কুয়ালালামপুর (মালয়েশিয়া) থেকে: বাংলাদেশ থেকে চাল আর কলা নেবে মালয়েশিয়া। শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) পুত্রাজায়ায় এক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বাংলাদেশকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
মালয়েশিয়ার এই আগ্রহ প্রকাশের মা্ধ্যমে কার্যত কৃষিক্ষেত্রে বাংলাদেশের বৈপ্লবিক উন্নতিরই নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হলো। এর মাধ্যমে অপ্রচলিত রপ্তানি দ্রব্য কলা থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের নতুন ক্ষেত্র যেমন তৈরি হলো, তেমনি চালের বাজার ছুটলো নতুন ঠিকানায়। হাই কমিশনার শহীদুল ইসলামের অব্যাহত প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ থেকে চাল ও কলা আমদানিতে মালয়েশিয়ার এই আগ্রহ তৈরি হলো।
এর আগে ইরাক, শ্রীলংকা, মিসর, মালদ্বীপ, নাইজেরিয়া, মরক্কো আর দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষ থেকে বাংলাদেশ থেকে চাল কেনার ব্যাপারে আগ্রহ দেখানো হয়। তবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সমৃদ্ধ দেশ মালয়েশিয়া মোটা দাগের চাল আমদানিকারক হওয়ায় বাংলাদেশের বাজার সম্ভাবনা এখানে তুলনামূলক ভালো বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ্কই সঙ্গে অপ্রচলিত রপ্তানি পণ্য হিসেবে বাংলাদেশের উন্নত মানের কলাও উঠে আসবে বিশ্ববাজারে। বছর চারেক আগে পোল্যান্ডে রপ্তানি শুরু হওয়ার পর খেই হারানো বাংলাদেশের কলার বাজারের জন্যও বিষয়টাকে নতুন সম্ভাবনা হিসেবে ধরা হচ্ছে।
এক সময় খাদ্যসঙ্কটে খাবি খেতে থাকা বাংলাদেশ গত কয়েক বছর ধরেই স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে উৎবৃত্ত খাদ্য উৎপাদন করছে। যার ওপর ভিত্তি করে খাদ্য রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে বাংলাদেশ।
দেশে এখন প্রায় ১৫ লাখ মেট্রিকটন খাদ্য মজুদ আছে। যার মধ্যে চালই আছে সাড়ে ৪ লাখ মেট্রিক টনেও ওপরে। আপদকালীন সময়ের প্রস্তুতি রেখেই রপ্তানিযোগ্য চাল মজুদে প্রযুক্তি আর প্রকৌশলগত ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে। নেপালে ভূমিকম্পের সময়ে ১০ হাজার মেট্রিক টন চাল সহায়তা দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইতিবাচক ভাবমূর্তিও গড়েছে বাংলাদেশ।
নতুন বাজার হিসেবে মালয়েশিয়া তাই চাল রপ্তানির নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে বাংলাদেশের বাংলাদেশের সামনে। এতে বাংলাদেশের জিডিপিতে কৃষির অবদান যে আরো বাড়বে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
মালয়েশিয়া চাল নিতে শুরু করলে কেনিয়া, উগান্ডা, তানজানিয়া, ফিলিপাইন আর ইন্দোনেশিয়াসহ আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের বাজার ধরাও সহজ হবে বাংলাদেশের পক্ষে। সম্ভব হবে আগেই থেকেই চালের বিশ্ববাজার ধরে রাখা দেশগুলোর সঙ্গে সুস্থ প্রতিযোগিতায় নেমে সফল হওয়া।
পাশাপাশি ২০১২ সালে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে জলপথে ২০ হাজার কেজি সাগরকলা পোল্যান্ডে রপ্তানির মাধ্যমে শুরু হওয়া কলা বাণিজ্যও নতুন ঠিকানা খুঁজে পাবে মালয়েশিয়ার বাজারে। গত চার বছরে বিশ্ববাজারে কলা রপ্তানিতে খুব একটা সুবিধা করতে না পারলেও এবার মালয়েশিয়া নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিতে পারে বাংলাদেশের সামনে।
কেননা বাংলাদেশের কলার গুণগত মান অন্য যে কোনো দেশের তুলনায় ভালো বলে এরই মধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। খ্যাতি রয়েছে নরসিংদী, ময়মনসিংহ, মুন্সীগঞ্জ, যশোর, বরিশাল, বগুড়া, রংপুর, জয়পুরহাট, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর আর পাবনা অঞ্চলের কলার। মৌসুমী জলবায়ুর দেশ হওয়ায় দেশের উচ্চভূমিতে সারাবছরই কলার চাষ করা সম্ভব বলেও নিশ্চিত হওয়া গেছে।
অপ্রচলিতক পণ্যের মধ্যে ইতোমধ্যেই শাক-সবজি আর ফুল রপ্তানিতে সুনাম কুড়িয়েছে বাংলাদেশ। এবার তার সঙ্গে প্রোটিন, ফাইবার, শর্করা আর ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ কলা রপ্তানি শুরু করে প্রকারান্তরে অপ্রচলিত রপ্তানি পণ্যের বাজারই সুসংহত হবে। বহুল পরিচিত সাগর কলা ছাড়াও অগ্নিস্বর, অমৃতসাগর, দুধসর, চিনিচাম্পা, সবরি ইত্যাদি কলার স্বাদ সহজেই বিশ্ববাজারে কদর বাড়িয়ে দিতে পারে ভেষজ গুণ সমৃদ্ধ বাংলাদেশের কলার। আর মালয়েশিয়া থেকে শুরু হতে পারে কলা রপ্তানির নতুন পর্ব।
আরো পড়ুন
**ট্যানারির পানি খাওয়াবেন, ময়লাকে বানাবেন বিদ্যুৎ
** মনের কষ্টে মালয়েশিয়ায় কোপা শামসু
** মালয় বধূতে বুঁদ বাংলাদেশি জামাই
** মসজিদ ঘিরে বিশ্বনগর
** জোহর সুলতানের সুন্দর মসজিদে
** সিঙ্গাপুরের কজওয়েতে মরে আছে জোহর প্রণালী
** বাংলাদেশিদের হাতেই জোহর বাহরুর পাইকারি বাজার
** ‘ভালো আছে জোহর বাহরুর বাংলাদেশ’
** লাখ টাকায় কোটিপতি হোন আপনিও
** বিনা ভাড়ায় ঘুরুন কুয়ালালামপুরে
** শিকারি কুমিরের সঙ্গে কোলাকুলি
** আকাশের হেলান দিয়ে মসজিদ ভাসে ওই
** প্রলয় নৃত্যে হতবাক দর্শক
** নরমুণ্ডু শিকারী মুরুত গাঁওয়ে
** মুসলিম বাজাউরাই বিত্তশালী বোর্নিওতে
** কলসির ভেতর লুনদায়েহ কবর
** লঙহাউজের রুঙ্গুস রাণী
** বনের ভেতর দুসুন গাঁও
** এক বাজারেই পুরো বোর্নিও
** বোর্নিওতে কী পেতে পারে বাংলাদেশ
** সুলু সাগর তীরের হেরিটেজ ট্রেইলে
** সূর্য ভাল্লুকের সঙ্গে লুকোচুরি
** ওরাংওটাং এর সঙ্গে দোস্তি
** অচেনা শহরের আলোকিত মানুষ
** সাড়ে ৫ হাজার ফুট উঁচু রাস্তা পেরিয়ে
** সাত ঘণ্টাতেই শেষ রাজধানী চক্কর
** সিগনাল হিলে আকাশ ভাঙা বৃষ্টি
** চীন সাগরে মেঘ-সুরুযের যুদ্ধ
** মালয় তরুণীর বিষাদমাখা রাতে
** জিভে জল আনা বাহারি সি-ফুড
** চীন সাগর পেরিয়ে ওরাংওটাংদের দেশে
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৬
জেডএম/