কখনো পাসপোর্ট, কখনো ওয়ার্ক পারমিট করিয়ে দেওয়ার কথা বলে হাতিয়ে নেন সরলমতি প্রবাসীদের কষ্টার্জিত টাকা। বাংলাদেশের আদালতে দায়ের হওয়া মামলা খারিজের টোপ ফেলেও তিনি টাকা খান মালয়েশিয়ায় বসেই।
টাকা নেওয়া হয়ে গেলে আর পাত্তা মেলে না তার। দেখা করা তো দূরের কথা, ফোন ধরাও বন্ধ করে দেন। কাজ বা টাকার জন্য বেশী চাপাচাপি করলে মোক্ষম কোপ কষেন পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে। কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাই কমিশন এলাকায় শেখ কবির নামেই পরিচিত তিনি।
তার প্রতারণায় ভুক্তভোগী সিলেট উপশহর এলাকা থেকে ভাগ্যান্বেষণে মালয়েশিয়ায় আসা ইমন। অভিযোগ, ২০১৬ সালের অক্টোবরে ভিসা নবায়নের জন্য খোঁজ নিতে গিয়েছিলেন কুয়ালালামপুর হাই কমিশনে। সেখানে হাইকমিশনের এক কর্মকর্তার মাধ্যমে কবীরের সঙ্গে পরিচয় ইমনের।
ওয়ার্ক পারমিট নবায়নের জন্য তার সঙ্গে সাড়ে ৫ হাজার রিঙ্গিতে (প্রায় ১ লাখ দশ হাজার টাকা) সমঝোতা হয় ইমনের। সে অনুযায়ী প্রথম দফায় পাসপোর্টসহ ১ হাজার ৮’শ রিঙ্গিত তুলে দেন কবীরের হাতে। কয়েকদিন পর কবীরের দেওয়ার হিসাব নম্বরে জমা দেন আরো ২ হাজার ৬’শ রিঙ্গিত। অর্থাৎ দু’দফায় প্রায় ৪ হাজার ৪’শ রিঙ্গিত সেই সাংবাদিক পরিচয়ধারী দালালের হাতে তুলে দেন ইমন।
ইমনের বন্ধু আতিকুর রহমানও একই সমস্যায় পাসপোর্ট ও টাকা তুলে দেন শেখ কবীরের হাতে। এরপর থেকে ঘুরতে থাকেন। আজ হবে, কাল হবে করে কেটে যায় প্রায় ৮ মাস। এরপর যখন কাজ হচ্ছিল না, তখন আশা ছেড়ে দিয়ে পাসপোর্ট ও টাকা ফেরতের জন্য দৌড়ঝাপ শুরু করেন।
ইমন ও আতিকুর থাকেন মালয়েশিয়ার দক্ষিণে সিঙ্গাপুর সীমান্ত ঘেঁষা শহর জোহর বাহরুতে। দূরত্বের কারণে সেখান থেকে দিনে এসে ফিরে যাওয়া কঠিন। আরো কঠিন কর্মক্ষেত্র থেকে ছুটি পাওয়া। তাই ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেন তারা। কিন্তু প্রথম দিকে ফোন রিসিভ করলেও কয়েক মাস ধরে ফোন ধরাও বন্ধ করে দিয়েছেন এই স্বদেশি দালাল।
এসএমএস এর জবাবে হুমকি দিয়েছেন পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার।
পাসপোর্ট ফেরত না পেয়ে হারিয়ে যাওয়ার কথা বলে নতুন পাসপোর্ট করতে বাধ্য হয়েছেন ইমন ও আতিকুর। আর সেই পাসপোর্টে ওয়ার্ক পারমিটের সিলও বসেছে ভারতীয় একজন মালিকের সহায়তায়।
কিন্তু কবিরকে দেওয়া টাকা কিছুতেই ফেরত পাননি তারা। এ বিষয়ে হাই কমিশনের কর্মকর্তারাও অপারগতা প্রকাশ করেছেন। বরং ইনিয়ে বিনিয়ে সাফাই গেয়েছেন কবিরের পক্ষে। করেছেন কবিরকে দোর্দণ্ড প্রতাপশালী হিসেবে তুলে ধরে ভয় দেখানোর চেষ্টা।
ইমন আর আতিকুরের মতো অসংখ্য প্রবাসীর কাছে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ আছে কবিরে বিরুদ্ধে।
আমিন নামে এক প্রবাসীর অভিযোগ, দেশের এক মামলার তদবিরের জন্য ৫০ হাজার টাকা নিয়েছেন কবীর। কিন্তু কোন কাজ করতে পারেন নি। আবার টাকাও ফেরত দেননি। এখন তার ফোন ধরা বন্ধ করে দিয়েছেন কবির।
কিন্তু ধরাকে সরা জ্ঞান করে একের পর এক প্রবাসীর টাকা মেরে খাওয়া কে এই কবীর?
খোঁজ নিয়ে জানা গেলো, সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার উত্তরজগদল গ্রামের মানুষ তিনি। পুরো নাম শেখ আহমাদুল কবীর। ২০০৭ সালে মালয়েশিয়া পাড়ি জমান নির্মাণ শ্রমিকের ভিসা নিয়ে। কিছুদিন সে কাজও করেন। তারপর নাম লেখান কথিত সাংবাদিকতায়।
খোলস বদলে এখন পুরোদস্তুর দালাল তিনি। দিনভরই থাকেন হাই কমিশনে। যেনো হাইকমিশনেরই কর্মকর্তা বা কর্মচারী তিনি। হাই কমিশনারও নাকি তার প্রতি বেশ উদার। সব মিলিয়ে দালালি পেশা বেশ জমিয়ে তুলেছেন শেখ কবির।
বাংলাদেশ সময়: ১১১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১, ২০১৭
এসআই/জেডএম