ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ঝালকাঠিতে অবৈধ ইটভাটায় স'মিল বসিয়ে কাঠ চেরাই

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২৩
ঝালকাঠিতে অবৈধ ইটভাটায় স'মিল বসিয়ে কাঠ চেরাই ঝালকাঠি শহরতলীর আগরবাড়ি এলাকায় মেসার্স আরআরএস ব্রিকসে কাঠের স্তুপ। স্বমিল বসিয়ে চেরাই হচ্ছে কাঠ।

ঝালকাঠি: ঝালকাঠিতে অবৈধ ইটভাটার অধিকাংশ জ্বালানি হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে কাঠ। প্রকাশ্যে কাঠ পোড়ানোর মহড়া চলছে এসব ইটভাটায়।

হাজার হাজার মণ কাঠ এনে পোড়ানো শুরু হয়েছে।  

এমনকি চুল্লিতে পোড়ানোর উপযোগী করতে স'মিল স্থাপন করা হয়েছে কয়েকটি ইটভাটায়। এতে একদিকে সরকার হারাচ্ছে বিপুল রাজস্ব। উজার হচ্ছে সরকারের সবুজ বনায়ন প্রকল্প ও বনাঞ্চল। অন্যদিকে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ।  

কিন্তু বিষয়টি যেন দেখার কেউ নেই। অজ্ঞাত কারণে ব্যবস্থা নিচ্ছে না পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসন।  

পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে  ‘ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা পেলেও লোকবল না থাকায় এসব ভাটায় তাৎক্ষণিক অভিযান চালানো যাচ্ছে না। ’ 

জেলা প্রশাসন বলছে,  ‘ঝালকাঠিতে কোনো অবৈধ ইটভাটা থাকতে দেওয়া হবে না, কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’ 

জানা গেছে, ঝালকাঠি জেলা প্রশাসনের তালিকায় নেই অনেক ইটভাটার নাম। তালিকা হালনাগাদ না করায় সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যাচ্ছে না।  গ্রামাঞ্চল থেকে রেইনট্রি, কড়াই, আম, চাম্বলসহ বিভিন্ন জাতের গাছ কেটে ট্রলার ও নৌকায় ইটভাটা মালিকেরা এনে ইট পোড়ানোর কাজ শুরু করেছেন।  

সবাইকে ম্যানেজ করেই প্রকাশ্যে এ অবৈধ কাজ করে যাচ্ছেন ভাটামালিকেরা অভিযোগ এলাকাবাসীর।  

মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঝালকাঠি শহর ও শহর সংলগ্ন এলাকায় ইটভাটা আছে প্রায় ১৫টি। তবে জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ি জেলায় এ সংখ্যা ৪২ থেকে ৫৫টি।
 
অনুসন্ধানে জানা যায়, ঝালকাঠি জেলায় সরকারিভাবে অনুমোদিত পরিবেশবান্ধব ইটভাটা আছে ১০/১৫টি। বাকি সব অবৈধ। যদিও পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী জেলার ৫৫টি ইটভাটার মধ্যে ২৫টি জিগজাগ (পরিবেশবান্ধব), ২০টি ফিক্সড, বাকিগুলো ড্রাম চিমনির ভাটা। ফিক্সড ড্রাম ও চিকনির ভাটা সবগুলোই অবৈধ।  

কয়লা ছাড়া কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানোর অনুমতি আছে কিনা জানতে চাইলে ঝালকাঠির বাসন্ডা ইউনিয়নের আরআরএস ব্রিকসের মালিকপক্ষের মো. রাকিব বলেন, ‘কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো হয় না। এই কাঠ শ্রমিকদের রান্নার জন্য রাখা হয়েছে। আমরা কয়লা দিয়ে ইট পোড়াই। ’ 

কি পরিমাণ ইট পোড়াতে কত পরিমাণ কয়লা দরকার জানতে চাইলে রাকিব জানান, ‘সেটা আমার জানা নেই। আমার ভাই রাজ্জাক হাওলাদার বলতে পারবেন। ’ রাজ্জাকের মোবাইল ফোন নম্বর চাইলে তা তিনি দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

 এদিকে ঝালকাঠির নেছারাবাদ এলাকায় জিগজাগ ইটভাটা মেরী ব্রিকসের মালিক ইসমাইল হোসেন শহিদ জমাদ্দার বলেন, ‘কয়লার দাম বৃদ্ধি পেলেও কয়লা দিয়েই বৈধভাবে ইট পোড়াচ্ছি প্রতিবছর। এ বছর কয়লার দাম অত্যাধিক বেড়ে যাওয়ায় লাভ কম হবে। কিন্তু যারা অবৈধভাবে কোনো অনুমতি ছাড়াই কাঠ দিয়ে ইট পোড়াচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখছি না। একই জেলায় আমি সরকারকে রাজস্ব দিয়ে ইট পোড়ালেও অনেকেই রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে। এটা দুঃখজনক। ’

এ বিষয়ে বরিশাল বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল হালিম জানান, ‘ঝালকাঠি জেলায় ৫৫টির মধ্যে কিছু সংখ্যক ভাটায় অবৈধভাবে ইট পোড়ানো হচ্ছে। আমি ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা পেয়েছি। তাই পর্যায়ক্রমে এদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করতে পারব। ’ 

কবে নাগাদ অভিযান শুরু হবে জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘১ মাস পরে। ’ 

এ সময়ের মধ্যে ইট পোড়ানো শেষ হবে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমার লোকবল কম। তাই বরিশাল বিভাগ সামলাতে হচ্ছে আমাকেই। জিগজাগ ছাড়া সব ইটভাটাই তো অবৈধ। ’

ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক ফারাহ্ গুল নিঝুম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘জেলার সব অবৈধ বিষয়ের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চলমান আছে। অবৈধ ইটভাটায়ও অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সব ইটভাটায় অভিযান চালানো হবে। অবৈধ ইটভাটা ঝালকাঠিতে থাকতে দেব না। যারা কাঠ দিয়ে ইট পোড়াবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’ 

এ বিষয়ে তথ্য দিয়ে সহযোগিতার আহ্বান জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২৩
এসএএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।