশক্তির মধ্যে ৬১ ভাগ বৈধতা পাবে কেবল বাংলাদেশেরই। অবশিষ্ট ৩৯ ভাগ বৈধতা পাবে ১৪টি দেশের। আর শ্রমবাজার খুলে যাবার সাথেই এই খাতে অফুরন্ত সম্ভাবনা অপেক্ষা করছে বাংলাদেশের জন্যে।
এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর গতিশীল নেতৃত্বের প্রতি আস্থা রেখে দেশটির ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছেন।
সম্প্রতি দেশে ১৩'শ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুত কেন্দ্র প্রতিষ্ঠায় চুক্তি করেছেন দেশটির ব্যবসায়ীরা।
আসলে এসব কিছুই নতুন এক বাংলাদেশের প্রতিবিম্ব। যোগ করেন হাইকমিশনার শহীদুল ইসলাম।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০১৬
আরআই