ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

১৪ ফেব্রুয়ারিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সুন্দরবন দিবস হিসেবে ঘোষণার আহ্বান

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৩
১৪ ফেব্রুয়ারিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সুন্দরবন দিবস হিসেবে ঘোষণার আহ্বান

খুলনা: সুন্দরবন সুরক্ষায় রাজনৈতিক অঙ্গিকার, পৃথক মন্ত্রণালয় এবং ১৪ ফেব্রুয়ারিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সুন্দরবন দিবস হিসেবে ঘোষণার আহ্বানের মধ্য দিয়ে এবারের সুন্দরবন দিবস উদযাপিত হয়েছে।

কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে খুলনায় মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সুন্দরবন দিবসে সকাল ১১টায় খুলনা প্রেস ক্লাবের হুমায়ুন কবীর বালু মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

 

এছাড়াও খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরাসহ সুন্দরবন সন্নিহিত জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে দিবসটি পালন করা হয়েছে।

খুলনা প্রেস ক্লাব ও সুন্দরবন একাডেমীর যৌথ উদ্যোগে এবারে কেন্দ্রীয়ভাবে খুলনায় সুন্দরবন দিবস উদযাপন করা হয়। সুন্দরবন একাডেমীর নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদিরের সভাপতিত্বে এবং অসীম আনন্দ দাসের সঞ্চালনায় এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মো. ইউসুপ আলী।

অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন খুলনা প্রেস ক্লাবের সভাপতি এস এম নজরুল ইসলাম, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক মো. নাজমুস সাদাত, সুন্দরবন একাডেমীর উপদেষ্টা ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা রূপান্তরের নির্বাহী পরিচালক স্বপন কুমার গুহ, বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক আলমগীর কবীর, খুলনা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মামুন রেজা, খুলনা প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি শেখ আবু হাসান।  

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন সুন্দরবন একাডেমীর পরিচালক ও খুলনা প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ফারুক আহমেদ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বন বিভাগের মৎস্য বিশেষজ্ঞ মো. মফিজুর রহমান চৌধুরী। মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন খুলনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক মফিদুল ইসলাম টুটুল, ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ মোহাম্মদ আলী, মাসাসের নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট শামীমা সুলতানা শিলু, সুন্দরবনপ্রেমিক শাহ মামুনুর রহমান তুহিন. নাগরিক নেতা মো. সাবির খান, সাংবাদিক শহীদুল ইসলাম প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, রাজনৈতিক অঙ্গীকার ছাড়া সুন্দরবনের সুরক্ষা সম্ভব না। এ জন্য সুন্দরবন সুরক্ষার সামাজিক আন্দোলন বেগবান করতে রাজনৈতিক দলগুলোকে সাথে নিতে হবে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে যাতে প্রধান দলগুলোর নির্বাচনী মেনিফেস্টোতে ১৪ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রীয়ভাবে সুন্দরবন দিবস ঘোষণার বিষয়টি থাকে সেজন্য জোরালো অ্যাডভোকেসি করতে হবে।

বক্তারা বলেন, সুন্দরবনের টিকে থাকার ওপর দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের বেঁচে থাকা, অর্থনৈতিক অগ্রগতি, সমৃদ্ধি বহুলাংশে নির্ভরশীল এ বনকে ভালোভাবে বাঁচিয়ে রাখতে সবাইকে সম্মিলিত উদ্যোগ নিতে হবে। এজন্য সুন্দরবন বিষয়ক পৃথক মন্ত্রণালয় প্রয়োজন। পৃথক মন্ত্রণালয় না হলে সুন্দরবন এলাকা ব্যবহারকারী অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সাথে সমন্বয় করা সম্ভব হবে না।  

বক্তারা সুন্দরবন রক্ষায় জন অংশগ্রহণ আরো বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, শুধুমাত্র বন বিভাগের কিছু কর্মীদের দিয়ে সুন্দরবনকে রক্ষা করা সম্ভব নয়। সুন্দরবন সন্নিহিত এলাকার মানুষকে এ বিষয়ে সচেতন করে তুলতে হবে যে সুন্দরবনের যেকোনো ক্ষতি তাদেরও ভবিষ্যতে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন করবে।

দাকোপ:

এদিকে ১৪ ফেব্রুয়ারি সুন্দরবন দিবস চালনা পৌরসভা মিলনায়তনে সুন্দরবন একাডেমীর উদ্যোগে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন চালনা পৌরসভার মেয়র সনত কুমার বিশ্বাস। সভাপতিত্ব করেন কাউন্সিলর এসএম আব্দুলল গফুর, ধারনাপত্র পাঠ করেন চালনা পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সিরাজুল ইসলাম। স্বাগত বক্তৃতা করেন মো. শাহীন ইসলাম।  

আলোচনায় অংশ নেন করেন শেখ জার্জিস উল্লাহ, কাউন্সিলর সুধীন্দ্র বিশ্বাস মাখন, আপরাজিতা বিথীকা রায়, সাংবাদিক আসগর হোসেন সাব্বির ও দীপক রায়। সঞ্চালনায় ছিলেন বিপুল রায়।

সাতক্ষীরা:

সুন্দরবন দিবস উপলক্ষে আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টায় শহরের ম্যানগ্রোভ সভা কক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ আব্দুল হামিদের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সামাজিক ব্যক্তিত্ব শেখ আজহার হোসেন, জেলা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব ও দৈনিক পত্রদূত পত্রিকার উপদেষ্টা সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, বন বিভাগের জেলা সামাজিক বনায়ন কার্যক্রমের সহকারী বন সংরক্ষক নুরুন্নাহার।

সুন্দরবন দিবস উদযাপন কমিটি, সাতক্ষীরা আয়োজিত আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন স্বদেশ-সাতক্ষীরার নির্বাহী পরিচালক মানবাধিকারকর্মী মাধব চন্দ্র দত্ত। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন উন্নয়নকর্মী সরদার গিয়াসউদ্দিন আহম্মেদ। মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক হারুন উর রশীদ, উন্নয়নকর্মী অধ্যক্ষ আশেক ই এলাহী, অধ্যাপক ইদ্রিস আলী, বরসার সহকারী পরিচালক নাজমুল আলম মুন্না, কবি কবির রায়হান। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ক্রিসেন্ট’র নির্বাহী পরিচালক আবু জাফর সিদ্দিক, কোস্টাল পিপলস ফোরাম-সিপিএফ’র পরিচালক ফারুক রহমান, হেড সংস্থার পরিচালক লুইস রানা গাইন, অর্জন ফাউন্ডেশনের পরিচালক মহুয়া মঞ্জুরী, সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের পরিচালক শেখ আফজাল হোসেন প্রমুখ।

মোংলা:

মোংলা উপজেলায় সুন্দরবন একাডেমী ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন-বাপা’র যৌথ আয়োজনে সুন্দরবন দিবস উপলক্ষে ব্যাপক কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। কর্মসূচির মধ্যে ছিল শিশুদের সুন্দরবনভিত্তিক চিত্রাংকন ও বক্তৃতা প্রতিযোগিতা। সকালে উপজেলা পরিষদ থেকে একটি শোভাযাত্রা বের হয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়। শহীদ মিনার চত্বরে আলোচনা সভা নাগরিক নেতা ও উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান নূর আলম শেখের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। শোভাযাত্রা এবং আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলার নির্বাহী অফিসার দীপংকর দাশ। আলোচনায় অংশ নেন সুভাষ বিশ্বাস, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুনীল কুমার বিশ্বাস, শরৎ চন্দ্র কর্মকার প্রমুখ।

শরণখোলা:

শরণখোলায় সুন্দরবন একাডেমী এবং শরণখোলা প্রেস ক্লাবের যৌথ আয়োজনে সুন্দরবন দিবস উপলক্ষে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। শরণখোলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি ইসমাইল হোসেন লিটনের সভাপতিত্বে এবং আলমগীর হোসেন মিরুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তৃতা করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা হেমায়েত উদ্দিন বাদশা, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আলহাজ আজমল হোসেন মুক্তা, সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মিলন, জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক বাবুল তালুকদার, ছাত্রলীগ সভাপতি আসাদুজ্জামান আসাদ, সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সদস্য জিয়াউল হাসান তেনজিন, সাংবাদিক বাবুল দাস, মহিদুল ইসলাম প্রমূখ। বিশাল শোভাযাত্রায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, ২০০১ সালে খুলনায় অনুষ্ঠিত হয় ১ম জাতীয় সুন্দরবন সম্মেলন। নানান প্রতিকূলতা পেরিয়ে সাফল্য পাওয়া সে সম্মেলনটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছিলেন সেই সময়ের রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদ। ২০০১ সালের সেই সুন্দরবন সম্মেলনের পরের বছর থেকেই খুলনাসহ সুন্দরবন সন্নিহিত জেলাগুলোতে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে সুন্দরবন দিবস হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে এই দিবস পালনের কর্মকাণ্ডে সংযুক্ত থাকে সুন্দরবন একাডেমী, বন বিভাগ, বিভিন্ন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংগঠন, ব্যবসায়ী সংগঠন, সুন্দরবন সংলগ্ন সাংবাদিক সমাজ এবং প্রকৃতিপ্রেমী আপামর মানুষ।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৩
এমআরএম/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।