বাগেরহাট: বাগেরহাটের কচুয়ায় আধিপত্য বিস্তারের জেরে মো. মোজাহার মোল্লা (৫৫) নামে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষরা।
শনিবার (০৭ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টায় উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়নের আলিপুর গ্রামে ওই কৃষকের ঘরের সামনে প্রতিপক্ষ রাসেল শেখের নেতৃত্বে এই ঘটনা ঘটে।
এসময় হামলাকারীরা নিহতের বৃদ্ধ মা মোমেনা বেগমসহ সাত জনকে মারধর ও কুপিয়ে আহত করেন।
নিহত মো. মোজাহার মোল্লা আলিপুর গ্রামের মৃত জোনাব আলী মোল্লার ছেলে এবং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. হাফিজুর রহমান মোল্লার চাচাতো ভাই। তিনি গজালিয়া ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য। তার দুই ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে।
আহতরা হলেন- নিহত মোজাহার মোল্লার মা মোমেনা বেগম (৬৫), চাচাতো বোন রিক্তা বেগম (৩৫) ও মুক্তা বেগম (৪০), চাচাতো ভাই মতিয়ার রহমান (৪৩) ও ইউনুস মোল্লা (২৮), চাচাতো ভাইয়ের বউ শাহিদা বেগম (৪০), মরিয়ম বেগম (৩৫), ভাইপো লিটু (২৭) ও রাব্বি (১৮)। আহতরা বাগেরহাট জেলা হাসপাতাল ও স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন।
আলিপুর গ্রামের প্রভাবশালী রাসেল শেখ ও ৯নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লার সঙ্গে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিরোধের জেরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে দাবি স্থানীয়দের। এর আগেও হামলাকারীরা হাফিজুর রহমান মোল্লাকে মারধর করেছিল বলে অভিযোগ।
এদিন (০৭ জানুয়ারি) দুপুর ১২টায় সরেজমিনে নিহতের বাড়িতে দেখা যায় লোকজনের ভিড়। ঘরের সামনে কয়েক জায়গায় দেখা যায় রক্তের দাগ। ঘরের ভেতরে নিহতের স্ত্রী ও সন্তানরা কাঁদছে। সহজ সরল ছেলেটাকে ওরা মেরে ফেলল, বলে বিলাপ করছেন সত্তরোর্ধ্ব এক বৃদ্ধা।
জানা যায়, বিলাপ করা বৃদ্ধা নিহতের মা মোমেনা বেগম। তিনি বলেন, জমি থেকে এসে ঘরের সামনে বসে বিশ্রাম নিচ্ছিল আমার ছেলে মো. মোজাহার মোল্লা। এর মধ্যে রাসেল শেখ, মহিদ শেখ, তুহিন শেখ, ইসমাইল, ইদ্রিস, কুদ্দুস ও নজরুল সরদারসহ ১২-১৩ জন লোক রামদা, শর্কিসহ বিভিন্ন অস্ত্র নিয়ে আমাদের বাড়িতে এসে আমার ছেলেকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। নিষেধ করলে, বাঁধা দিতে আসলে ওরা আমাকেও মারধর করে। ওরা আমাকে পুকুরের পানিতে চুবিয়েছে, লাথি মেরেছে, পদদলিত করেছে। আমি আমার সন্তান হত্যার বিচার চাই।
প্রত্যক্ষদর্শী মো. আতিয়ার মোল্লা বলেন, হঠাৎ করে দা, লাঠি, কুড়াল ও শর্কি নিয়ে ১০-১২ জন এসে মোজাহার মোল্লাকে কোপাতে শুরু করে। নিষেধ করলে ওরা মোজাহারের বৃদ্ধ মা মোমেনা বেগমকেও মারধর করে। তাদের ডাক চিৎকারে ঠেকাতে আসলে আরও কয়েক জনকে মারধর করে এবং কোপায় হামলাকারীরা।
এর আগে হামলার শিকার ৯নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. হাফিজুর রহমান মোল্লার স্ত্রী মরিয়ম বেগম বলেন, আমার ভাসুর মোজাহার মোল্লার হত্যাকারীরা আমার স্বামীকে হত্যার জন্য আমাদের ঘরে ঢোকার চেষ্টা করেছিল। বাঁধা দিলে আমার হাতে আঘাত করে। এলাকার লোকজন চলে আসলে তারা পালিয়ে যায়।
মরিয়ম বেগম আরও বলেন, এর আগে ওরা আমার স্বামীকে রাতের আঁধারে কুপিয়েছে। প্রায় এক মাস ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে আমার স্বামী বাড়ি ফিরেছে।
তখনকার মারধরের বিচার হলে এই হত্যাকাণ্ড ঘটত না বলে দাবি করেন তিনি।
বাগেরহাট জেলা পুলিশের গণমাধ্যম শাখার সমন্বয়কারী (পরিদর্শক) এস এম আশরাফুল আলম বলেন, ঘটনাস্থল থেকে নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। হামলাকারীদের শনাক্ত ও গ্রেফতার করতে পুলিশ অভিযান শুরু করেছে।
এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান তিনি।
এর আগে গত ০৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে পূর্ব শত্রুতার জেরে মোজাহার মোল্লার হত্যাকারীরা কুপিয়ে ও মারধর করে ফেলে রেখে যায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মো. হাফিজুর রহমান মোল্লাকে। পরবর্তীতে আহতের বড় ভাই মো. আকরাম হোসেন বাদী হয়ে কচুয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার আসামিরা বর্তমানে জামিনে রয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৭, ২০২৩
এনএস