ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘আমাদের বাজার ব্যবস্থাকে সংস্কার করতে হবে’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৩
‘আমাদের বাজার ব্যবস্থাকে সংস্কার করতে হবে’

ঢাকা: পুরো চালের বাজার ব্যবস্থাকে প্রতারণামূলক দাবি করে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বলেন, আমাদের বাজার ব্যবস্থাকে সংস্কার করতে হবে। চালের বাজার পুরো প্রতারণামূলক।

যে নামে চাল তৈরি হয় তা ব্যাগের ভেতরে থাকে না। স্বর্ণা চাল মোটা এটাকে চিকন করে ‘পূষ্মমতি’ নামে বিক্রি করা হয়। মোটা চাল চিকন করে। যে নামে চাল সেই নামে চাল বিক্রি করতে হবে। চালের বাজারে প্রতারণা চলতে দেওয়া যায় না, এটা বন্ধ করা হবে।

মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর শেরে বাংলানগর এনইসি সম্মেলন কক্ষে ডেভলপমেন্ট জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ (ডিজেএফবি) উন্নয়ন সংলাপে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, পলিশ করে চাল ফেলে দেওয়া হয়, পলিশ করে চাল চিকন করা হয়। চালের বাজারে প্রতারণা চলতে পারে না। কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কিনে এনে চিকন চাল তৈরি করা হয়। এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। চালের প্রকৃত পুষ্টি চালের উপরের স্তরে থাকে অথচ এটা ছেটে ফেলে দেওয়া হয়, এটা চলতে পারে না।

আইএমএফ ঋণের সঙ্গে দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ানোর কোনো সম্পর্ক নেই জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী শামসুল বলেন, আইএমএফ ঋণ না দিলেও আমাদের কিছু কিছু জায়গায় দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হতো। আইএমএফ আমাদের মোট জিডিপির তুলনায় যে ঋণ দিয়েছে সেটার পরিমাণ খুবই কম। এজন্য বলি আইএমএফের শর্তে দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়েনি। আইএমএফ ঋণ না দিলেও আমাদের ভর্তুকি কমাতে হতো এবং কিছু দ্রব্যমূল্য বাড়াতে হতো। সুতরাং আইএমএফ এর ঋণের সঙ্গে জিনিসপত্রের দাম বাড়ার কোনো সম্পর্ক নেই। পণ্যের দাম বাড়ানোর শর্ত আইএমএফ-এর ঋণে নেই। যা চেয়েছি তার থেকে বেশি পেয়েছি। আমাদের সার্বিক অর্থনীতির প্রতি আইএমএফ আস্থাশীল বলেই ঋণ দিয়েছে। ঋণ দিতে পেরে আইএমএফ খুব খুশি। পাকিস্তান এখনও আইএমএফ’র ঋণ পায়নি কিন্তু আমরা পেয়েছি মানে বেশিই পেয়েছি। ’

কোথায় আইএমএফ’র ঋণ ব্যবহার হবে এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী শামসুল বলেন, ঋণ বাজেট ব্যবহার করা হবে। তার মানে যেখানে প্রয়োজন সেখানেই ব্যবহার হবে আইএমএফ ঋণ। ’

দেশে বৈষম্য কমছে দাবি করে প্রতিমন্ত্রী শামসুল বলেন, বৈষম্য সব দেশেই বাড়ে। সামাজিক বৈষম্য কমাতে আমরা কাজ করছি। আমরা আড়াই কোটি মানুষকে সাহায্য দিয়েছি। বিনামূল্য বই দিয়েছি বৈষম্য কমিয়ে রাখার জন্য। ২০৪১ সালে কুঁড়েঘর মিউজিয়ামে রাখতে হবে। সবার হাতে মোবাইল ফোন, ঘরে কালার টিভি, কারোর পা খালি আছে? তার মানে বৈষম্য কমছে। বৈষম্য কমাতে গিয়ে আমরা নানা পদক্ষেপ নিচ্ছি। ’

চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে সাধারণ মূল্যস্ফীতির হার ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ, গত বছরের (২০২২) জানুয়ারি মাসে এই হার ছিল ৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ। এক বছরের ব্যবধানে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৪৬ শতাংশ। নানা কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়তেই থাকে। মূল্যস্ফীতি কখনও পূর্বের অবস্থায় ফেরে না বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।

মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী শামসুল বলেন, উৎপাদন উপকরণের দাম বেড়েছে। পাশাপাশি বেড়েছে জ্বালানি তেলের দাম। এর ফলে মূল্যস্ফীতি সাড়ে নয় শতাংশ পর্যন্ত হয়েছিল। গত এক বছরে ৪৬ শতাংশ বেড়েছে। তবে কয়েক মাসে ধীরে ধীরে কমেছে। মূল্যস্ফীতি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মজুরি হারও বাড়ছে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে মজুরির হার বেড়ে ৭ দশমিক ০৬ শতাংশ হয়েছে, গত বছরের জানুয়ারি মাসে ছিল ৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ। মজুরি ভালোই বেড়েছে। তবে মূল্যস্ফীতি পূর্বের অবস্থায় ফিরে যায় না। কারণ উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। গরুর ফিড ও পোল্ট্রি ফিডের দাম অনেক বেড়েছে। পাশাপাশি পরিবহন খরচও বেড়েছে। সোনালি মুরগির দাম বেড়েছে। ডিমের দামও বাড়তি। তবে শাক সবজির দাম কম আছে। ’

দেশের আর্থিক প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, গত এক মাসে রেমিটেন্সের ভালো লক্ষণ দেখতে পারি জুলাই-ডিসেম্বরে। রেমিটেন্স এসেছিল ১০ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন ডলার অথচ জানুয়ারি মাসে যোগ করলে বেড়ে দাঁড়াবে ১২ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার। রিজার্ভ গঠনে প্রবাসী আয় ও এক্সপোর্ট ভূমিকা রাখে। এক মাসে দুই বিলিয়নের বেশি রেমিটেন্স এসেছে। গত এক মাসে রিজার্ভও ইতিবাচক। রিজার্ভের তথ্য এখন অনেক ইতিবাচক। রিজার্ভ ধীরে ধীরে ইতিবাচক দেখা যাচ্ছে। এক্সপোর্ট জুলাই-ডিসেম্বর ছিল ২৭ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার। এক মাস যোগ করলে ৩২ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন। তার মানে এক মাসে রপ্তানি আয়ে বড় ধরনের জাম্প করেছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা ইমপোর্ট নিয়ন্ত্রণ করতে চাচ্ছি, ইমপোর্ট কমে গেলে সমস্যা আছে। গত মাসে ইমপোর্ট বাড়তি এটা খারাপ না। কারণ অনেক পণ্য তৈরির জন্যও ইমপোর্ট জরুরি, যেমন আরএমজি।  

প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমি সব সময় তথ্য দিয়ে কথা বলি সেজন্য কঠিন কথাও বলতে হয়েছে। আমি স্বস্তা জনপ্রিয়তা পেতে কথা বলিনি। কারোর প্রতি কখনও অশ্রদ্ধা প্রকাশ করি না।

ডিজেএফবি’র সাধারণ সম্পাদক সাহানোয়ার সাইদ শাহীনের সঞ্চালনায় উন্নয়ন সংলাপে সভাপতিত্ব করেন ডিজেএফবি সভাপতি হামিদ-উদ-জামান।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৩
এসএমএকে/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।