কুয়ালালামপুর (মালয়েশিয়া) থেকে: চাইলেই বিনে পয়সায় চষে ফেলা যাবে কুয়ালালামপুর। এজন্য আছে বিনা ভাড়ার গোকেএল।
মোট ৪টি রুটে গোকেএল। এসব রুটের পাশেই পড়বে কুয়ালালামপুরের অধিকাংশ দর্শনীয় স্থান। তাই কুয়ালালামপুরের রঙ-রূপ-ঐতিহ্য আর গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক স্থানগুলো কোনো পয়সা খরচ ছাড়াই দেখে নেওয়া যাবে গোকেএল এর কল্যাণে।
যাত্রীদের প্রিয় এই বাসে কখন কোন স্টপেজ অতিক্রম করছে, কোন স্টপেজ সামনে আসছে, তারপরে কোন স্টপেজ আসবে সেসব নিয়মিত বলে দেওয়া হয় স্পিকারে। তাই কার্যত এ বাস পালন করে চলমান ট্রাভেল গাইডের ভূমিকা।
প্রতিটি গোকেএল বাসের যাত্রী ধারণ ক্ষমতা ৬০। পৃথিবীর প্রায় সব দেশের পর্যটকই এ বাসে নিয়মিত সওয়ার হয়। তাই পিক আওয়ারে ঠাঁই থাকে না তিল ধারনের। তবে যাত্রীরা পরস্পরের প্রতি সহনশীল হওয়ায় বাংলাদেশের যাত্রী বোঝাই বাসগুলোর মতো বাকতিতণ্ডার ঘটনা ঘটে না। ২০১২ সালের ১ সেপ্টেম্বর চালু হওয়া গোকেএল বর্তমানে গ্রিন, পার্পেল, রেড ও ব্লু রুটে চলাচল করে। এই বাসের অপারেশন আওয়ার সোম থেকে বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা থেকে রাত ১১টা। তবে শুক্র ও শনিবার সকাল ৬টা থেকে রাত ১টা এবং রোববার সকাল ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত চলে গোকেএল। পিক আওয়ারে সকাল ৭টা থেকে ৯টা ও সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রতি ৫ মিনিট পর-পর এবং অফ পিক আওয়ারে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত প্রতি ১০ মিনিট অন্তর এই বাস চলে। রাত ৮টা থেকে ১১টা ও ১টা পর্যন্ত নরমাল আওয়ারে প্রতি ১৫ মিনিট পরপর চলে ফ্রি বাস।
ফ্রি বাসে সবুজ রঙের (গ্রিন রুট) কেএলসিসি-বুকিত বিনতাঙ-কেএলসিসি রুটের দৈর্ঘ্য ৭.৪ কিলোমিটার। জ্যাম না থাকলে সময় লাগে ৩৮ মিনিট। এই রুটে মোট স্টপেজ ১৪টি। এই বাস রুটের কেএলসিসি বা কুয়ালালামপুর কনভেনশন সেন্টারের কাছে অ্যাকুরিয়া কেএলসিসি, কেএল সিটি সেন্টার স্টপেজের পাশে পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার ও এলআরটি স্টেশন।
এছাড়া মাটিক বা মালয়েশিয়ান ট্যুরিজম ইনফরমেশন সেন্টার স্টপেজে পাওয়া যাবে ভ্রমণের প্রয়োজনীয় তথ্য। কনকর্ড হোটেল স্টপেজে আছে মনোরেল স্টেশন। প্যাভিলিয়ন ও বুকিত বিনতাং স্টপেজে কেনাকাটার স্বর্গ। এই দুই স্টেশন থেকে মনোরেলেও চড়া যায়। সিটি ব্যাংক স্টপেজে আছে এলআরটি স্টেশন। এই রুটেই পড়বে হোটেল মায়া, রেনেসাঁ, কনকর্ড, সাংগ্রিলা, মান্দারিন, গ্র্যান্ড হায়াত, ইসতানা, ওয়েস্টিন, জো ম্যারিয়ট, মিলেনিয়াম ইত্যাদি নামকরা হোটেল। পার্পেল রঙের জালান সুলতান মোহাম্মদ (পাসার সিনি)-বুকিত বিনতাঙ-জালান সুলতান মোহাম্মদ রুটের দৈর্ঘ্য সাড়ে ৬ কিলোমিটার। জ্যাম না থাকলে সময় লাগে ৩৬ মিনিট। মোট বাস স্টপেজ ১৫টি। এই রুটে পাসার সিনিস্টপেজে এলআরটি, মিউজিয়াম টেলিকমে জাদুঘর, মিনারা অলিম্পিয়া স্টপেজে মিনার, কেএল টাওয়ার স্টপেজে কেএল টাওয়ার, প্যভিলিয়ন ও বুকিত বিনতান স্টপেজে কেনাকাটার পাশাপাশি মনোরেল স্টেশন এবং কোতারায়ায় অন্যান্য বাসে চড়ার সুযোগ আছে। এই রুটেও আছে ইসতানা, ওয়েস্টিন, জো ম্যারিয়ট ও মিলেনিয়াম এর মতো বিখ্যাত সব হোটেল।
দু’টি রুটই দ্য ওয়েল্ড, বিসমা লিম ফু অঙ, প্যাভিলিয়ন ও আইন আরাবিয়া, বুকিত বিনতাং আর স্টারহিল গ্যালারি হয়ে যায় বলে এক রুট থেকে অন্য রুটের বাস বদল করা যায় অনায়াসে।
লাল রুটের বাস চলে কেএল সেন্ট্রাল থেকে জালান টুংকু আব্দুর রহমান রুট পর্যন্ত। এই রুটের ২১টি স্টপেজের পাশে চো কিটে মনোরেইল, গ্লোব সিল্ক স্টোরে কেনাকাটা, দাতারান মারদেকায় স্বাধীনতা স্কয়ার, কুয়ালালামপুরে কেটিএম স্টেশন, কেএল সেন্ট্রালে সব ট্রেন ও বাসের স্টেশন, মিউজিয়াম নিগারা স্টেশনে জাতীয় জাদুঘর, মসজিদ নিগারা স্টেশনে জাতীয় মসজিদ, পুতেরি পার্ক স্টেশনে নেমে উদ্যান, মিনারা ডিবিকেএল এ মিনার দেখার সুযোগ আছে।
ব্লু রুটের বাস চলে মেদান মারা থেকে বুকিত বিনতান পর্যন্ত। এ রুটের ২০ স্টপেজের মধ্যে কনকর্ড হোটেল স্টপেজে আবাসিক হোটেল, মসজিদ কেজি বারুতে মসজিদ, প্যাভিলিয়ন, স্টারহিল গ্যালারি ও বুকিত বিনতান স্টপেজে কেনাকাটার সুযোগ আছে।
এছাড়া বুকিত বিনতানে মনোরেইল, বুকিত নানাস স্টপেজে ইকো পার্ক ও এলআরটি এবং ডাং বাঙ্গি স্টেশনে এলআরটি পাওয়া যাবে।
লাল ও নীল রুট দুটি টার্মিনাল জালান তুন রাজাক, মেদান মারা, পুতেরি পার্ক, চো কিট (জালান ইপোহ) ও গ্র্যান্ড সিজন স্টপেজে একই লাইনে এগিয়েছে বলে এসব স্থানে বাস পরিবর্তনের সুযোগ আছে। সুতরাং এসব রুটে গোকেএল বাসে সওয়ার হয়ে বাঁচিয়ে নিন গাঁটের পয়সা।
আরও পড়ুন...
** শিকারি কুমিরের সঙ্গে কোলাকুলি
**আকাশের হেলান দিয়ে মসজিদ ভাসে ওই
** প্রলয় নৃত্যে হতবাক দর্শক
**নরমুণ্ডু শিকারী মুরুত গাঁওয়ে
** মুসলিম বাজাউরাই বিত্তশালী বোর্নিওতে
**কলসির ভেতর লুনদায়েহ কবর
**লঙহাউজের রুঙ্গুস রাণী
**বনের ভেতর দুসুন গাঁও
** এক বাজারেই পুরো বোর্নিও
**বোর্নিওতে কী পেতে পারে বাংলাদেশ
** সুলু সাগর তীরের হেরিটেজ ট্রেইলে
** সূর্য ভাল্লুকের সঙ্গে লুকোচুরি
** ওরাংওটাং এর সঙ্গে দোস্তি
** অচেনা শহরের আলোকিত মানুষ
** সাড়ে ৫ হাজার ফুট উঁচু রাস্তা পেরিয়ে
**সাত ঘণ্টাতেই শেষ রাজধানী চক্কর
** সিগনাল হিলে আকাশ ভাঙা বৃষ্টি
** চীন সাগরে মেঘ-সুরুযের যুদ্ধ
** মালয় তরুণীর বিষাদমাখা রাতে
** জিভে জল আনা বাহারি সি-ফুড
** চীন সাগর পেরিয়ে ওরাংওটাংদের দেশে
বাংলাদেশ সময়: ১০০৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩, ২০১৬
জেডএম/আরআইএস/টিআই