বরিশাল: বরিশালের বাবুগঞ্জের কেদারপুর ইউনিয়নের সাবেক প্রয়াত ইউপি মেম্বারের মা-ছেলেবউয়ের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ছেলেকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। সেইসঙ্গে পুলিশের নজরদারিতে রয়েছেন সাবেক ওই ইউপি মেম্বারের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন স্ত্রীও।
তবে তাদের কাউকে এখনও আটক বা গ্রেফতার করা হয়নি।
বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) রাতে বাবুগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. অলিউল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, মামলা তদন্তের জন্য অনেককেই জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারি। তারই অংশ হিসেবে দুপুর দেড়টার দিকে একজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে এসেছি।
বুধবার (২৫ জানুয়ারি) মধ্যরাতে বাবুগঞ্জ উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড ভূতেরদিয়া গ্রামের সাবেক ইউপি মেম্বার দেলোয়ার হোসেনের বাড়ি থেকে তার মা লালমুন নেছা (১০২) এবং ছেলেবউ রিপা আক্তারের (২০) মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় বাবুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসাধীন সাবেক ইউপি সদস্য দেলোয়ার হোসেনের স্ত্রী মনিরা বেগম বর্তমানে শঙ্কামুক্ত।
এ তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আতিক বলেন, মনিরা বেগমকে আমরা বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হিসেবে চিকিৎসা দিচ্ছি। বর্তমানে তিনি স্বাভাবিকভাবেই কথা বলতে পারছেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যা পর্যন্ত মনিরা বেগমের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন বাবুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাবুবুর রহমান। তবে সফল হননি।
তিনি বলেন, গতকাল তিনি কথা বলতে পারেননি। এখন চিকিৎসক সুস্থ বললে আমরা তার কাছে ফের ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইব। আর সে কারণে মনিরা বেগমের ওখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে বিস্ফোরক দাবি করেছেন নিহত রিপার আক্তারের চাচা নূর হোসেন। তার দাবি, ভাইয়ের মেয়েকে শ্বশুরবাড়ির লোকজন পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে।
তিনি বলেন, রিপার দাদি শাশুড়ি কীভাবে মারা গেলেন তা আমরা জানি না। তবে শাশুড়ির অসুস্থতা একটি নাটক। পরিবারের লোকজন যে বিষক্রিয়ার কথা বলছে তার কোনো আলামত দেখিনি। আবার যে সিঁধ কাটা হয়েছে তা দিয়েও মানুষের যাতায়াতের কোন আলামত নেই। পুরো ঘটনাই রহস্যজনক। এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। আমরা এর বিচার চাই।
একই দাবি নিহত রিপা আক্তারের ফুফু সীমা বেগমের। রিপার স্বামী সোলায়মান হোসেন এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকতে পারেন বলে ধারণা তার।
তিনি বলেন, রিপার সঙ্গে তার স্বামী সোলায়মানের পারিবারিক ঝামেলা চলছিল। এ নিয়ে একবার সোলাইমান তার স্ত্রীকে রিপাকে ডিভোর্স দেয়। তবে স্থানীয়ভাবে সালিশের মাধ্যমে পুনরায় কাবিন করে বিয়ে দেওয়া হয়। এরপরও দুজনের মধ্যে বনিবনা হচ্ছিল না।
সীমা দাবি করেন, রিপাকে হত্যা করতেই এ পরিকল্পনা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে রিপার দাদি শাশুড়িকেও হত্যা করা হয়েছে যেন কেউ সন্দেহ করতে না পারে। ঘটনার দিন রাতে রিপার প্রতিবেশীরা এক যুবককে ঘরের সামনে দেখেন। কিন্তু কেউ চিনতে পারেনি। প্রতিবেশীদের দেখে সেই যুবক অন্ধকারে মিলিয়ে যান। আমার ধারণা সেই যুবকই হচ্ছে রিপার স্বামী সোলাইমান। তাছাড়া যেখান থেকে সিঁধ কাটা হয়েছে তার ভেতরে ঘরের অংশে চৌকির নিচে মাকড়শার জাল রয়েছে। যদি কেউ ওই দিক দিয়ে ঢুকত তাহলে সেগুলো ছিঁড়ে যেত।
তবে ঘটনা যাই হোকে দ্রুত সময়ের মধ্যে ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করার কথা জানিয়েছেন সার্কেল এসপি (অতিরিক্ত পুলিশ সুপার) ফরহাদ সরদার।
প্রসঙ্গত, বুধবার (২৫ জানুয়ারি) মধ্যরাতে বাবুগঞ্জ উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড ভূতেরদিয়া গ্রামের সাবেক ইউপি মেম্বার দেলোয়ার হোসেনের বাড়ি থেকে তার মা ও পূত্রবধূর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। । এ ঘটনায় সংজ্ঞাহীন অবস্থায় তার স্ত্রী মিনারা বেগম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০২৩
এমএস/এসএএইচ