ঢাকা: বিলিয়ন ডলারের প্রজেক্টে ঢাকা মহানগরী জুড়ে তৈরি হচ্ছে একের পর এক মেট্রোরেল, ফ্লাইওভার কিংবা সুরম্য অট্টালিকা। কিন্তু এসব স্থাপনা তিলোত্তমা নগরী ঢাকার সৌন্দর্য বাড়াতে পারছে না একটিমাত্র কারণে।
সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন ফ্লাইওভার ঘুরে চোখে পড়েছে অজস্র পোস্টার-ব্যানার আর ফেস্টুনের।
রাজনৈতিক নেতানেত্রীদের ব্যক্তিগত বা সাংগঠনিক প্রচার-প্রচারণা কিংবা বাহারি পণ্যের বিজ্ঞাপন, সবকিছুর জন্যেই যেন ‘নির্ধারিত জায়গা’ ফ্লাইওভার কিংবা মেট্রোরেলের পিলার।
অথচ পোস্টার লাগানো নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২ অনুযায়ী, অনুমতি ছাড়া যত্রতত্র পোস্টার সাঁটানো শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এই আইন ভঙ্গ করলে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও এক মাসের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।
কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই এই আইনের কথা জানেন না। এই আইনের প্রয়োগও নিতে দেখা যায় না কর্তৃপক্ষকে।
মগবাজার মোড়ে এসব পোস্টার লাগানো বিষয়ে কথা হচ্ছিল পথচারীদের সঙ্গে।
সবুজ হোসেন নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, রাজনৈতিক আর বিজ্ঞাপনী পোস্টারের কারণে আমাদের সুন্দর নগরী অসুন্দর হয়ে যাচ্ছে। কেউই এসব বিষয়ে নজর দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন না।
যত্রতত্র পোস্টার লাগানো নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ।
এ অর্থনীতিবিদ বলেন, ঢাকার সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য তো অনেক ব্যয়বহুল প্রকল্প প্রায়ই গ্রহণ করা হয়। যদিও পরবর্তীতে সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের দিকে আমাদের নজর কম থাকে।
যারা একটা নতুন পরিষ্কার পিলারে প্রথম পোস্টারটি অবৈধভাবে সেঁটে দেন, তাদের ন্যূনতম নাগরিক দায়িত্ববোধ বা রুচিশীলতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেন এ অর্থনীতিবিদ।
কী বলছেন ‘পোস্টার বয়’ মিলন?
রাজধানীর যত্রতত্র পোস্টার লাগানোর কারণে নগরবাসীর কাছে ‘পোস্টার বয়’ মিলন নামে পরিচিতি পেয়েছেন সাইফুদ্দিন আলম মিলন।
তিনি জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য। মেট্রোরেলের পিলারে পোস্টার লাগানোয় হাইকোর্টের রুল জারি হয়। গ্রেফতারের হুঁশিয়ারিও পান সাইফুদ্দিন আলম মিলন।
এসব বিষয়ে বাংলানিউজকে সাইফুদ্দিন আলম মিলন বলেন, আমরা বছরে পোস্টার লাগাই একবার। অন্য রাজনৈতিক দল, বিশেষ করে সরকারি দল সারাবছরই পোস্টার লাগায়। সরকার যদি নিষিদ্ধ করে তাহলে আমরা আর পোস্টার লাগাব না।
হাইকোর্টের রুলের বিষয়ে তিনি বলেন, আগে মেট্রোরেলের পিলারে পোস্টার লাগানো নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পরের দিনই পোস্টার তুলে ফেলেছি। এখন যদি ফ্লাইওভারে পোস্টার লাগানো নিষেধ হয় সেটাও তুলে ফেলব।
তার পোস্টার বেশি দেখা যায় কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অন্যরা নিচের দিকে পোস্টার লাগায়, আর আমি অনেক উঁচুতে লাগাই। এজন্য অন্যরা ১০০০ টা লাগালেও আমারটাই চোখে পড়ে। কারণ আমার পোস্টার বড়। আর নিচে লাগানো পোস্টারের পরে অন্য পোস্টার লাগানো গেলেও উঁচুতে লাগানোর কারণে আমার একটা পোস্টারই সারাবছর থেকে যায়।
এর আগে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও মেট্রোরেলের পিলারেও পোস্টার লাগিয়েছিলেন মিলন।
সে সময় বাংলানিউজকে তিনি বলেছিলেন, যারা পোস্টার লাগিয়েছিলো তাদের মারধর করা হয়েছিল। বারণ করা হয়েছিল পোস্টার না লাগাতে। যারা পোস্টার লাগিয়েছে সেগুলো ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে।
ভবিষ্যতে আর পোস্টার লাগাবেন না বলেও জানিয়েছিলেন জাতীয় পার্টির এ প্রেসিডিয়াম সদস্য।
যা বলছে কর্তৃপক্ষ
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উপপ্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মফিজুর রহমান ভুঁইয়া বলেন, আমাদের পোস্টার অপসারণের কার্যক্রম চলমান আছে। কিন্তু একদিকে আমরা পোস্টার অপসারণ করছি, অপরদিকে পোস্টার লাগানো হচ্ছে। আইনগত ব্যবস্থা না নিলে পোস্টার মুক্ত হচ্ছে না।
এ বিষয়ে আইন থাকার পরেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা অভিযান পরিচালনাকারী ম্যাজিস্ট্রেটরা বলতে পারবে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। তবে হাইকোর্টের নির্দেশনার কপি পাইনি, পেলে এ বিষয়ে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, রাজধানীর সব (সাতটি) ফ্লাইওভারে দেওয়াল লিখন ও পোস্টার অপসারণের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্টদের এই নির্দেশ পালন করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২২, ফেব্রুয়ারি ৬ , ২০২৩
এনবি/এসএএইচ