নওগাঁ: নওগাঁর আত্রাই উপজেলার পাচুঁপুর ইউনিয়নের মধুগুড়নই এলাকায় আত্রাই নদী থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। অপরিকল্পিতভাবে নদীটি থেকে বালু তোলার ফলে এরই মধ্যে ওই এলাকায় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প, ফসলি জমি, মসজিদ, বৈদ্যুতিক খুঁটি হুমকির মুখে পড়েছে।
বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে আত্রাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয়রা বাসিন্দারা।
লিখিত অভিযোগে বলে হয়েছে, উপজেলার পাচুঁপুর ইউনিয়নের সাহেবগঞ্জ গ্রামের বাসিন্দা সায়েম নামে একজন ব্যবসায়ী আত্রাই নদীর মধুগুড়নই এলাকা থেকে নিয়মবহির্ভূতভাবে বালু উত্তোলন করছে। ফলে সাহেবগঞ্জ মধুগুড়নই গুচ্ছগ্রাম, ওই গ্রামের মসজিদ, ৩৩ হাজার ভোল্টের বিদ্যুতি খুঁটিগুলো নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী ভোঁপাড়া ও পাচুঁপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসসহ এলাকাবাসীর আবাদের ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বালু উত্তোলনের চুক্তিনামায় উল্লেখ ছিল গুচ্ছগ্রাম হতে কমপক্ষে এক কিলোমিটার দূর থেকে বালু উত্তোলন করতে হবে। কিন্তু তা না করে এলাকাবাসীকে পাচুঁপুর ইউএনও’র কথা বলে বালু উত্তোলন করা হয়েছে। ফলে বিষয়টি তদন্ত করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করে এলাকাবাসীর বৃহৎ স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয় লিখিত অভিযোগে।
মধুগুড়নই গ্রামের কৃষক আব্দুল হামিদ বাংলানিউজকে বলেন, এখানে আমাদের প্রায় দেড় বিঘা জমি আছে। এসব জমিতে আগে ভুট্টা, আলু, সরিষা চাষ হতো। কিন্তু বালু তোলার কারণে এখন আর এসব জমিতে কোনো ফসল চাষ করা যায় না। প্রথমে আমরা বালু তোলার কাজে জমি দিতে চাইনি। কিন্তু প্রভাবশালীদের দাপটে জমিগুলো দিতে বাধ্য হয়েছি। তবে এখন আমরা চাই- বালু তোলা যেন বন্ধ হয়।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা সাগর খন্দকার বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের এই আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৮০টিরও বেশি ঘর রয়েছে। এখানে বসবাসরত কারোই নিজস্ব জায়গা-জমি ও বাড়ি নেই। এই আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘরগুলো আমাদের একমাত্র সম্বল। কিন্তু আশ্রয়ন প্রকল্পের কাছ থেকে যেভাবে বালু তোলা হচ্ছে তা আমাদের ঘর গুলোর জন্য খুব হুমকিস্বরূপ। আমাদের দাবি- এই এলাকা থেকে যেন আর বালু উত্তোলন করা না হয়।
বালু উত্তোলনকারী সায়েম ফোনে বাংলানিউজকে বলেন, যেই স্থান থেকে আমরা বালু উত্তোলন করছি, এটি ইজারাকৃত মৌজার ভেতরে পড়ে। সরকারিভাবে বালু উত্তোলনের জন্য নদীর এই মৌজা উল্লেখ্য ছিল। আমরা ইজারাকৃত এলাকা থেকেই বালু উত্তোলন করেছি। কিন্তু হঠাৎ করে কিছু দিন বালু তোলার পর পাচুঁপুর ইউএনও বালু উত্তোলন করতে নিষেধ করেন। এখন আমাদের প্রশ্ন? এখানে যদি বালু উত্তোলন করা যায়, তাহলে সরকারিভাবে কেন আমাদের লিজ দেওয়া হলো। আমরাতো অনেক টাকা খরচ করে লিজ দিয়েছি, এখন আমাদের কী হবে?
এসব ব্যাপারে কিছুটা কৌশলী জবাব দিয়েছেন ইউএনও ইফতেখারুল ইসলাম। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, স্থান থেকে বালু তোলা হচ্ছিল সেটি ইজারাকৃত মৌজার ভেতরই ছিল। কিন্তু স্থানীয়দের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আপাতত বালু তোলা বন্ধ করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জনস্বার্থের কথা চিন্তা করে ভবিষ্যতে সরকারিভাবে বালু তোলার জন্য পুরো এলাকা ইজারা যেন না দেওয়া হয়, সেইভাবে চিন্তা করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২২১৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০২৩
এসআরএস