ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বিচারক থেকে দুদক কমিশনার, এরপর রাষ্ট্রপতি পদে

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৩
বিচারক থেকে দুদক কমিশনার, এরপর রাষ্ট্রপতি পদে

ঢাকা: আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে রাষ্ট্রপতি পদের জন্য মনোনয়ন দিয়েছে দলটি। মনোনয়নপত্র বৈধ হলে এবং তা প্রত্যাহার না করলে তিনিই হচ্ছেন দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি।

বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে সাহাবুদ্দিন চুপ্পু আইনজীবী, জেলা ও দায়রা জজ, দুদক কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, তিনি ইসলামী ব্যাংকের বোর্ড অব ডিরেক্টরস-এর ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। রাজনৈতিক জীবনে ছাত্রলীগ, যুবলীগের রাজনীতির পর সর্বশেষ তিনি এখন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য।

১৯৪৯ সালে পাবনা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। শিক্ষা জীবনে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন।

রাজনৈতিক জীবনে সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ১৯৭১ সালে পাবনা জেলার স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর তিনি দীর্ঘ তিন বছর কারাগারে বন্দী ছিলেন।

তিনি ছাত্র জীবনে পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং ১৯৭৩ সালে পাবনা জেলা যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৮২ সালে তিনি বিসিএস বিচার বিভাগে যোগদান করেন। ১৯৯৫ সালে জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশানের মহাসচিব হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আইন মন্ত্রণালয় থেকে কো-অর্ডিনেটর হিসেবে নিয়োজিত থেকে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০০১ সালে সাধারণ নির্বাচন পরবর্তী সময়ে বিএনপি-জামায়াত জোটের নেতাকর্মীদের সংগঠিত হত্যা, লুণ্ঠন এবং মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড অনুসন্ধানে দ্রুত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

২০০৮ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত তিনি সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী এবং ২০১১ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত দুর্নীতি দমন কমিশনের একজন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

জেএমসি বিল্ডার্স লিমিটেড-এর প্রতিনিধি হিসেবে তিনি ইসলামী ব্যাংক, বাংলাদেশের বোর্ড অব ডিরেক্টরস-এর ভাইস চেয়ারম্যান পদে আছেন।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিলে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন দলটির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সাহাবুদ্দিন চুপ্পু।

তিনি ব্যক্তিগত জীবনে এক পুত্র সন্তানের পিতা। তার স্ত্রী প্রফেসর ড. রেবেকা সুলতানা সরকারের সাবেক যুগ্ম সচিব ছিলেন।

আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি ভোটের দিন রেখে গত ২৫ জানুয়ারি এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল, যিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ‘নির্বাচনী কর্তা’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র যাচাই হবে ১৩ ফেব্রুয়ারি, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৪ ফেব্রুয়ারি। ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় সংসদ ভবনে, দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত।

সংবিধান অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি কার্যভার গ্রহণের তারিখ থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর তার পদে অধিষ্ঠিত থাকতে পারবেন। বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল কার্যভার গ্রহণ করেন। সেই অনুযায়ী তার দায়িত্বের পাঁচ বছর মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ২৩ এপ্রিল।

এদিকে রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে পদটি শূন্য হলে মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিন থেকে ৬০ দিনের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করার বিধান রয়েছে। সংবিধানের এসব বিধানের আলোকে পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময় গণনা শুরু হয়েছে ২৪ জানুয়ারি। আর ভোটগ্রহণ করতে হবে ২৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে।

রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনের জন্য সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে একজন প্রস্তাবক ও একজন সমর্থক হতে হয়। আর সংসদ সদস্যরাই এ নির্বাচনের ভোটার। বর্তমান সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এজন্য এ দল থেকে যে প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছে, তিনিই নির্বাচিত হচ্ছেন বলে ধরে নেওয়া যায়।

সাহাবুদ্দীন চুপ্পুকে রাষ্ট্রপতি পদে প্রস্তাবক হয়েছেন ওবায়দুল কাদের আর সমর্থক হয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।

আইনি বাধ্যবাধকতা অনুসারে একক প্রার্থী থাকলে এবং তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় (১৪ ফেব্রুয়ারি) শেষে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষিত হবেন।

‘প্রাক্তন’ রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন থাকাকালে ২০১৩ সালের ১৪ মার্চ থেকে মো. আবদুল হামিদ ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। ওই বছর ২০ মার্চ রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান মৃত্যুবরণ করলে মো. আবদুল হামিদ সেদিন থেকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে ২২ এপ্রিল তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন এবং ২৪ এপ্রিল বাংলাদেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। এরপর মো. আবদুল হামিদ ২০১৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি ধারাবাহিকভাবে দ্বিতীয় মেয়াদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন এবং ওই বছর ২৪ এপ্রিল ২১তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। সংবিধান অনুযায়ী, দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত হওয়ায় তিনি আর এ পদে প্রার্থী হতে পারবেন না।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৩
ইডি/এমইউএম/এসআইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।