মাদারীপুর: মাসে বেতন পাই ১৯ হাজার টাকা। পাঁচজনের পরিবার নিয়ে একটি সংসার মোটামুটি খেয়ে-পরে জীবন পার করা সহজ হতো, যদি নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কম থাকতো।
জেলার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক এভাবেই দ্রব্যমূল্য নিয়ে তার ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
বাজার করতে আসা একাধিক ব্যক্তি জানান, প্রতি সপ্তাহেই দাম বাড়ে। সবজির দাম শীতের শুরু থেকেই বেশি। কমেনি আর। এছাড়া মাছ-মাংসের দাম বেড়েছে। মাছের দাম বেশি থাকলে ফার্মের মুরগি নিয়ে বাড়ি ফিরতাম। সন্তানাদি নিয়ে অন্তত মুরগির মাংস দিয়ে ভাত খাওয়া যেত। এখন ফার্মের মুরগিও আমাদের মতো স্বল্প আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। আমাদের উপার্জনের সঙ্গে ব্যয়ের পার্থক্য দীর্ঘ হচ্ছে!'
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। বর্তমানে ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০/২৩০ টাকা, সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা। এক মাসের ব্যবধানে ১০০ টাকা বেড়েছে কেজিতে, অন্যদিকে গরুর মাংসের কেজি স্থান ভেদে ৬৮০/৭০০ টাকা, খাসির মাংস ১১৫০ টাকা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে, ডিম প্রতি হালি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা করে। সবজির মধ্যে আলু ২০ টাকা, পেঁয়াজ ২৫ টাকা, ফুলকপি ৩০, বাঁধাকপি ৩০, কাঁচা মরিচ ১০০/১২০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া নানা রকম শাক বিক্রি হচ্ছে ২৫/৩০ টাকা আঁটি। নিত্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য দ্রব্যের মধ্যে বেড়েছে গ্যাসের দাম, চিনি, ডাল, তেল, সাবানের দাম।
ভ্যানচালক আরব আলী বলেন, জিনিসপত্রের দাম বাড়তেই আছে। কোরবানির সময় বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে যে গরুর মাংস পাই। বছরে ওই টুকুই। এছাড়া গরুর মাংস কেনার সামর্থ্য হয় না। বাড়িতে আত্মীয়-স্বজন এলে ব্রয়লার মুরগি দিয়ে সমাদর করতাম। এখন ব্রয়লারের দামও অনেক! ভীষণ কষ্টে আছি। '
আরেক ব্যক্তি মো. রফিক বলেন, ডিমের দাম বেড়েছে। মাছ কিনতে না পারলে ডিম কিনে যে খাবো সেই উপায়ও থাকছে না। বাজারে গেলে অস্বস্তি লাগে! আয়-রোজগার তো বাড়ে না।
জেলার বিভিন্ন স্থানের ব্রয়লার মুরগির দোকানিরা বলেন, পাইকারি বাজারে ব্রয়লারসহ সব মুরগির দাম বেড়েছে অস্বাভাবিকভাবে। দাম বাড়ায় খুচরা বিক্রিও কমে গেছে। ফলে দোকান প্রায় খালি। মুরগি আনা হচ্ছে না। মুরগির খাদ্যের দাম বাড়ায় স্থানীয় অসংখ্য খামার বন্ধ হয়ে গেছে।
নিত্যপণ্যের দাম দিন দিন বাড়তে থাকায় মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে স্বল্প আয়ের মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। প্রতি মাসেই আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্যে বড় ফারাক তৈরি হচ্ছে। কোনো না কোনোভাবে অনেককেই ধার-দেনা করতে হচ্ছে। এতে করে বাড়ছে ঋণের বোঝা। আসন্ন রজমানে দ্রব্যমূল্য কোথায় গিয়ে ঠেকবে, সেই শঙ্কায় আছেন সমাজের এই শ্রেণি। এভাবে চলতে থাকলে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা চরমভাবে ব্যাহত হতে পারে বলেও আশঙ্কা তাদের!
বাংলাদেশ সময়: ১০৫৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৩
আরএ