কোয়ানতান (মালয়েশিয়া) থেকে: দেশে বিসিএস দিয়ে যোগ দিয়েছিলেন মৎস্য বিভাগে। ছিলেন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কেন্দ্রে অবস্থিত দেশটিতে যেন আলোকিত আরেক বাংলাদেশ।
তিনি অধ্যাপক আহমেদ জালাল খান চৌধুরী (৫৭)। ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়ার বিজ্ঞান অনুষদের পোস্ট গ্রাজুয়েট ও রিসার্চ বিভাগের ডেপুটি ডিন। সাতক্ষীরা জেলার পলাশপুরের চৌধুরী বাড়ির এই সন্তান এখন অনেকের কাছে আদর্শ।
বাবা মৃত আব্দুল জলিল খান চৌধুরী। ছিলেন খাদ্য বিভাগের "ফুড পরিচালক"।
তিন ভাই, তিন বোনের মধ্যে সবার ছোট আহমেদ জালাল খান। বিসিএস পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে যোগ দেন মৎস বিভাগে। প্রথম পোস্টিং কক্সবাজারের মৎস ও চিৎড়ি খামারে। এরপর রামুতে উপজেলা মৎস কর্মকর্তা। সরকারি চাকরি থাকা অবস্থায় স্কলারশীপ নিয়ে মালয়েশিয়ায় যান তিনি।
সেখানে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। অত:পর অবসর নিতেই ডাক আসে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার।
এর আগে মালয়েশিয়ায় জনপ্রিয় ও বিলুপ্ত প্রায় মহোশোল মাছের গ্রোথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিষয়ে গবেষণার মাধ্যমে দেশটিতে সাড়া ফেলে দেন তিনি।
একের পর এক সফল গবেষণা আর দেশ বিদেশের জার্নালে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর গবেষণাধর্মী প্রতিবেদনের মাধ্যমে তিনি দ্রুত খ্যাতনামা অধ্যাপকদের নজরে আসেন।
বিজ্ঞান অনুষদে বায়ো টেকনোলজি বিভাগে ২০০০ সালে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দিয়ে ২০০৬ সালে হন সহযোগী অধ্যাপক। ওই বিভাগে প্রথম অধ্যাপক হয়ে ইতিহাস তৈরি করেন তিনি। বাংলাদেশি হিসেবে গর্বের স্থানে নিয়ে আসেন নিজের দেশকে। এছাড়াও হন ডেপুটি ডিন।
নিজের হাতে গড়ে তোলা এই বিভাগে ১০টি দেশের পোস্ট গ্রাজুয়েট শিক্ষার্থী রয়েছেন শতাধিক।
খ্যাতনামা এই বিশ্ববিদ্যালয়টির নীতি নির্ধারক কমিটি প্রফেসরস্ কাউন্সিলের মেম্বর ছাড়াও প্রমোশন কমিটি ও পোষ্ট গ্রাজ্যুয়েট কমিটির সদস্য তিনি।
গবেষণায় ইতোইমধ্যে তার সাফল্যের ঝুঁড়িতে রয়েছে অনেক পদক ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।
চীনের আসন্ন আন্তর্জাতিক ক্লিনওয়েস ২০১৬ কনফারেন্সে কো-চেয়ারম্যান এবং কী নোট স্পীকার হিসেবেও মনোনীত হয়েছেন তিনি।
১৯৯০ সালে রংপুরের পীরগঞ্জের চৌধুরীবাড়ির মেয়ে মুশাররাত মনসুরকে বিয়ে করেন তিনি।
ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী আহমেদ গালিব খান চৌধুরী (২১) মেয়ে ফারজানা ফাইজা জালাল (১৬) কে নিয়েই এই দম্পতির পরিবার।
মেঝো ভাই আহমেদ কামাল খান চৌধুরী দেশে প্রাইম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বড়ভাই আহমেদ জামাল খান চৌধুরী ছিলেন পদ্মা ওয়েলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)।
জালাল খান বাংলানিউজকে জানান, শিক্ষার্থীদের প্রথমে নিজেকে তৈরি করতে হবে। নিজেকে গড়ে তোলার মনোভাব থাকলেই সফলতা আসতেই হবে। এ ছাড়াও বিদেশি জার্নালগুলোতে নিজের গবেষণা তুলে ধরতে পারলে অন্য সকলের কাছাকাছি আসার সুযোগ মিলবে।
তিনি জানান,মৎস খাতে বাংলাদেশ বহুদূর এগিয়েছে। বিশেষ করে স্বাদু পানিতে মাছ চাষে বিপ্লব ঘটেছে। তবে মালয়েশিয়ার চিত্র ভিন্ন। এখানে সামুদ্রিক মাছের ওপর নির্ভরতা বাড়তে থাকায় চাহিদাও বেশি।
‘উচ্চ শিক্ষায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য সম্ভাবনার দ্বার খুলে রেখেছে মালয়েশিয়া। আমরা চাই। উচ্চতর শিক্ষা আর গবেষনায় দেশ থেকে মেধাবীরা আসুক। অন্তত দেশের শিক্ষার্থীদের মাঝে যদি নিজের জ্ঞানের আলো জ্বালাতে পারি। তবে সেটাই হবে আমার বড় প্রাপ্তি। ’, যোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০৬২৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৬
আরএইচএস/