সাতক্ষীরা: ২০১০ সালে ৮০ ফুট প্রশস্ত করে খনন করা হয়েছিল আদি যমুনা নদী। এবার তা খনন করা হচ্ছে ৬০ ফুট প্রশস্ত করে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দায়সারাভাবে খননের মধ্যদিয়ে বিশাল এলাকাকে মরুকরণের দিকে ঠেলে দিচ্ছে পাউবো। যে প্রক্রিয়ায় খাল খনন করা হচ্ছে তাতে উপকারের পরিবর্তে কালিগঞ্জ ও শ্যামনগরের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষকে চরম ক্ষতির মুখোমুখি হতে হবে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
এলাকার সার্বিক কল্যাণের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে এ ঘটনায় প্রয়াজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।
কালিগঞ্জ উপজলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি সাঈদ মেহেদী জানান, আদি যমুনা একটি ঐতিহ্যবাহী নদী। এই নদীর পানি ব্যাবহার করে হাজার হাজার বিঘা জমিতে কৃষি কাজ করা হয়। ১৯৯০ সাল থেকে দখলদারদের কবল পড়ে আদি যমুনায় পানিপ্রবাহ সম্পূর্ণ বন্ধ হয় যায়। বর্ষা মৌসুমে কয়েকটি ইউনিয়নের পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হওয়ায় এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় এবং বহু মানুষ মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হন।
তিনি আরও বলেন, কালিগঞ্জ ও শ্যামনগরকে রক্ষা করতে এবং সুন্দরবনকে বাঁচাতে এই আদি যমুনা নদী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ইছামতি নদীর মিষ্টি পানি এসে এলাকার কৃষিকাজসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উপকার করে। প্রায় ২০ বছর আন্দোলনের পরে প্রধানন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে ২০১০ সালে উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে যমুনা নদী ৮০ ফুট প্রশস্ত করে খনন করা হয়। পরবর্তীতে চক্রান্তের মাধ্যমে এখানে ব্রিজের অজুহাত দিয়ে ৮০ ফুটের পরিবর্তে ৬০ ফুট প্রশস্ত ও ৩০ ফুট গভীরতায় খননের জন্য প্রস্তাবনা তৈরি করে। সে অনুযায়ী কার্যাদেশ পাওয়ার পর কিছুদিন আগে ঠিকাদার খনন কাজ শুরু করেছে। এর ফলে যমুনা নদী সরু নর্দামায় পরিণত হচ্ছে। যে উদ্দশ্যে যমুনা খনন করা হচ্ছিল সে উদ্দেশ্য তো বাস্তবায়ন হবেই না, বরং আরও ক্ষতি হবে। এ ঘটনায় পেউবোর কতিপয় দুষ্টুচক্রের হাত আছে বলে আমি মনে করি।
এই জনপ্রতিনিধি বলেন, আদি যমুনা পুনঃখনন সংক্রান্ত বিষয়ে আমি ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) জানিয়েছি। কিন্তু তারা এ পর্যন্ত ঘটনাস্থলে আসেননি। অথচ এর মধ্যে ঠিকাদার অর্ধেক খনন কাজ শেষ করে ফেলছে।
এ কাজ বন্ধ রেখে পুনরায় এস্টিমেট তৈরি করে আদি যমুনার ৩২ কিলোমিটার খননের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তিনি আহ্বান জানান তিনি।
এ ব্যাপার মৌতলা ইউপি চেয়ারম্যান ফেরদাউস মোড়ল জানান, গুরুত্বপূর্ণ যমুনা খাল শ্যামনগর থেকে কালিগঞ্জ পর্যন্ত খনন করা হচ্ছে। সার্ভে করে এখন যেভাবে এ কাজ হচ্ছে তাতে স্থানীয় জনগণের কল্যাণে আসবে না। খালটা আগে ৮০ থেকে ১০০ ফুট প্রশস্ত ছিল। বর্তমান ৬০ ফুট প্রশস্ত করে খনন করা হচ্ছে, আর গভীর করা হচ্ছে মাত্র ৩০ ফুটের মতো। বর্তমান যে ভাবে পুনঃখনন করা হচ্ছে তাতে এলাকার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং বিশাল এলাকা মরুকরণের দিকে এগিয়ে যাবে। প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ের এই খনন কাজ কোনোেউপকারে আসবে না।
আদি যমুনা বাঁচাও আন্দোলন কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. জাফরুল্যাহ ইব্রাহিম বলেন, অবৈধ দখলদারদের কবলে পড়েএটি এখন ড্রেন-নর্দমায় পরিণত হয়েছে। ২০১০ সাল ৮০ ফুট প্রশস্ত করে পুনঃখনন করা হয়। অজ্ঞাত কারণে সম্প্রতি ৬০ ফুট প্রশস্ত করে যেনতেন ভাবে পুনঃখনন করা হচ্ছে। এভাবে খনন করলে জনগণের কল্যাণ আসবে না বরং এতে অবৈধ দখলদাররা আরও সুবিধা পাবে। খালটি রক্ষা না করলে অদূর ভবিষ্যতে এটি বিলীন হয়ে যাবে। আর যমুনায় পানিপ্রবাহ না থাকলে বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ চরমভাব ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
এজন্য সময় উপযোগী সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, খননের নামে এখানে হরিলুট চলছে। ঠিকাদারের লোকজন ইচ্ছামতো কাজ করছে। খনন করে যেভাবে পাড়ে মাটি ফেলা হচ্ছে তাতে এটি আরও ভরাট হয়ে এলাকার মানুষ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কারণ হবে। তাই এই কাজ বন্ধ রেখে আবারও যথাযথভাবে খননের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাচ্ছি।
সাতক্ষীরা পাউবোর ৫নং পোল্ডারের সেকশন কর্মকর্তা তনয় হালদার বলেন, ৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে কালিগঞ্জ স্লুইস গেট থেকে আদি যমুনার ১৬ কিলোমিটার পর্যন্ত খনন কাজ চলছে। ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কার্যাদেশ পেয়েছেন। সিডিউল অনুযায়ী ঠিকাদার কাজ করছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১১২৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৩
এমএমজেড