ঢাকা: বাণিজ্যমেলায় যাতায়াতের সুবিধার্থে বিআরটিসি শাটল বাস সার্ভিস থাকলেও মেলা থেকে ফিরতি পথে ভোগান্তিতে পড়েছেন অধিকাংশ ক্রেতা-দর্শনার্থীরা।
শনিবার (২৮ জানুয়ারি) সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।
ব্যক্তিগত পরিবহন না থাকায় সঙ্গে থাকা মালামাল নিয়ে বাসে করে ফিরতে সমস্যায় পড়ছেন ক্রেতা-দর্শনার্থীরা। যদিও কুড়িল বিশ্বরোড থেকে মেলায় যাবার সময় তেমন একটা ভোগান্তিতে পড়তে হয় না। মেলায় যাওয়ার সময় বাস মিললেও মেলা থেকে বের হয়ে আর বাস মিলছে না- এমন অভিযোগ বেশিরভাগ যাত্রীর।
ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে সকাল সকাল বাণিজ্যমেলায় আসেন মেহেদি হাসান রাকিব। তার সঙ্গী ছিলেন নারী-শিশুসহ ছয় জন। তারা সবাই কুড়িল বিশ্বরোড থেকে বিআরটিসির শাটল বাস সার্ভিসে করে বাণিজ্যমেলায় আসেন।
শনিবার (২৮ জানুয়ারি) ছুটির দিন হওয়াতে বাণিজ্যমেলায় দর্শনার্থীদের চাপ ছিল বেশ। যে কারণে বিআরটিসি বাসে এক প্রকার চাপাচাপি করেই মেলায় আসেন তারা।
মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে বেশ কিছু প্রয়োজনীয় পণ্য কিনেছেন। তাই অনেকগুলো ব্যাগ হয়ে গেছে হাতে। তবে এত ব্যাগ আর সঙ্গে নারী-শিশু থাকায় তাদের নিয়ে কীভাবে ফিরবেন, তা নিয়েই দুশ্চিন্তায় পড়েছেন মেহেদি হাসান।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, মেলায় আসার সময় বিআরটিসিতে লাইন ধরে দাঁড়ালাম। কিন্তু সেখানে কোনো প্রকার সিরিয়াল মানা হচ্ছে না। নারী-শিশুদের নিয়ে অনেক কষ্টে ভিড় ঠেলে বাসে উঠতে হয়েছে। আর এখন মেলা থেকে কেনাকাটা সেরে মালামাল নিয়ে ভিড় ঠেলে কিভাবে বাসে উঠতে পারবো সেটাই চিন্তা করছি।
অধিকাংশ ক্রেতা-দর্শনার্থীদের প্রত্যাশা, পরেরবার বাণিজ্যমেলায় যেন ব্যক্তিগত পরিবহনসহ (সিএনজি, ট্যাক্সি সার্ভিস) বিআরটিসির বাসের সংখ্যা বাড়ানো হয়।
গত দুই বছর ধরে শহর থেকে একটু দূরে মেলা হওয়ায় কুড়িল বিশ্বরোড থেকে মেলা প্রাঙ্গণ পর্যন্ত ১৫০টি বিআরটিসি শাটল সার্ভিস বাসের ব্যবস্থা রেখেছিল মেলা কর্তৃপক্ষ। যা সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে মেলা শেষ হওয়া পর্যন্ত চলার কথা। যার ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ টাকা করে।
বাণিজ্যমেলায় যাতায়াতের জন্য বিআরটিসি বাস সাধারণ যাত্রীদের জন্য সাশ্রয়ী হলেও এর ব্যবস্থাপনা ভালো না বলেই অভিযোগ যাত্রীদের। যে কারণে ফিরতি পথে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। পাশাপাশি আগারগাঁওয়ের বাণিজ্যমেলায় যেতে একটু কষ্ট হলেও বাস পাওয়ার কোনো সমস্যা ছিল না বলে দাবি করেন অনেকেই।
ফিরতি পথের ভোগান্তির কথা জানিয়ে রামপুরার বনশ্রীর বাসিন্দা হিমেল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, কে যে বলছিল মেলায় আসতে! যাওয়ার সময় ভোগান্তির কথা যদি মানুষ জানে, তাহলে সাধারণত কেউ আর মেলায় আসতে চাইবেনা। আর যে একবার এসেছে, সে তো ভুলেও এদিকে পা বাড়াবে না। মূল সমস্যা হচ্ছে- ফেরার পথে সিএনজি, উবার কিছুই বাণিজ্যমেলা থেকে পাওয়া যায় না। সন্ধ্যার আগমুহূর্তে যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে মেলা শেষে রাত ১০টায় মানুষের কী অবস্থা হবে? মনে হচ্ছে, এটা শুধু বড়লোকের মেলা হবে। যাদের ব্যক্তিগত গাড়ি আছে, তারাই শুধুমাত্র এখানে আসতে-যেতে পারবেন।
এ নিয়ে বিআরটিসির টিকিট কাউন্টারে দায়িত্বরত একজন জানান, সন্ধ্যার পরও মানুষ মেলায় আসছে। আসার পথে রাস্তায় গাড়ির প্রচণ্ড জ্যাম ছিল। সে জন্য বাস ঢুকতে দেরি হচ্ছে। হয়তো বন্ধের দিন দেখে বাসে চাপটা একটু বেশি।
চলতি মাসের ৩১ জানুয়ারি শেষ হচ্ছে এবারের বাণিজ্যমেলা। সে হিসেবে শনিবারই (২৮ জানুয়ারি) ছিলো বাণিজ্যমেলা চলাকালীন শেষ ছুটির দিন। আয়োজক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, এদিন সকাল থেকে ক্রেতাদের ভিড় ছিল। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত লাখো লোকের সমাগম ঘটে এ দিন।
শনিবার (২৮ জানুয়ারি) শেষ ছুটির দিনে সরেজমিনে বাণিজ্যমেলায় ঘুরে দেখা যায়, শেষ সময়ে মেলা থেকে প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী কেনাকাটা করতে লোক জনের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। ক্রেতা দর্শনার্থীদের ভিড়ে মেলা প্রাঙ্গণে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। যে কারণে বাণিজ্যমেলার আসা-যাওয়ার পথে বিআরটিসি বাসে চাপ ছিল প্রচণ্ড। এ দিন গণপরিবহনের পাশাপাশি দর্শনার্থীদের ব্যক্তিগত গাড়িতে, মোটরসাইকেলে যাতায়াত করতে দেখা গেছে।
২৮তম দিনে এসে বাণিজ্যমেলার সার্বিক পরিস্থিতি জানিয়ে ইপিবি সচিব ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, বাণিজ্যমেলার শেষ শুক্রবারে (২৭ জানুয়ারি) এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ সংখ্যক লোকসমাগম হয়েছে। শেষ শুক্রবারে প্রায় চার লাখ লোক আসেন বাণিজ্যমেলায়। শনিবারও প্রায় দুই থেকে আড়াই লাখ লোক বাণিজ্যমেলায় এসেছেন।
শেষ দুই ছুটির দিনে প্রচুর বিক্রি হয়েছে জানিয়ে ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, যারাই এসেছে কিছু না কিছু কিনে নিয়ে গেছে। আশা করছি, মেলার শেষ দিন পর্যন্ত এমন লোকসমাগম থাকবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০২৩
ইএসএস/এনএস