ঢাকা, বুধবার, ২৮ কার্তিক ১৪৩১, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মালয়েশিয়া

যেন প্রাচীন যুগে প্রবেশ!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪২২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০১৮
যেন প্রাচীন যুগে প্রবেশ! মালাক্কার একটি পর্যটন কেন্দ্র। ছবি: বাংলানিউজ

মালাক্কা (মালয়েশিয়া) ঘুরে: শহরে ঢোকার আগেই মনে হলো প্রাচীন কোনো যুগে প্রবেশ করেছি। পুরানো আমলের ভবন এবং দুর্গ স্বাগত জানায় আগতদের। খানিকের জন্য হয়তো কারও মনে হতে পারে পর্তুগিজের দুর্গে আছেন তিনি।

বলছি, মালয়েশিয়ার প্রথম ও প্রাচীন শহর মালাক্কার কথা। মাধ্যমিকে পড়ার সময় ভূগোলে মালাক্কা প্রণালী নিয়ে অনেক প্রশ্ন মুখস্থ আওড়াতে হয়েছে প্রায় সবাইকে।

আর তাই তো মালয়েশিয়ায় বেড়াতে এলেই বিশ্ব ঐতিহ্য মালাক্কা সিটিতে যেতে ভুল করেন না বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকরাও। প্রতিদিনই যেনো এখানে হাট বসে পর্যটকদের।

মালাক্কা প্রণালী দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মালয় উপদ্বীপ এবং ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপের মধ্যে অবস্থিত একটি সংকীর্ণ সমুদ্রপ্রণালী, যার অায়তন মাত্র ৮০৫ কিলোমিটার।

ইতিহাস বলছে, ১৪০০ থেকে ১৫১১ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে দ্বীপমালার ওপর শাসিত মালাক্কা সুলতানাতের নামে এর নামকরণ করা হয়।  

কুয়ালালামপুর থেকে প্রায় আড়াই ঘণ্টা ভ্রমণের পর মালাক্কা সিটি। মহাসড়ক দিয়ে প্রাচীন বন্দর মালাক্কার দিকে শুরু হলো যাত্রা। মালয়ী চালক মো. ইয়ািজদ বেশ গল্প-গুজব আর হাসিঠাট্টা করেই পৌঁছে দেন মালাক্কার মিউজিয়াম এলাকায়।

কুয়ালামপুর থেকে মালাক্কা যাওয়ার পথে মালাক্কা জু, কুমিড় ফার্ম, নাইট সাফারি, এথনিক হেরিটেজ সেন্টার (নৃতাত্ত্বিক যাদুঘর) ইত্যাদি চোখে পড়ে।

মালাক্কার একটি জাদুঘর।  ছবি: বাংলানিউজ
ইতিহাস অনুযায়ী, ১৫১১ সালে পর্তুগিজদের হাত ধরে মালাক্কায় ইউরোপীয় উপনিবেশের পত্তন ঘটে। তবে এর আগে থেকেই চীনা, ভারতীয় ও আরব নাবিকদের আনাগোনায় এই শহরে গড়ে ওঠে এক মিশ্র সংস্কৃতির মিলনকেন্দ্র।

কিন্তু মালাক্কা বিকশিত হয় মালাক্কা সালতানাতের অধীনে। এটিকে প্রাচ্যের ভেনিসও বলা হয় বলে জানালেন কেউ কেউ।  

আবদেল মতিন, যার পূর্ব পুরুষ ছিলেন ভারতীয়। বর্তমানে মালাক্কায় থাকা এই মালয়েশীয় বাংলানিউজকে বলেন, মালয়েশিয়ার বিচিত্র বর্ণময় ইতিহাসের একটা বড় অংশই রয়েছে এই মালাক্কাকে ঘিরে। তাই এখানে জীবন-যাপনের রয়েছে বৈচিত্র্য।

ইতিহাস বলে, মালাক্কার মধ্য দিয়েই মালয় অঞ্চলে ইসলামের প্রচার ও প্রসার ঘটে। নৌ-পর্যটক আফঁসু দি আলবুকের্কির নেতৃত্বে পর্তুগিজেরা ১৫১১ খ্রিস্টাব্দে এই শহর দখল করে। পর্তুগিজ শাসনের সময় সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার এখানে খ্রিস্টধর্ম প্রচার করেন।

১৬৪১ সালে ওলন্দাজরা শহরটি দখল করে। তখন থেকে ১৮২৪ সাল পর্যন্ত শহরটি ওলন্দাজদের নিয়ন্ত্রণে ছিল, তবে মাঝে ১৭৯৫-১৮০২ এবং ১৮১১-১৮১৮, এই দুই সময়ে এটি ব্রিটিশদের অধীনে ছিল। ১৮২৪ সালের পর সুমাত্রা দ্বীপের বেনকুলেন (বর্তমান বেংকুলু) শহরের বিনিময়ে যুক্তরাজ্য ওলন্দাজদের কাছ থেকে নিয়ে নেয় শহরটি।  

সিঙ্গাপুরের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে মালাক্কা শহরের অবনতি ঘটতে থাকে। পুরনো মালাক্কায় সেন্ট পলের চার্চ ও দুর্গের ভগ্নাবশেষের শিলালিপিই এ দু’টির প্রাচীন পরিচয় দেয়। মালাক্কা প্রণালী বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত রুট।  ছবি: বাংলানিউজপ্রত্নতত্ত্ব জাদুঘর, সাংস্কৃতিক, ইসলামিক, স্বাধীনতা জাদুঘরে মালাক্কার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও তাদের ঘর-বাড়ি, ব্যবহার্য্য জিনিসপত্র, ইতিহাস-ঐতিহ্য জানার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে মালাক্কায় নজর কেড়েছে পাখিদের খেলা।

বর্তমানে এই নৌপথ তথা মালাক্কা প্রণালী বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত রুট। এ প্রণালী উত্তরে ভারত মহাসাগরের আন্দামান সাগরকে প্রশান্ত মহাসাগরের দক্ষিণ চীন সাগরকে যুক্ত করেছে এবং মালয় উপদ্বীপকে সুমাত্রা দ্বীপ থেকে আলাদা করেছে।

প্রণালীটি উত্তর-পশ্চিম থেকে দক্ষিণ-পূর্ব ৮০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং এর বিস্তার ৬০ কিলোমিটার থেকে ৪৮০ কিলোমিটার। এটি বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জাহাজগামী সমুদ্রপথের একটি, ইউরোপ ও পূর্ব এশিয়ার মধ্যকার সমুদ্র বাণিজ্য এই প্রণালীর মাধ্যমেই হয়।

মালাক্কা প্রণালীর উপকূলে অবস্থিত প্রধান বন্দরগুলির মধ্যে আছে মালয় উপদ্বীপের পেনাং (প্রাক্তন জর্জটাউন), পোর্ট সোয়েটেনহাম ও মালাক্কা এবং সুমাত্রা দ্বীপের বেলাওয়ান বন্দর।  

মালয়েশিয়ার এই ঐতিহাসিক শহরের জাদুঘরগুলোতে বিদেশিদের জন্য প্রবেশ ফি ১০ রিঙ্গিত  (প্রাপ্তবয়স্ক) ও ৪ রিঙ্গিত (শিশু)। যেখানে মালয়েদের জন্য মাত্র ৫ (প্রাপ্তবয়স্ক) ও ২ রিঙ্গিত (শিশু)। শহর ঘুরে দেখে-শুনে কেনাকাটার ব্যবস্থাও রয়েছে বেশ।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০১৮
এমএ/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মালয়েশিয়া এর সর্বশেষ