ঈশ্বরদী (পাবনা): মহাসড়কে অবৈধ যান চলাচল বন্ধ, প্রশাসন কর্তৃক হয়রানি ও ১১ দফা দাবিতে রাজশাহী বিভাগের ৮ জেলায় সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক পরিষদের ডাকা অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনে শুক্রবার (২ ডিসেম্বর)পাবনার ঈশ্বরদী থেকে কোনো বাস ছাড়েনি।
ধর্মঘটের আওতায় সব যাত্রী ও পণ্যবাহী পরিবহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
শুক্রবার (২ডিসেম্বর) সকালে ঈশ্বরদী জংশন ঘুরে দেখা গেছে ছেড়ে যাওয়া সব ট্রেনেই যাত্রীদের চাপ বেড়েছে। গণপরিবহন বন্ধের কারণে সব চাপ ট্রেনে এসে পড়েছে। বিনা টিকিটের কোনো যাত্রীকে ট্রেনে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। অনেকেই ট্রেনে চড়ে বিএনপির সমাবেশে যাচ্ছেন।
এদিকে উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলের প্রবেশদ্বার দাশুড়িয়া ট্রাফিক মোড়ে গিয়ে দেখা গেছে, বন্ধ রয়েছে জেলার সব ধরনের সব যাত্রীবাহী পরিবহন। ঈশ্বরদী বাস টার্মিনালসহ উপজেলার সব বাসস্ট্যান্ড বন্ধ রয়েছে। কোনো ধরনের টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে না। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা।
বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) সকাল ৬টা থেকে রাজশাহীর অন্যান্য জেলার ন্যায় পাবনাতেও শুরু হয়েছে এই ধর্মঘট।
উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলের প্রবেশদ্বার দাশুড়িয়া রুটে সারাক্ষণ লোকসমাগম থাকে। ওই রুটে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বরিশাল, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, পাবনা, বগুড়া, রাজশাহী, গাইবান্ধা, রংপুর ও দিনাজপুরসহ কয়েক জেলার যান সারাক্ষণই চলাচল করে।
শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) ঈশ্বরদী জংশন স্টেশন ঘুরে দেখা যায়, গণপরিবহন ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনে দূরপাল্লার সাধারণ মানুষ কোন উপায় না পেয়ে ঈশ্বরদী জংশনে ভিড় করছেন।
স্টেশনে অনেকে ট্রেনের টিকিট না পেয়েও স্টেশনে আসছেন। তবে, প্লার্টফর্মে টিকিট ছাড়া যাত্রীদের ট্রেনে উঠতে দেওয়া হচ্ছে না। কেউবা টিকিট পেলেও সিট না পেয়ে দাঁড়িয়েই যাচ্ছেন।
খুলনা থেকে আসা রাজশাহীগামী আন্তঃনগর কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস ট্রেনে চড়ে রাজশাহী বিএনপির গণসমাবেশে যাচ্ছেন ঈশ্বরদী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়কসহ নেতা-কর্মীরা। স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা শরিফুল ইসলাম শরীফ বাংলানিউজে জানান, ‘আমরা সরকার পতনের আন্দোলনে নেমেছি, লড়াই করে টিকে থাকতে হবে। গণপরিবহন বন্ধ তো কী হয়েছে? সবাই ট্রেনে চড়ে রাজশাহীর গণসমাবেশকে সার্থক করব।
ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনের দুই নম্বর প্লার্টফর্মে রূপসা এক্সপ্রেস ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায় কর্মজীবী নারী নেহা খানকে। তিনি বাংলানিউজকে জানান, আমি মূলত বাসেই বগুড়া যাতাযাত করি। ধর্মঘটের কারণে ট্রেনে যেতে হচ্ছে। ট্রেনে সান্তাহার পর্যন্ত যেয়ে সিএনজিতে বগুড়া যাব।
এদিকে ঈশ্বরদীর দাশুড়িয়া ট্রাফিক মোড় এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সেখানে বিভিন্ন জেলার মানুষের আনাগোনা থাকলেও বর্তমানে একেবারেই সুনসান নীরব। নেই সারিসারি বাসের জট। নেই মহাসড়কে পণ্যবাহী বাহনের ব্যস্ততাও। ধর্মঘটের জন্য দ্বিতীয় দিন সকাল থেকে জেলার অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার রুটের কোনো যানবাহন ঈশ্বরদী ও দাশুড়িয়া থেকে ছেড়ে যায়নি। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীরা। সুযোগ বুঝে আঞ্চলিক সড়কের ছোট যানবাহনের চালকরা দ্বিগুণ ভাড়া নিচ্ছেন। বাধ্য হয়ে অনেকই বিকল্প ব্যবস্থায় অটোরিকশা, সিএনজিতে চড়ে যাতায়াত করছেন দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে।
এদিকে এই ধর্মঘট পূর্ব পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র বলে দাবি করছেন বিএনপি, অঙ্গ- ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। শনিবার (৩ ডিসেম্বর) রাজশাহীর বিএনপির গণসমাবেশকে বাধাগ্রস্ত, ঠেকানোর জন্য সরকারের নীলনকশা ও ষড়যন্ত্র বলে দাবি করছেন তারা।
ঈশ্বরদী পৌর যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক জাকির হোসেন জুয়েল বাংলানিউজকে জানান, ‘বিএনপির রাজশাহীর গণসমাবেশকে ঠেকাতে এই পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে। তবে লাভ নেই, কোনোন বাধাই আমাদের ঠেঁকাতে পারবে না। এরই মধ্যে ঈশ্বরদী থেকে কয়েক হাজার নেতা-কর্মী ও সমর্থক বিচ্ছিন্নভাবে ট্রেনে রাজশাহীতে পৌঁছে গেছে। সেখানে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের পরিবহন কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে জানান, ঈশ্বরদী জংশন থেকে ছেড়ে যাওয়া সব ট্রেনেই যাত্রীদের চাপ বেড়েছে। এমনিতেই ট্রেনে যাতাযাত করতে যাত্রীদের আগ্রহ বেশি অনেক আগে থেকেই, এর মধ্যে গণপরিবহন বন্ধের কারণে সব চাপ ট্রেনে এসে পড়েছে। তবে, আমরা বিনা টিকিটের কোনো যাত্রীকে ট্রেনে উঠতে দিচ্ছি না। ঈশ্বরদী স্টেশনে ব্লক চেকিং চলছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩০ ঘণ্টা, ২ ডিসেম্বর ২০২২
এমএমজেড