ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

১৪ মজুরি বোর্ডের মেয়াদ শেষ, গঠন করতে হবে এ বছরেই

জাফর আহমদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৩
১৪ মজুরি বোর্ডের মেয়াদ শেষ, গঠন করতে হবে এ বছরেই

ঢাকা: ১৪টি শিল্প ও সেবা খাতের শ্রমিকদের জন্য মজুরি ঘোষণা করা বোর্ডের মেয়াদ শেষ হচ্ছে চলতি বছরে। আইনি বাধ্যবাধকতায় ২০২৩ সালের মধ্যেই বোর্ড পুনর্গঠন করতে হবে।

চার দশক ধরে কার্যক্রম বন্ধ থাকা টাইপ ফাউন্ডি খাত বিলুপ্তির প্রক্রিয়া শুরু করেছে শ্রম মন্ত্রণালয়ের নিম্নতম মজুরি বোর্ড। নতুন করে যুক্ত হয়েছে সিমেন্ট কারখানা ও সিরামিক শিল্পের শ্রমিকদের জন্য মজুরি বোর্ড।

টাইপ ফাউন্ড্রি শিল্পের শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণী সংস্থা শ্রম মন্ত্রণালয়ের নিম্নতম মজুরি বোর্ডের তালিকার ১ নম্বর শিল্প খাত। বোর্ডের তালিকায় ৪৪টি শিল্প খাত রয়েছে। এর মধ্যে ৪২টি পুরাতন খাত।

শ্রম আইন-২০০৬ এর ১৩৯-এর ৬ উপধারাতে বলা হয়েছে ‘কোন শিল্পে নিযুক্ত শ্রমিকের জন্য স্থিরকৃত ন্যূনতম মজুরির হার সরকারে নির্দেশক্রমে প্রতি পাঁচ বছর অন্তর পুনঃনির্ধারণ করবে’। এ অনুযায়ী শিল্প ও সেবা খাতের শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি বা বেতন নির্ধারিত হবে। এ ক্ষেত্রে শিল্প ও সেবা খাত হিসাবে প্রতিষ্ঠিত শ্রমিকের দাবি থেকে শ্রমিক ও মালিকের প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠন করা হয় মজুরি বোর্ড। পুরাতন বোর্ড হলে শিল্পের মালিক ও শ্রমিকের একজন করে নতুন প্রতিনিধির সমন্বয়ে বোর্ড পুনর্গঠন করা হয়। বোর্ডের চেয়ারম্যান ও একজন নিরপেক্ষ সদস্য থাকেন, যারা শিল্প সম্পর্কে অভিজ্ঞ; তবে তারা কোনো পক্ষ নয়। এ বোর্ড মূল্যস্ফীতি তথা জীবন যাত্রার ব্যয়, কাজের ধরনসহ সার্বিক দিক বিবেচনা করে ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করে, যা মালিকপক্ষ বাস্তবায়ন করতে বাধ্য থাকে। তবে কোনো শিল্প খাত মনে করলে ঘোষিত মজুরি বা বেতনের বেশিও দিতে পারে।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ৪৪টি শিল্প খাতের মধ্যে মেয়াদ শেষে ১৪টি বোর্ড পুনর্গঠন করা হয়েছে। সিমেন্ট কারখানা ও সিরামিক নতুন বোর্ড গঠ্ন করা হয়েছে। বেসরকারি পাটকল ও চা শ্রমিকদের মজুরি ঘোষণা করা হয়েছে। ঘোষণার অপেক্ষায় আছে হোমিওপ্যাথিক কারখানা, রাবার ইন্ডাস্ট্রি ও বিড়ি কারখানার শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি।

এর বাইরে পেট্রোল পাম্প, আয়ুর্বেদিক কারখানা, আয়রন ফাউন্ড্রি অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ, ওয়েল মিলস অ্যান্ড ভেজিটেবল প্রডাক্ট, সল্ট ক্রাসিং, কোল্ড স্টোরেজ, সিনেমা হল, ম্যাচ শিল্প কারখানা, জুট প্রেস অ্যান্ড বেলিং এবং সোপ অ্যান্ড কসমেটিক শিল্পের শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণে বোর্ড কাজ করছে।

ইতোমধ্যে মেয়াদ শেষ হয়েছে, চলতি বছছেই মজুরি বোর্ড গঠন করতে হবে ১৪টি শিল্প খাতের। এসব খাত হলো—ব্যক্তি মালিকানাধীন শিল্প প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত অদক্ষ প্রাপ্ত বয়স্ক শ্রমিক এবং কিশোর শ্রমিক, হোটলে অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট, হোসিয়ারি, ফার্মাসিউটিক্যাল, টি প্যাকেটিং, জাহাজ ভাঙ্গা, ট্যানারি, দর্জি কারখানা, কটন টেক্সটাইল, বেকারি বিস্কুট ও কনভেকশনারি, অটোমোবাইল ওয়ার্কশপ, অ্যালুমিনিয়াম অ্যান্ড এনামেল, গার্মেন্টস এবং গ্লাস অ্যান্ড সিলিকেট কারখানার শ্রমিকদের জন্য গঠিত মজুরি বোর্ডের ৫ বছর মেয়াদ ইতোমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। চলতি ২০২৩ সালের মধ্যে সরকারকে এই ১৪ শিল্প ও সেবা খাতের শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির জন্য বোর্ড গঠন করতে হবে।

যেসব খাতের মজুরি বোর্ডের মেয়াদ শেষ হয়েছে, সেগুলো দ্রুত পুনর্গঠন করে জীবনযাত্রার ব্যয়ের সঙ্গে সংগতি রেখে মজুরি ঘোষণা করা প্রয়োজন। পাশাপাশি বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা খাতের মতো যেসব খাতে মজুরি বোর্ড নেই, সেগুলোতে মজুরি বোর্ড গঠনে মত দেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের (টিইউসি) সাধারণ সম্পাদক প্রবীণ শ্রমিকনেতা ডা. ওয়াজেদুল ইসসলাম খান।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, যদি শ্রমিককের ন্যায্য পাওনার কথা বলি তাহলে মজুরি বোর্ড শ্রমিকের জন্য অত্যাবশ্যক। এর কোনো বিকল্প নেই। এটা উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য জরুরি।

কোনো খাত স্পন্দন হারিয়েছে, কিন্তু মজুরি বোর্ড আছে—এমন খাত কোনভাবেই বন্ধ করার পক্ষে নই। নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে প্রতি বছর। এতে শ্রমিকের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ছে। প্রাপ্ত মজুরি দিয়ে শ্রমিকের চলতে কষ্ট হয়। এসব বিবেচনায় বোর্ড পুনর্গঠন করে প্রতি দুই বছর পরপর মজুরি নির্ধারণ করা প্রয়োজন, বলেন এই শ্রমিকনেতা।

২০২০ সালের পর যেসব শিল্পের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বোর্ড গঠন করা হয়, সেগুলোতে আগামী বছরে বোর্ড গঠন করতে হবে। এসব শিল্প ও সেবা প্রতিষ্ঠানগুলো হলো—প্লাস্টিক, রি রোলিংস মিলস, ব্যক্তি মালিকানাধীন সড়ক পরিবহন, রাইস মিল, চামড়াজাত পণ্য ও জুতা কারখানা, নির্মাণ ও কাঠ, সিকিউরিটি সার্ভিসেস, স’মিল, প্রিন্টিং প্রেস, চিংড়ি এবং মৎস্য শিকারী ট্রলার ইন্ডাট্রিজ।

সভ্যতার ধারক টাইপ রাইটিং এখন আর নেই, নেই এর কর্মীরাও। টাইপ যন্ত্রটি এখন জাদুঘরের বিষয় পরিণত হচ্ছে। টাইপিংয়ের জায়গা দখল করে নিয়েছে কম্পিউটার ও স্মার্টফোন। সর্বশেষ সরকারি ডকুমেন্ট টাইপিস্টদের পারিশ্রমিক নির্ধারণে শ্রম মন্ত্রণালয়ের তালিকা থেকে চিহ্নটুকু মুছে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, গত চার দশকে টাইপ রাইটারদের আর কোনো শ্রমিক প্রতিনিধি নেই। নেই শিল্পের অস্তিত্বও। দাবি দাওয়া জানানোর জন্য কোনো প্রতিনিধিও পাওয়া যায় না। এ কারণে খাতটির বিলুপ্ত করার উদ্যোগ হিসেবে মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে। সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলে ন্যূনতম মজুরি থেকে বাদ যাবে টাইপ ফাউন্ড্রি।

সবশেষ খাতটির কর্মী টাইপিস্টদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ হয়েছিল ১৯৮৩ সালে। সে সময় টাইপিস্টদের ন্যূনতম বেতন ছিল ৫২১ টাকা। এর মধ্যে মূল মজুরি ৩২০ টাকা, বাড়িভাড়া ৯৬ টাকা, চিকিৎসাভাতা ৬০ টাকা, যাতায়াত ২০ টাকা আর খাদ্য বা রেশন বা পাহাড়ি ভাতা ২০ টাকা।

বর্তমান গুরুত্বপূর্ণ খাত সিমেন্ট কারখানা ও সিরামিক। এ খাত দুটিতে বড় পুঁজি ও প্রযুক্তির সম্মিলন হয়েছে। যুক্ত হয়েছে উন্নয়ন ধারার অনিবার্য অংশ হিসেবে। এসব বিবেচনা করে নিম্নতম মজুরি বোর্ডে যুক্ত হয়েছে খাত দুটি। ইতোমধ্যে বোর্ডও গঠন করা হয়েছে। শিগগিরই বোর্ডের বৈঠক শুরু হবে; নির্ধারণ হবে শ্রমিকদের জন্য মজুরি বোর্ড।

বাংলাদেশ সময় ১৭৪২ ঘন্টা; ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৩
জেডএ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।