ঢাকা: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন কুড়িগ্রামের মেরুদণ্ড জোড়া লাগানো শিশু নুহা ও নাবার প্রথম ধাপের অস্ত্রোপচার সফলভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে। অস্ত্রোপচার পরবর্তী অবস্থায় নুহা ও নাবা ভাল আছেন।
মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) দুপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিশু নুহা ও নাবার চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন। শিশু নুহা ও নাবার চিকিৎসার সকল খরচ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যক্তিগতভাবে বহন করছেন। তিনি নুহা ও নাবার সার্বক্ষণিক খবর নিচ্ছেন। তিনি শিশুদ্বয়ের যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। চিকিৎসার প্রথম ধাপের অস্ত্রোপচার সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছেন। নুহা ও নাবা ভাল আছে।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্বমানের সব ধরণের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা হবে। ইতোমধ্যে সফলভাবে লিভার ট্রান্সপ্লান্ট, দেশের প্রথম সফল ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্ট সফলভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে। মেরুদণ্ডে জোড়া লাগানো শিশু দুটির অস্ত্রোপচার সফলভাবে সম্পন্ন হবে বলে আমি আশাবাদী। তাদের সুস্থতার জন্য দেশবাসীর কাশে দোয়া কামনা করছি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেবিন ব্লকের অপারেশন থিয়েটারে রোববার (২৯ জানুয়ারি) সকাল ৯টা থেকে ৩টা পর্যন্ত চলা নুহা ও নাবার প্রথম ধাপের অস্ত্রোপচার সফলভাবে সম্পন্ন হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জারি অনুষদের ডিন ও নিউরোসার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন এ অস্ত্রোপচারের নেতৃত্ব দেন।
অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে নুহা ও নাবার দেহে টিস্যু বর্ধনকারী ডিভাইস ৪টি এক্সপান্ডা সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়। ৬ ঘণ্টা চলা এ অস্ত্রপচারের সময় শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনিস্টিটিউটের তত্ত্বাধায়ক ডা. সামন্তলাল সেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নার্সিং অনুষদের ডিন ও অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের অধ্যাপক ডা. দেবব্রত বনিক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান অধ্যাপক ডা. আইয়ুব আলী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. একেএম জাহিদ হোসেন, অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. দেবাশীষ বনিকসহ আরও ১০ জন চিকিৎসক এ অস্ত্রোপচারে অংশগ্রহণ করেন।
অস্ত্রোপচার পরবর্তী অবস্থায় সাবধানতার জন্য নুহা ও নাবাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হাই কেয়ার ইউনিট এইচডিইউতে রাখা হয়েছে।
সার্জারি অনুষদের ডিন ও নিউরো সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন বলেন, মেরুদণ্ড ও স্পাইন জোড়ালাগা এ দুই শিশুর অস্ত্রোপচার অত্যন্ত জটিল, স্পর্শকাতর ও সময় সাপেক্ষ। বেশ কয়েক ধাপে এ অস্ত্রোপচার করা লাগবে। নিউরো সার্জন, ইউরোলজিস্টস, শিশু সার্জন, বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জন, এনেস্থিওলজিস্ট, শিশু পুষ্টিবিদসহ বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসকের প্রয়োজন হবে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে রোববার তাদের প্রথম ধাপের অস্ত্রোপচার সফলভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে।
জোড়া লাগানো জমজ শিশুর চিকিৎসার জন্য অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেনের নেতৃত্বে শিশু সার্জারি, প্লাস্টিক ও রিকন্সট্রাকটিভ সার্জারি, ভাসকুলার সার্জারি, ট্রান্সফিউশন মেডিসিন, অ্যানেসথেসিয়াসহ সকল বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণের সমন্বয়ে ১৯ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।
কুড়িগ্রাম জেলার কাঁঠালবাড়ীর পরিবহন শ্রমিক আলমগীর রানা ও তার স্ত্রী নাসরিনের গর্ভে মেরুদণ্ডে জোড়া লাগানো কন্যা সন্তান নুহা ও নাবা গত বছর ২১ মার্চ জন্ম নেয়। এটাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় (Pygopagus Conjoined twin) ) বলে। গত এপ্রিল মাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জারী অনুষদের ডিন ও নিউরো স্পাইন সার্জন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেনের অধীনে নুহা ও নাবাকে ভর্তি করা হয়।
বাংলাদেশ সময়:১৯৪৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০২৩
আরকেআর/এসএম