সিলেট: শুরুর দিকেই শনাক্ত করা গেলে ক্যান্সার সারিয়ে তোলা সম্ভব। ‘আসুন ক্যান্সার সেবায় বৈষম্য কমিয়ে আনি’ এ প্রতিপাদ্যে বিষয়ের উপর সিলেট পপুলার মেডিক্যাল সেন্টার ও হাসপাতালের অনকোলজি বিভাগের উদ্বোগে অবহেলিত চা শ্রমিকদের বিনামূল্যে ক্যান্সার স্কিনিং সেবা দেওয়ার মাধ্যমে সিলেটে বিশ্ব ক্যান্সার দিবস-২০২৩ পালিত হয়েছে।
শুক্রবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টায় সিলেটের লাক্কাতুড়া চা বাগানে শ্রমিকদের নিয়ে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি বের করা হয়। র্যালিটি সিলেট এয়ারপোর্ট সড়ক ঘুরে পুনরায় লাক্কাতুরা চা বাগানে এসে শেষ হয়।
এ দিবসটিতে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সচেতন করতে ও অবহেলিত চা শ্রমিকদের ক্যান্সার ও স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতায় করণীয় বিষয়ে আলোচনা করা হয়।
র্যালি পরবর্তী উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন রাগীব-রাবেয়া ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান, বোর্ড অব ট্রাস্টিজ ড. সৈয়দ রাগীব আলী।
মেডিসিন ও বাতরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মো. ইসমাইল পাটোয়ারী সভাপতিত্বে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক, নবজাতক, শিশু ও কিশোররোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মো. জিয়াউর রহমান চৌধুরীর পরিচালনায় আলোচনা সভায় মূল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজের রেডিওথেরাপী বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সরদার বনিউল আহমেদ।
তিনি ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ ও কারণ ব্যাখ্যা করেন এবং জীবনমান উন্নয়ন বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক আলোচনা করেন।
এ সময় স্বাগত বক্তব্য দেন সিলেট ইউমেন্স মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এ্যানেসথেসিয়া ও পেইন মেডিসিন বিভাগের প্রাক্তণ বিভাগীয় প্রধান অধ্যক্ষ ডা. মো. শানেওয়াজ চৌধুরী।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেটের পরিচালক ডা. হিমাংসু লাল রায়, জালালাবাদ রাগিব রাবেয়া মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আবেদন হোসেন, সিলেট প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল সিদ্দিকী, মালনীছড়া চা বাগানের ব্যবস্থাপক মো. আজম আলী।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন, ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রেডিওথেরাপি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল হাফিজ (শাফী), সার্জারি বিভাগের সার্জন মো. আদনান চৌধুরী, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাইনি ও প্রসূতি বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. ফাহমিনা আক্তার ফাহমি।
ড. সৈয়দ রাগীব আলী বৈষম্য দূরীকরণের এ মহতি উদ্বোগ সিলেট পপুলার মেডিক্যাল সেন্টারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, সমাজে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য চিকিৎসক ও চিকিৎসা পেশার সঙ্গে জড়িতদের নিজেদের উদ্যোগী হয়ে অবহেলিত যারা অর্থ ব্যয় করে চিকিৎসা নিতে পারেন না, তাদের সেবায় এগিয়ে আসতে হবে এবং বিভিন্নভাবে সচেতন করতে হবে।
অধ্যাপক ডা. সরদার বনিউল আহমেদ বলেন, ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে সারাবিশ্বে বছরে এক কোটিরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। একেবারে শুরু দিকে শনাক্ত করা গেলে সব ক্যান্সারই সারিয়ে তোলা সম্ভব। যদি অনেক পরে ধরা পড়ে, তখন আর সারানো সম্ভব হয় না।
তিনি আরও বলেন, অনিয়ন্ত্রিত খাদ্য গ্রহণ, মদ, পান-সুপারি, জর্দা, অতিরিক্ত লবণ, চিনি বেশি খাওয়া, তেজস্ক্রিয়তা, কীটনাশক, ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্যের স্পর্শ করা, (হেপাটাইটিস বি ও সি, এইচআইভি, এবস্টেইন বার ভাইরাস, সাইটোমেগালো ভাইরাস), সূর্যকিরণ, বায়ুদূষণ এ সকল কারণে ক্যান্সার হতে পারে। এখন বুঝতে হবে ক্যান্সার হওয়া মানেই নির্ঘাত মৃত্যু নয়।
ডা. সরদার বনিউল আহমেদ বলেন- যদি কারো অনেক দিন ধরে গলাব্যথা হওয়া, শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে ও খাবার গিলতে অসুবিধা হওয়া, স্বর ভেঙে যাওয়া, শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় গলায় ঘড়ঘড় আওয়াজ হয়, এছাড়া কাশি বা বমির সঙ্গে রক্ত ওঠা, গলায় চাকা দেখা যায়, দ্রুত ওজন কমে যাওয়া, এসব উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে গেলে জীবন বাঁচারো সম্ভব। আমাদের হাসপাতালেও ক্যান্সারের ভালো চিকিৎসা হয়। আমাদেওর দেশেও ভালো চিকিৎসক আছে। তাই ক্যান্সার থেকে বাঁচতে হলে জীবনযাত্রার পরিবর্তন করতে হবে। মদ,পান-সুপারি, জর্দা, খাওয়া চলবেনা, বেশি তৈলাক্ত খাবার, চর্বি জাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৩
এনইউ/এসএম