বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স প্রবাসীদের মরদেহ বিনামূল্যে বহন করে থাকে। নিয়ম রয়েছে, হাইকমিশন চিঠি দিলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স মরদেহ ফ্রি বহন করবে।
নারায়ণগঞ্জের ধনকুন্ডা গ্রামের বাসিন্দা মনির হোসেন (বাবা, ওমর আলী) থাকতেন মালয়েশিয়া। ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ মারা যান। পরিবারের পক্ষ থেকে মরদেহটি দেশে পাঠানোর জন্য হাইকমিশনে অনেক ধরনা দেয়া হলেও তাদের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া মেলেনি। হতভাগা ওই প্রবাসীর মরদেহটি শুধু টাকার অভাবে হিমঘরে পড়ে ছিলো আট মাস। এমনকি বিমান কর্তৃপক্ষকে মরদেহটি ফ্রি দেশে পাঠানোর জন্য চিঠি দেওয়ারও প্রয়োজন মনে করেনি হাইকমিশন।
মালয়েশিয়া আওয়ামী লীগের নেতা রেজাউল করিম রেজা, ওয়াহিদুল আলম ও মকবুল হোসেন মুকুল চাঁদা তুলে তার মরদেহটি দেশে পাঠান।
ওয়াহিদুল আলম বাংলানিউজকে জানান, মরদেহটি পড়ে থাকার খবর পেয়ে আমরা চাঁদা তুলে দেশে পাঠিয়েছি।
এ রকম অসংখ্য ঘটনার নজির রয়েছে। খুব কম নজির রয়েছে হাইকমিশন নিজে উদ্যোগী হয়েছে এসব বিষয়ে। বৈধদের ক্ষেত্রে হাইকমিশন কিছুটা উদ্যোগী হলেও অবৈধদের ক্ষেত্রে কোনো সহায়তা পাওয়া যায় না বলে জানিয়েছেন প্রবাসীরা।
তাদের দাবি, বাংলাদেশ সরকারের কাছে তো বৈধ অবৈধ ভেদাভেদ থাকার কথা না। তার কাছে একমাত্র বিবেচ্য হওয়ার কথা তার নাগরিক কি না? আবার আজকে যাদের অবৈধ বলা হচ্ছে তারাওতো সকলেই ইচ্ছা করে অবৈধ হয়নি। অনেকেই পরিস্থিতির শিকার।
অনেকে বৈধভাবে এখানে আসার পর তাদের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। যথারীতি তারা ওয়ার্ক পারমিট নবায়ন করতে টাকাও জমা দিয়েছেন। কিন্তু যাদের কাছে টাকা দিচ্ছেন সেই দালালরা তাদেরকে ভুয়া ওয়ার্ক পারমিট দিচ্ছে। তারা বুঝতেই পারছেন না।
কেউ কেউ স্টুডেন্ট ও টুরিস্ট ভিসায় গিয়ে কাজে যোগ দিয়ে অবৈধ হয়ে যাচ্ছেন। অনেককে কাজ দেওয়ার কথা বলে ট্যুরিস্ট ভিসায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। মালয়েশিয়া গিয়ে বাধ্য হচ্ছেন অবৈধভাবে অবস্থানের।
নাজমুল নামে এক প্রবাসী বলেন, আমরা যখন দেশে রেমিটেন্স পাঠাই তখন তো বিচার করা হয় না। কে বৈধ আর কে অবৈধ। মরে গেলেই আবর্জনা হয়ে যাই আমরা। আমাদের তখন দেখার কেউ থাকে না।
মালয়েশিয়ায় গিয়ে যারা নানা কারণে অবৈধ সেজেছেন তাদের আর রক্ষা নেই। অন্যদের চেয়ে তাদের শ্রমের মূল্য কম। যার অধীনে কাজ করছেন তারাও অনেক সময় টাকা মেরে দিচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে একসঙ্গে তিন-চার মাসের বেতন বকেয়া ফেলছেন। ঠিক যখন মজুরির জন্য চাপ দেয়া হচ্ছে তখনই পুলিশ ডেকে ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার দামোদরপুর গ্রামের বাসিন্দা শামসুর রহমান। ২০০৭ সালে ভাগ্য বদলাতে পাড়ি দিয়েছেন মালয়েশিয়া। যখন মালয়েশিয়া আসেন তখন ভাবনা ছিলো, চার-পাঁচ বছর থেকে কিছু পয়সা কামিয়ে দেশে ফিরে যাবেন। কিন্তু, এগারো বছর হতে চললো। কিন্তু যে টাকা খরচ করে মালয়েশিয়া এসেছেন সেই টাকাই তুলতে পারেন নি তিনি।
এসেই বার বার প্রতারণার শিকার হয়েছেন। দিন-রাত পরিশ্রম করেছেন আর মজুরি তুলে নিয়েছে বাংলাদেশি কয়েকজন টাউট। যাদের ওপর বিশ্বাস করে তিনি হাড় ভাঙা পরিশ্রম করেছেন তারাই তাকে ঠকিয়েছেন। সব মিলিয়ে তার সাড়ে ২৬ হাজার রিঙ্গিত (৪লাখ ৭৭ হাজার টাকা) লুটে খেয়েছে টাউটরা।
যে কারণে বন্ধকী জমিটি আজও পুরোপুরি ফেরত নিতে পারেননি। মাত্র চার-পাঁচ বছর থাকার ইচ্ছা নিয়ে মালয়েশিয়া এলেও এখন ঠিক কবে নাগাদ দেশে ফিরতে পারবেন সেই ক্ষণ ঠিক করতে পারছেন না।
মালয়েশিয়া এসে প্রায় সাড়ে পাঁচ মাস বেকার ছিলেন। এরপর জহুরবারুতে জাহাজ তৈরির কাজে যোগ দেন দেশি ভাই সাইফুল (যশোরের বাঘারপাড়া থানার তালবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা) ইসলামের অধীনে। সাড়ে তিন মাস কাজ করার পর একদিন রাতে তিনিসহ প্রায় দু’শ বাংলাদেশিকে নিয়ে পুড়ুতে চলে আসেন সাইফুল।
কথা ছিলো পুডুতে এসে সাড়ে তিন মাসের মজুরি দিয়ে দিবেন। কিন্তু এসে বাস থেকে নামিয়ে কাউকেই টাকা না দিয়ে চলে যান সাইফুল। শামসুর রহমানের পকেট তখন পুরোপুরি ফাঁকা। সারাদিন উপোস থাকার পর একজন বাংলাদেশি শ্রমিকের থেকে দশ রিঙ্গিত ধার করে সিগানপুর চলে যান। এভাবে দফায় দফায় প্রতারণার শিকার হয়েছেন শামসুর রহমানরা।
পাওনা টাকা চাইতে গেলেই তাদের পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে তারা চরম অসহায়।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য কুয়ালালামপুর হাইকমিশনে গেলেও হাইকমিশনার সহিদুল ইসলামের সাক্ষাত পাওয়া যায়নি। মোবাইলে কল করলে স্যার সম্বোধন না করায় ক্ষেপে গিয়ে লাইন কেটে দেন।
** নরকযন্ত্রণা মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে!
** কুয়ালালামপুরে হাইকমিশনার সহিদুলে আস্থা নেই
বাংলাদেশ সময়: ১৫১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০১৭
এসআই/ওএইচ/আরআই