পাথরঘাটা (বরগুনা): ‘জাল, দড়ি, গ্রাফি সবই আছে... নাই মোর বাবারা; ওই নৌকা মোর বাবা দুইডারে খাইছো...’
বলেশ্বর নদ সংলগ্ন পদ্মা স্লুইজ ঘাটে ছেলে ইউসুফ বেপারী ও ভাইয়ের ছেলে বাইজিদের জীবিকার উপার্জনের মাধ্যম উদ্ধার হওয়া নৌকার পাশে দাঁড়িয়ে কান্না জড়িত কণ্ঠে এমন কথা বলছেন আব্দুর রহিম বেপারী।
তিনি বলেন, ‘বাবার বিয়ার বয়স ৯ মাস অইছে, বাবায় কইছে, নদী দিয়া মাছ ধইরা আইয়া বউডারে ডাক্তার দেখাইবে।
গত বুধবার (৪ জানুয়ারি) রাত দেড়টার দিকে পাথরঘাটা থেকে ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিম সুন্দরবনের পক্ষিদিয়া লাচি এলাকায় নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটে। আজও দুই ভাইয়ের খোজ না পাওয়ায় বাড়িতে চলছে আহাজারি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঘন কোয়াশা, এ সময় গ্রামের অধিকাংশ মানুষই ঘুম থেকে উঠেনি। প্রচণ্ড শীতের মধ্যেও নৌকার ঘাটে দাঁড়িয়ে ছেলে ইউসুফ ও ভাইয়ের ছেলে বাইজিদের অপেক্ষা, এই বুঝি আসলো...! ইউসুফ ও বাইজিদ ফিরে না আসায় চোখের পানি যেন থামছেই না। তাদের ব্যবহৃত নৌকা উদ্ধার হলেও আজও বাড়ি ফেরেনি তারা।
নৌকার দিকে তাকিয়ে রহিম বেপারী বলেন, ‘ওরে নৌকা... তুই মোর বাবাগো খাইছো; বাবারা কি আইবে। মোরে কি আব্বা কইয়া ডাকবে না। ’
রহিমের কান্নার শব্দ শুনে অনেকেই তার কাছে এসে শান্তনা দিচ্ছেন, ওই শান্তনায় কি ছেলের অভাব ঘুচবে।
পাথরঘাটা উপজেলার সদর ইউনিয়নের পদ্মা গ্রামের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের আব্দুর রহিম বেপারির ছেলে ইউসুফ বেপারি (২৩) ও আমিন বেপারির ছেলে বাইজিদ বেপারী (১৭)। খুব শান্ত স্বভাবের ছিলো। তারা সম্পর্কে চাচাতো ভাই হলেও চলাফেরা আপন ভাইয়ের মতো। সে হিসেবে একটি নৌকায় দুই জনেই মাছ ধরতেন।
ইউসুফ ও বাইজিদের ফুফাতো ভাই মো. বেল্লাল বলেন, প্রতিদিন সকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত নদীতে ১০ জন বিচ্ছিন্ন ভাবে অনুসন্ধান করছি। রোববার (৯ জানুয়ারি) পর্যন্ত কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। আজও (সোমবার) সকাল ৮টার সময় নেমেছি।
বরগুনা জেলা মৎস্যজীবি ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৯, ২০২৩
এসএম